দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: ১৩৫ কিলোমিটার বেগে বিধ্বংসী ঝড়। তাতেই লন্ডভন্ড হয়েছে সুন্দরবনের বিভিন্ন দ্বীপ। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে হেনরিজ আইল্যান্ড। শুধু দ্বীপ নয়, বুলবুলের দাপটে সুন্দরবনের জঙ্গলে থাকা বন দপ্তরের প্রায় সমস্ত ক্যাম্প অফিস এখন মিশে গেছে নোনামাটির সঙ্গে। বনদপ্তর সূত্রে খবর, ২১টি ক্যাম্প ঝড়ের দাপটে মুছে গিয়েছে মানচিত্র থেকে। খড়কুটোর মতো ক্যাম্প অফিসের চাল উড়ে গিয়ে পড়েছে নদীর জলে। খোলা আকাশের নিচে পড়ে রয়েছেন কর্মীরা। বুলবুলের প্রভাবে বন বিভাগের তরফে আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে পর্যটকদের জঙ্গলে যাওয়ার অনুমতি। বোট, লঞ্চ, নৌকা নিয়ে জঙ্গল সাফারি আপাতত বন্ধ রাখা হয়েছে। বুকিং বাতিল করা হচ্ছে হেনরিজ আইল্যান্ডেরও।
ঝড়ের জন্য ৯ নভেম্বর এবং ১০ নভেম্বর বন্ধ রাখা হয়েছিল জঙ্গল সাফারি। বন দপ্তরের আধিকারিক সুধীরচন্দ্র দাস জানিয়েছেন, সোমবার থেকে সেখানে যাওয়ার পারমিশন দেওয়ার কথা থাকলেও নতুন করে ১৭ নভেম্বর তারিখ পর্যন্ত তা বাড়ানো হয়েছে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে সমস্ত ব্যবস্থা ঠিক করা সম্ভব কি না বুঝতে পারছেন না বনদপ্তরের কর্মীরা। সুধীরবাবু আরও বলেন, মূলত কেঁদো দ্বীপের কাছে ‘বুলবুল’ হানা দেয়। ঘূর্ণিঝড় সুন্দরবনের ক্যাম্প অফিসগুলো ছুঁয়ে রায়মঙ্গল হরিণভাঙা নদীর পাশ দিয়ে বুড়িরডাবড়ি হয়ে সোজা চলে যায় বাংলাদেশে। প্রচণ্ড হাওয়ার তোড়ে ক্যাম্প অফিসের ঘরের চাল থেকে শুরু করে জলের ট্যাঙ্ক শোলার টুকরোর মতো উড়ে গিয়েছে। জানা গিয়েছে, ১ কোটি ৯৩ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে বুলবুলের দাপটে। ক্ষতির মুখে পড়েছে ক্যাম্প অফিসের বিভিন্ন প্রকল্পগুলিও। কত দিনের মধ্যে মেরামতি করা সম্ভব হবে এই মুহূর্তে তা বুঝে ওঠা যাচ্ছে না।
শীতের পর্যটন মরশুম শুরু হয়ে গিয়েছে। এই সময়টায় সুন্দরবন ভ্রমণের জন্য মুখিয়ে থাকেন পর্যটকরা। তার মধ্যেই টাইগার প্রজেক্ট এবং সুন্দরবনের ২৪ পরগনা ডিভিশন দুটি বন্ধ রাখা হয়েছে এই ঝড়ের কারণে। সুন্দরবনের পর্যটন ব্যবসায়ী শংকর দাস জানিয়েছেন, ঝড়ের কারণে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে সুন্দরবনের। আর তার জন্যই কিছুদিন জঙ্গল বন্ধ রাখা হয়েছে। বুলবুলের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়েছে হেনরিজ আইল্যান্ড। চারপাশে শুধুই যেন ধ্বংসস্তূপ।নষ্ট হয়েছে প্রচুর চিংড়ি, কাঁকড়া। সেই কারণে আগামী পাঁচ মাসের জন্য সরকারি লজে সমস্ত বুকিং বাতিল করা হয়েছে বাঙালির প্রিয় এবং জনপ্রিয় ট্যুরিস্ট স্পট হেনরিজ আইল্যান্ডে। সুন্দরবনের যে সমস্ত এলাকাতে সৌরশক্তির সাহায্যে আলো প্রদান করা হতো সেই সমস্ত প্রকল্পগুলি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জঙ্গলের লাগোয়া ফেন্সিংও।
এদিকে শনিবারের পর থেকে এখনও পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকায় পৌঁছায়নি বিদ্যুৎ। জেলাতে কয়েক হাজার বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে গিয়েছে। বহু রাস্তাতেই এখনও গাছ পড়ে আছে। জলে ভরে আছে ধানের জমি থেকে শুরু করে শীতকালীন সমস্ত ফসলের মাঠে। আয়লার সময় সুন্দরবনে যে ভাবে আঘাত হেনেছিল ঘূর্ণিঝড়, ঠিক সেরকমই আঘাত বুলবুল হেনেছে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা। রাজ্যের মুখ্য বনপাল রবিকান্ত সিনহা বলেন, ক্যাম্প অফিসগুলি দ্রুত স্বাভাবিক করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে যা ক্ষতি হয়েছে তাতে কত দিনে স্বাভাবিক করা হবে সেটাও দেখা হচ্ছে। ক্যাম্প অফিস এবং পেট্রোলিং বোর্ডগুলি যতক্ষণ না পর্যন্ত স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারছে ততদিন পর্যন্ত বনদপ্তরের পর্যটকদের অনুমতি স্থগিত রাখা হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.