সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: ভেঙে যাওয়া দলমা স্কোয়াডকে আবার নতুন করে গোছানোর চেষ্টা করছে মাওবাদীরা। বাংলা ঘেঁষা ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার এই এলাকায় আবার মাওবাদী কার্যকলাপ শুরু হয়েছে৷ স্বাধীনতা দিবসের আগে গোয়েন্দাদের এই সতর্কবার্তার পরই নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন৷ চাপ বাড়ছে পুরুলিয়া জেলা পুলিশের। জঙ্গলমহলের এই জেলা লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূমে মাওবাদী সক্রিয়তা অযোধ্যা পাহাড় এলাকায় ফের অস্থিরতা, আতঙ্কের পরিবেশ তৈরি করবে বলে আশঙ্কা৷
অতীতে পুরুলিয়ায় একাধিকবার মাওবাদীরা স্বাধীনতা দিবসকে ‘কালা দিবস’ হিসেবে পালন করে এসেছে। গত শুক্রবারই পুরুলিয়ার বরাবাজার থানা এলাকার বেড়াদা লাগোয়া ঝাড়খণ্ডের পূর্ব সিংভূম জেলার বড়াম থানার কাটিয়ার জঙ্গলে পাঁচটি কৌটো বোমা উদ্ধার করে যৌথ বাহিনী। ঝাড়খণ্ড পুলিশ ও সিআরপিএফের যৌথ অভিযানে কৌটো বোমাগুলি উদ্ধার হয়। ওই কৌটোগুলিতে ইউরিয়া মজুত ছিল বলে ঝাড়খণ্ড পুলিশ সূত্রে খবর।
বেড়াদা থেকে এই বড়াম মাত্র পাঁচ কিমি। বড়াম থানা এলাকার কাটিয়া জঙ্গল দলমা লাগোয়া। গত লোকসভা ভোটের আগেও বেড়াদা লাগোয়া ঝাড়খণ্ডে পুলিশকে খতম করার হুমকি দিয়ে পোস্টার দিয়েছিল মাওবাদীরা। আর এবার বাংলার সীমান্তে স্বাধীনতা দিবসের আগে মাওবাদীদের কৌটোবোমা মেলায় একেবারেই হালকাভাবে নিচ্ছে না পুলিশ। কারণ, সিপিআই (মাওবাদী) দীর্ঘদিন পর আবার যে নতু্ন করে দলমা স্কোয়াডকে সাজাচ্ছে, এই কৌটোবোমা উদ্ধারই তার ইঙ্গিত বলে ধারণা ঝাড়খণ্ড পুলিশের। অতীতে দেখা গিয়েছে, দলমা স্কোয়াডকে শক্তিশালী করেই তারা পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে ঘাঁটি গাড়ে। প্রায় বছরখানেক পর দলমা স্কোয়াডে আবার তাদের গতিবিধির খবর আসছে পুলিশের কাছে।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৬ সাল নাগাদ পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে যে স্কোয়াড তৈরি মাওবাদীরা, তা মূলত দলমার ওপরে নির্ভর করেই। বর্তমানে আত্মসমর্পন করা মাওবাদী রাজারাম সরেন ওরফে সাগেন দলমা থেকে অযোধ্যা পাহাড়ে গিয়েই সেখানে স্কোয়াড তৈরি করে। পরে সিপিআই (মাওবাদী) অযোধ্যা স্কোয়াডকে শক্তিশালী করতে অর্নব দাম ওরফে বিক্রমকে দায়িত্ব দিয়ে পাঠায়।বর্তমানে আত্মসমর্পণ করা আরেক নেতা রঞ্জিত পালও দলমা থেকে অযোধ্যা স্কোয়াডে যায়। ২০১১সালের নভেম্বরে পুরুলিয়া জেলা পুলিশের মাওবাদী দমন অপারেশনে অযোধ্যা স্কোয়াডের দুই সদস্য খতম হওয়ার পর ২০১২ সালের জানুয়ারিতে এই স্কোয়াড ভেঙে যায়। তখনও অযোধ্যা স্কোয়াডে থাকা একাধিক নেতা দলমায় আশ্রয় নেন। কিন্তু যৌথবাহিনীর ধারাবাহিক অভিযানে দলমায় থাকা নেতারা একের পর এক গ্রেফতার, আত্মসমর্পণ করায় এই স্কোয়াডকে আর বাঁচিয়ে রাখতে পারেনি সিপিআই (মাওবাদী)।
অথচ বাংলা–ঝাড়খণ্ডের মধ্যে সমন্বয় করা এই দলমা স্কোয়াড মাওবাদীদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যৌথবাহিনীর যেমন লাগাতার অভিযান হয় তেমনই ওই এলাকায় গ্রামবাসীদের নিয়ে গঠিত সেন্দ্রা কমিটি মাওবাদীদের সংগঠন বৃদ্ধিতে বাধা হয়ে ওঠে। কিন্তু তারপর আবার এই দলমা এলাকায় ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে তারা। ঝাড়খণ্ড পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৮ সালের আগস্ট–সেপ্টেম্বর নাগাদ এই দলমা এলাকায় শেষবারের মত তাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করা যায়। আবার বছর খানেক পর এই বর্ষায় সবুজ ঘন জঙ্গলকে কাজে লাগিয়ে এই এলাকায় জনভিত্তি মজবুত করতে চাইছেন বলে সতর্কবার্তা গোয়েন্দাদের৷
ছবি: অমিত সিং দেও৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.