ছবি: প্রতীকী
নব্যেন্দু হাজরা: আয়লা, আর আমফানের স্মৃতি এখনও টাটকা। ঝড়ের তাণ্ডবে উড়ে গিয়েছিল ঘরবাড়ি, জলের তলায় চলে গিয়েছিল চাষের জমি। সর্বস্ব খুইয়েছিলেন গোসাবা, ক্যানিং, সুন্দরবন-সহ রাজ্যের একাধিক জায়গার হাজার হাজার মানুষ। রাতারাতি জীবন হয়ে উঠেছিল দুঃস্বপ্নের মতো। তাই যেদিন থেকে ফের ঘূর্ণিঝড়ের আভাস পেয়েছিলেন তাঁরা, শিউরে উঠেছিলেন। আবারও আমফানের মতো হবে না তো! যশের ধ্বংসলীলার গ্রাসে সব চলে যাবে না তো! একই প্রশ্ন ছিল শহর, শহরতলি বা জেলার মানুষজনেরও। যে পরিমাণ গাছ কলকাতায় সেদিন পড়েছিল, যে পরিমাণ বিদ্যুতের খুঁটি উপড়েছিল, তা আজও দুস্বপ্নের মতোই। সোমবার আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস কিছুটা হলেও আশার বাণী শুনিয়েছে তাদের।
হওয়া অফিসের বক্তব্য, আয়লা বা আমফানের সঙ্গে যশের কোনও তুলনাই হয় না। আমফান আঘাত হেনেছিল সাগরদ্বীপে। তার পর কলকাতার বুক চিরে উত্তর ২৪ পরগনা দিয়ে কিছুটা এগিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছিল। আর যশ প্রবেশ করবে ওড়িশা দিয়ে। তার পর তা চলে যাবে ঝাড়খণ্ডে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই যশের ভয়াবহতা এবার পূর্ব মেদিনীপুর বাদ দিয়ে সেই অর্থে অন্য কোনও জেলা দেখবে না। প্রবল ঝড়-বৃষ্টি হবে ঠিকই, কিন্তু তা আমফান বা আয়লার মতো নয়। তবে সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাসের প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। হওয়া অফিস জানিয়েছে, সমুদ্র সৈকতে দুই থেকে চার ফুট পর্যন্ত উঠতে পারে ঢেউ। কারণ আগামী বুধবার পূর্ণিমা। ভরা কোটাল। সেক্ষেত্রে নদীবাঁধে ভালরকম চাপ পড়তে পারে। ভেসে যেতে পারে বহু জমি। হওয়া অফিস সূত্রে খবর, যে অঞ্চলে যশ ল্যান্ডফল করবে তার থেকে কলকাতার দূরত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার। সাগরদ্বীপ থেকে ১২০ কিলোমিটার এবং দিঘা থেকে ১০০ কিলোমিটার। ফলে এই ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে আমফানের মতো কলকাতা তছনছ হওয়ার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে।
আলিপুর আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, শুধু স্পিড দিয়ে এখানে এই ঝড়ের ইমপ্যাক্ট কত তা বিচার করা ঠিক হবে না। আয়লা বা আমফানের মতো এ রাজ্যে সম্ভবত ক্ষয়ক্ষতি করতে পারবে না যশ৷ কারণ আয়লা, আমফান দু’টি ঝড়ই এ রাজ্যেই আছড়ে পড়েছিল৷ অন্য দিকে যশ ওড়িশায় আছড়ে পড়ে চলে যাবে ঝাড়খণ্ডের দিকে৷ ফলে আয়লা, আমফানের তুলনায় এ রাজ্যে তার দাপটও থাকবে অনেকটাই কম৷ কলকাতা-সহ দুই চব্বিশ পরগনাও আমফানের মতো এবার লণ্ডভণ্ড হবে না বলেই আশাবাদী আবহাওয়াবিদরা৷ কলকাতায় বুধবার ৭০-৯০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হওয়া বইবে। দমকা হাওয়ার সময় তা বইতে পারে ১০০ কিলোমিটার প্রতিঘণ্টা। কিন্তু একেবারে যে লণ্ডভণ্ড হবে না, তাও মানছেন না আলিপুরের কর্তারা। একাংশের কথায়, প্রায় আট থেকে দশ ঘন্টা ধরে টানা এই হাওয়া এবং প্রবল বৃষ্টি চলবে। মাঝে মধ্যে দমকা হাওয়া বইবে ১০০ কিলোমিটার বেগে। যা নেহাত কম নয়। তাতেও ক্ষয়ক্ষতির ভালই আশঙ্কা রয়েছে।
দেখুন ভিডিও:
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.