সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: সরকারিভাবে বালি উত্তোলন বন্ধ৷ কিন্তু, সরকারি নির্দেশের তোয়াক্কা না করেই দেদার বালি উত্তোলন চলছে দামোদর নদে৷ অবৈজ্ঞনিকভাবে বালি তোলার ফলে নদের গতিপথই শুধু পরিবর্তন হয়নি, ভারী যন্ত্রাংশ ও গাড়ি যাতায়াতের ফলে ভাঙছে পাড়৷ নষ্ট হচ্ছে রাস্তা৷ ভরা বর্ষায় দামোদর তার দুই পাড় ভাসাবে বলে বর্ষার শুরুতেই আতঙ্কিত স্থানীয় বাসিন্দারা৷
অন্ডালের মদনপুর ও কুটিরডাঙায় মোট তিনটি বালি ঘাট৷ মদনপুরের দুটি বালি ঘাট আইনি হলেও এখানেও বিস্তর অভিযোগ আছে বলে স্থানীয়দের দাবি৷ এই দুই বালি ঘাটে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বালি তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ৷ নিয়ম মেনে সঠিক রয়্যালটি কাটা হয় না বলেই অভিযোগ উঠেছে৷ আর কুটিরডাঙার বালি ঘাট তো সম্পূর্ণ বেআইনি বলেই অভিযোগ৷ দীর্ঘদিন ধরেই এই ঘাট থেকে গাড়ি গাড়ি বালি তোলা হচ্ছে৷ জেসিবি মেশিন দিয়ে নদীগর্ভ থেকে বালি তোলা হচ্ছে৷ সেই বালি ভারি ভারি ডাম্পারে করে পেরিয়ে যাচ্ছে গন্তব্যে৷ ভারি ডাম্পার যাতায়াতে যেমন নদীর পার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনই ভাঙছে রাস্তা৷ এই তিন বালি ঘাট দিয়ে দৈনিক প্রায় ৭০০ ডাম্পার চলাচল করে অন্ডালের পলাশবন দিয়ে দুই নম্বর জাতীয় সড়ক পর্যন্ত৷
অন্ডাল পঞ্চায়েত সমিতিমাত্র এক বছর আগেই এই রাস্তাটি ১.১৯ লক্ষ টাকা খরচ করে এই রাস্তাটি সংস্কার করা হয়৷ রাস্তা সংস্কার হওয়ার পরই শুরু হয় বালি মাফিয়াদের দখল৷ জাতীয় সড়কের ধারেই এই বেআইনি বালি রাখা হচ্ছে বলেও জানা গিয়েছে৷ বেআইনি বালি মজুত রাখা আটকাতে ও সরকারি রাজস্ব বৃদ্ধি করতে অন্ডাল পঞ্চায়েত সমিতি গত বছরের ডিসেম্বর মাসে মদনপুরে একটি টোল ট্যাক্স বসানোর পরিকল্পনা করেছিল৷ কিন্তু এই বালি কারবারি ও তাঁদের দোসররা সেই পরিকল্পনায় জল ঢেলে দেয় বলে পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রেই জানা গিয়েছে৷
বালির গাড়ি থেকে টোল আদায় করতে পারলে দৈনিক এক লক্ষ টাকা রোজগার হতো বলে অনুমান অন্ডাল পঞ্চায়েত সমিতির৷ একশো সিএফটিতে পঞ্চাশ টাকা টোল নেওয়ার পরিকল্পনা ছিল সমিতির৷ কিন্তু, তা বাস্তবায়িত হয়নি৷ উলটে ওভারলোডিং ডাম্পার দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রাস্তার উপর৷ তাহলে কিভাবে চলছে দিনের পর দিন এই বেআইনি ব্যবসা? স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্ডাল থানা ও শাসকদলের কিছু নেতাদের ‘ম্যানেজ’ করে এই বেআইনি ব্যবসা চলছে বলে স্থানীয় সূত্রের অভিযোগ৷
লক্ষ লক্ষ টাকায় ‘ম্যানেজ’ করে অবাধে ও সুষ্ঠভাবে এই বালি ব্যবসা চলছে৷ শাসকদল ও পুলিশকে ‘ম্যানেজ’ করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছে বালি মাফিয়ারা৷ আইনি অনুযায়ী ১০০সিএফটি বালির রয়্যালটি একশো টাকা৷ দৈনিক ৫০০ থেকে ৭০০ গাড়ি বের হয় এই দুই বেআইনি বালি ঘাট থেকে৷ গাড়ি পিছু দুইশো টাকা ‘নজরানা’ পুলিশের বলে অভিযোগ৷ যেখানে কাঁকসা পঞ্চায়েত সমিতির বালি থেকে রাজস্ব বছরে প্রায় ৬০ লক্ষ টাকা৷ সেখানে অন্ডালে পুরো টাকাটাই সরকারি কোষাগারে না গিয়ে পরছে কিছু মানুষের পকেটে৷
বর্ষার কারণে পশ্চিম বর্ধমান জেলায় ১৫ জুন থেকে ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বালি উত্তোলন বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে জেলা প্রশাসন৷ কিন্তু, সেই নির্দেশকে অগ্রাহ্য করে অন্ডালে দামোদর নদ থেকে দেদার তোলা হচ্ছে বালি৷ এই বিষয়ে দুর্গাপুরের মহকুমাশাসক শঙ্খ সাঁতরা বলেন, “বিষয়টি মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিককে দেখতে বলছি৷ কোনভাবেই আইনি বা বেআইনি বালি উত্তোলন এখন করা যাবে না৷” দুর্গাপুর মহকুমার ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক অর্ণব বিশ্বাস জানান,‘‘ আইনি বালি ঘাট থেকে রয়্যালটি ফাঁকিদেওয়ার অভিযোগের তদন্ত করা হবে৷ বেআইনি বালি ঘাট বন্দ করে দেওয়া হবে৷ শীঘ্রই অভিযানে নামবে দপ্তর৷” শাসকদলের এই বালি পাচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা প্রসঙ্গে অন্ডাল পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন সভাপতি ও বর্তমানে জেলা পরিষদ সদস্য কালুবরন মণ্ডল জানান,“ কে বা কারা যুক্ত জানি না৷ তবে এই বালি পাচারের ফলে সরকারের রাজস্বের ক্ষতি হচ্ছে৷ এইভাবে ক্রমাগত বালি উত্তোলন চলতে থাকলে অন্ডাল এলাকায় বিরাট ক্ষতি হবে৷” মদনপুরে দামোদর তার গতিপথ পরিবর্তন করেছে বলে আতঙ্কে আছে স্থানীয় মানুষও৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.