সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: বারাকপুর (Barrackpore) এলাকার বিজেপি নেতা মণীশ শুক্লার (Manish Shukla) হত্যাকাণ্ড রাজ্য রাজনীতির উত্তাপ বাড়িয়েছে নতুন করে। রবিবারের ঘটনার পর একেবারে থমথমে উত্তর ২৪ পরগনার এই জনবহুল এলাকা। কে এই মণীশ শুক্লা, কেনই বা তিনি দুষ্কৃতীদের টার্গেট হয়ে উঠলেন আর কীভাবে এমন হত্যাকাণ্ড – এ সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে তদন্তকারীদের সামনে উঠে এসেছেন বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর তথ্য। যার সূত্র ধরে আততায়ীদের পাকড়াও করার চেষ্টায় নেমেছে বারাকপুর পুলিশ কমিশনারেট।
ছাত্রাবস্থা থেকেই রাজনীতির আঙিনায় পা রেখেছিলেন মণীশ শুক্লা। বারাকপুর রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ কলেজে পড়াকালীন বামপন্থী ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। ছিলেন কলেজের জিএসও। মণীশ শুক্লার জনপ্রিয়তা সেই সময় থেকেই। এরপর ধীরে ধীরে তৎকালীন তৃণমূল নেতা অর্জুন সিংয়ের নজরে পড়েন তিনি, হয়ে ওঠেন তাঁর স্নেহভাজন। যুব তৃণমূল নেতা হিসেবে বারাকপুর এলাকায় নিজের প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন মণীশ। এরপর ধীরে ধীরে বারাকপুরের রাজনৈতিক আবহাওয়া পরিবর্তন হতে থাকে। অর্জুন সিং নিজে দলবদল করে যোগ দেন বিজেপিতে (BJP)। গত লোকসভা নির্বাচনে সেখান থেকে সাংসদও নির্বাচিত হন। ২০১৫এ নির্দল প্রার্থী হিসেবে টিটাগড় পুরসভার ভোটে লড়াই করে কাউন্সিলর হওয়া মণীশ শুক্লাও নাম লেখান গেরুয়া শিবিরে।
জনপ্রিয়তার কারণে নাকি তরুণ নেতা মণীশ শুক্লা অনেকের বিরাগভাজন ছিলেন। অর্জুন সিং-সহ এলাকার বিজেপি নেতাদের অভিযোগ, তাঁর ক্ষতি চাইতেন অনেকেই। টার্গেট ছিলেন মণীশ। অবশেষে শত্রুপক্ষের সেই টার্গেট পূরণ হল। খুন হলেন মণীশ শুক্লা। কিন্তু কীভাবে ভর সন্ধেবেলা টিটাগড়ে বিটি রোডের উপর জমজমাট এলাকায় এভাবে খুন হয়ে গেলেন তিনি? প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, রবিবার সন্ধে সাতটা নাগাদ সবে টিটাগড় থানার উলটোদিকে বিজেপি কার্যালয় এসেছিলেন মণীশ। এমনিতে তাঁর সঙ্গে সর্বদা জনা সাতেক দেহরক্ষী থাকলেও, রবিবার কেউ ছিলেন না। পার্টি অফিসে ঢুকে তিনি চায়ের অর্ডার দেন। সেসময় তাঁকে পার্টি অফিসে বসিয়ে রেখে অন্যান্য কর্মীরা চা আনতে গিয়েছিলেন। এই সুযোগে দুটি বাইকে বারাকপুরের দিক থেকে জনা চারেক দুষ্কৃতী সেখানে ঢোকে। এরপর বন্দুক বের করে এলোপাথাড়ি গুলি চলে মণীশকে লক্ষ্য করে। মাটিতে লুটিয় পড়েন তিনি। দুষ্কৃতীরা ফের বাইক নিয়ে শ্যামবাজারের দিকে চম্পট দেয়।
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পারে যে ওই এলাকায় ভিড়ের মাঝে লুকিয়ে মণীশ শুক্লার গতিবিধির দিকে নজর রাখছিলেন কয়েকজন। মাস্কের আড়ালে মুখ ঢেকে অনবরত মোবাইলে সিগন্যাল পাঠানো হচ্ছিল। কারও কোনও সন্দেহ হয়নি। এরপর মণীশ পার্টি অফিসে একা হতেই চূড়ান্ত সংকেত পৌঁছয়। দুষ্কৃতীরা গিয়ে গুলি করে। তদন্তকারীরা গুলি সংগ্রহ করে মনে করছেন, নাইন এমএম পিস্তল বা কার্বাইন ব্যবহার করা হয়েছে। যা সাধারণত সুপারি কিলাররা ব্যবহার করে থাকে। তবে কে বা কারা এই হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে, তা দুষ্কৃতীদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত নির্দিষ্ট করে জানা যাচ্ছে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.