সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: রাত বাড়লেই মায়াবি আলোয় ভাসছে ডান্স ফ্লোর। মাদকতাময় শরীরী ছন্দ। একদিকে উড়ছে দেদার টাকা। অন্যদিকে বাড়ছে হুল্লোড়। দুর্গাপুরের যুব সম্প্রদায়ের নয়া ডেস্টিনেশন এখন শহরের কেন্দ্রের ডান্স বারগুলি। হালকা মিউজিক, সুরেলা গানের আড়ালে সেখানেই নানা বিভঙ্গে নৃত্যরত স্বল্পবসনা তরুণীর দল। ওই নাচ যতই উত্তেজনা বাড়াবে, ততই উড়বে মোটা টাকা। বেনাচিতি বাজারে এরকম এক ‘সিঙ্গিং’ বারেই বৃহস্পতিবার রাতে অতর্কিতে হানা দিলেন দুর্গাপুরের এক মেয়র পারিষদ। পরিবেশ দেখে তা দ্রুত বন্ধ করার নির্দেশও দিলেন। এ ব্যাপারে পুলিশকে সতর্ক করা হয়েছে। লাইসেন্সের শর্ত খেলাপ করলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছে দুর্গাপুর কমিশনারেট।
দুর্গাপুর শহর যতই আধুনিক হচ্ছে, ততই বাড়ছে এধরনের বারের সংখ্যা। আর সেই বারের আড়ালেই চলছে এই অশ্লীল নাচের আসর। চটুল হিন্দি গানের সঙ্গে চলছে তরুণীদের উদ্দাম নৃত্য। এতে শহরের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছেন শহরবাসীর একাংশ। পুলিশ সূত্রে খবর, এসব বারে বাংলাদেশি তরুণীদের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। চোরাপথে মধ্যস্থতাকারীরা তাঁদের নিয়ে পৌঁছে বারগুলিতে। স্রেফ গ্রাহকদের মনোরঞ্জনের জন্য নাচাই তাঁদের কাজ। ছোটখাটো পোশাক পরে তৈরিই থাকেন এই তরুণীরা। সন্ধে নামলেই শুরু হয়ে যায় নাচ। রাত যত বাড়ে, ততই বাড়ে ভিড়। রাত ১ টা পর্যন্ত পুরোদমে চলে নাচগান, মদ্যপান। যাঁরা এসব জায়গায় যান, তাঁদের বেশিরভাগই দুর্গাপুর ও তার আশেপাশের সরকারি, বেসরকারি কলেজের পড়ুয়া। যেখানে যে যত টাকা ওড়াবে, ততই তার ঘনিষ্ঠ হবে সুন্দরী র্নতকীরা। টাকার বিনিময়ে মিলছে দামি মদিরা, মৌতাত। শরীরে পোশাক যত কম, টাকার অঙ্ক তত বেশি।
[গর্ত খুঁড়ে মজুত চোলাই তৈরির সামগ্রী, হতবাক পুলিশ]
পুলিশ মহল সূত্রে জানা যাচ্ছে, এভাবে গভীর রাত পর্যন্ত বার এবং ডান্স ফ্লোরের দরজা উন্মুক্ত রেখে যে টাকা রোজগার হয়, তার নব্বই শতাংশই যায় ফ্লোর মালিকদের পকেটে। বাকিটা পান নর্তকীরা। দুর্গাপুরের বেনাচিতি বাজারের একটি শপিং মলে এইরকমই একটি ডান্স বারে রাতে হানা দেন মেয়র পারিষদ প্রভাত চট্টোপাধ্যায়। ১৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার প্রভাতবাবুর এলাকার মধ্যেই পড়ে এই বার। মেয়র পারিষদকে দেখেই বারেরর নর্তকীরা ফ্লোর ছেড়ে পালান। এখানের মোট তিনটি ফ্লোরের একেকটিতে লিজ ভিত্তিক ভাড়া মাসে প্রায় ১ লাখ টাকা। ঝামেলা এড়াতে ৮ জন বাউন্সারকেও রাখা হয়েছে। বিগত পনেরো দিন ধরে এই ডান্স বার চলছিল বলে অভিযোগ। চলছিল হুক্কা বারও। মেয়র পারিষদ প্রভাতবাবুকে দেখে বারের অনান্য কর্মীরা তাঁকে সিঙ্গিং বারের লাইসেন্স আছে বলে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তিনি সবটা বুঝে সঙ্গে সঙ্গে বার বন্ধ করার নির্দেশ দেন। প্রভাত চট্টোপাধ্যায় পরে জানান, “এর আগেও এই বার বন্ধ করা হয়েছিল। কিন্তু দিন পনেরো হলো ফের তা চালু হয়েছে। এলাকার সাংস্কৃতিক পরিবেশ বিপন্ন হচ্ছে। এই বার বন্ধ করতে বলা হয়েছ। পুলিশকেও এই ব্যাপারে নজর দিতে বলা হয়েছে।” আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশের ডিসি–১(পূর্ব)অভিষেক মোদি জানিযেছেন, “ লাইসেন্সের শর্ত খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তা কোনওরকমভাবে অমান্য হচ্ছে, প্রমাণিত হলেই আইনত কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” মেয়র পারিষদের এই পদক্ষেপের পর শহরে এই অপসংস্কৃতি বন্ধ হবে বলে ধারণা বাসিন্দাদের।
ছবি: উদয়ন গুহরায়
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.