দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: আমফানের (Amphan) ধ্বংসলীলায় সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত বনানি। ১৩০ কিলোমিটারের দাপটের জেরে শিকড় সমেত উপড়ে গেছে গাছ। প্রকৃতির এই তান্ডবে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। জরুরি পরিস্থিতিতে আমফানের তাণ্ডবের ছবি মুছে দিতে উপড়ে যাওয়া গাছ কেটে সরানোর প্রক্রিয়া চলছে সর্বত্র। তবে ভিন্ন চিত্র ডানকুনি আবাসনে। শিকড় সমেত উপড়ে যাওয়া গাছকে বাঁচাতে অভিনব উদ্যোগ নিলেন আবাসিকরা। ক্রেন দিয়ে টেনে তুলে সেই গাছকে মাটিতে পুঁতে নতুন করে জীবন দিলেন তাঁরা। যা দেখে বিস্মিত এলাকার মানুষেরা।
আমফানের তণ্ডবে উপড়ে পড়া মহীরুহকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টায় মরিয়া ডানকুনি আবাসনের বাসিন্দারা। দুর্গাপুর এক্সপ্রেস ওয়ের কাছে অবস্থিত এই ডানকুনি আবাসন। আবাসনে মোট ১১৬৬ টি পরিবার বাস করেন। গোটা আবাসনকেই ঘিরে রেখেছে প্রায় ৫০০টি মূ্ল্যবান গাছ। ঘূর্ণিঝড়ের দামাল হাওয়ায় সমূলে উপড়ে গিয়েছে আবাসনের ভিতরে থাকা কৃষ্ণচূড়া থেকে শুরু করে মেহগনির মতো বহু বড় গাছ। কিন্তু সেগুলো কেটে সাফ করার পরিবর্তে শিকড় সমেত সেই গাছগুলো প্রতিস্থাপনের চেষ্টা চালাচ্ছেন আবাসনের বাসিন্দারা। নিজেদের হাতে তৈরি গাছগুলো কেটে ফেলতে পারেননি তারা। বেঁচে থাকার ও বাঁচিয়ে রাখার সহজ সত্যটাকে তাঁরা উপলব্ধি করেছেন। আবাসিকদের কথায়, “গাছ থাকলে মানুষ বাঁচবে। কিন্তু এই সহজ সত্যটা অনেকেই বুঝতে পারেন না। এই গাছগুলিকে নিজেদের পরিবারেরই একজন বলে মেনে নিয়েছি। পরিবারের কেউ অসুস্থ হলে তাকে তো আমরা বাঁচানোর চেষ্টা করি। তাহলে গাছগুলোকে বাঁচানোর জন্য কেন শেষ চেষ্টা করব না?”
এরপরই আবাসনের সভাপতি দেবাশীস মুখোপাধ্যায় আবাসিকদের সঙ্গে আলোচনা স্থির করেন যে, ক্রেন দিয়ে যতগুলো গাছকে সম্ভব সোজা করে দাঁড় করিয়ে নতুন করে মাটিতে রোপন করা হবে। যেমন ভাবা তেমন কাজ। এরপরই রীতিমতো মহাযজ্ঞ শুরু হয়ে যায় গোটা আবাসন জুড়ে উপড়ে পড়া গাছকে প্রতিস্থাপনের কাজ। চলে আসে ক্রেন। সেই ক্রেন দিয়ে শুয়ে পড়া গাছগুলো সোজা করে দাঁড় করানো হয়। তারপর মাটিতে বড় করে গর্ত খুঁড়ে সেই গর্তে পুঁতে দেওয়া হয় গাছগুলিকে। এই বিষয়ে আবাসনের সভাপতি তথা ডানকুনি পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান দেবাশীস মুখোপাধ্যায় জানান, “প্রাকৃতিক দুর্যোগে বহু গাছ পড়ে গেছে। কিন্তু যেভাবে একের পর এক গাছ ধ্বংস হয়েছে তাতে আগামী দিনে প্রকৃতিতে ভারসাম্য বিঘ্নিত হতে পারে। তাই চেষ্টা ছিল গাছগুলোকে বাঁচাতে হবে। তার জন্য গাছগুলোকে সোজা করে দাঁড় করিয়ে মাটিতে গর্ত করে পোঁতার পাশাপাশি হরমোন জাতীয় ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছে।” তবে এখনো বেশ কিছু গাছ পড়ে আছে যেগুলোকে বাঁচানোর জন্য বোটানিক্যাল গার্ডেন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে আবাসনের তরফ থেকে। তবে এই কাজে শত অসুবিধা হওয়া স্বত্তেও আবাসনের বাসিন্দারা সর্বোতভাবে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.