সুমিত বিশ্বাস: সিআরপিএফ ক্যাম্পের ভিতরেই ঝুলছে সিপিআই (মাওবাদী)-দের লাল ব্যানার। যেখানে লেখা ‘গরিবের জমি কেড়ে নিতে দেব না। কমঃ বিমল দা’। তার পাশ দিয়েই চলে গিয়েছে ল্যান্ড মাইনের তার। কিন্তু, বোঝার উপায় নেই। তারের ওপরেই যে ঝরে পড়া শুকনো পাতা বিছিয়ে রাখা। যেমন ভাবে জঙ্গলে থাকে এই ঝরা পাতার মরশুমে। সেইসঙ্গে ক্যামোফ্লেজ হিসেবে মৃত অবস্থায় পড়ে বন্দুকধারী মাওবাদীদের দেহ। বা গাছের আড়াল থেকে বন্দুক নিয়ে মুখ কাপড়ে ঢাকা মাও স্কোয়াড সদস্য। এছাড়া ছড়িয়ে ছিটিয়ে একাধিক লাল পতাকা।
গতকাল কাশ্মীরের পুলওয়ামার অবন্তীপোরায় সিআরপিএফ-এর কনভয়ে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার পর বেড়েছে তৎপরতা। তাদের শিবিরে মাওবাদী বা কোন জঙ্গি হামলা হলে জওয়ানরা কীভাবে প্রতিরোধ করবেন শুরু হয়েছে তার মহড়া। আজ সকালে পুরুলিয়ার বান্দোয়ান-ঝাড়গ্রামের বেলপাহাড়ি সীমানায় অবস্থিত গুড়পানা পুলিশ ক্যাম্পে গিয়ে চোখে পড়ল মাওবাদী দমনে মোতায়েন কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ানদের সেই মহড়ার ছবি।
রাজ্যের সীমানা হোক বা দেশের সীমান্ত। শত্রুপক্ষের হামলা থেকে বাঁচাতে দিন-রাত পাহারা দিয়ে চলছে সেনাবাহিনী-সহ সিআরপিএফের মত আধা সেনা। কিন্তু, তবু ঘটে যায় অঘটন। যেমনটা গতকাল হল ভূ–স্বর্গে। তবে এই হামলার ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে এরাজ্যের জঙ্গলমহলেও সতর্ক হয়ে গেছেন মাও দমনে মোতায়েন সিআরপিএফ জওয়ানরা। আসলে ২০১০ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তৎকালীন মেদিনীপুর জেলার শিলদায় অবস্থিত ইএফআর ক্যাম্পে মাওবাদী হামলায় ২৪ জন জওয়ান শহিদ হন। ওইদিন যেভাবে মাওবাদীরা ক্যাম্পে ঢুকে হামলা করেছিল তা প্রতিরোধ করার সুযোগ পাননি ওই জওয়ানরা। আজ সেই ঘটনার ন’বছর পরেও জঙ্গলমহলে কর্তব্যরত পুলিশ-জওয়ানদের মধ্যে সেই হাড় হিম করা স্মৃতি চোখের সামনে ভাসে। তারপর সদ্য কাশ্মীরের হামলা। তাই বান্দোয়ানের গুড়পানায় ক্যাম্পের ভিতরেই জনা কুড়ি জওয়ান নিয়ে মহড়া চালাচ্ছে সিআরপিএফ। ক্যাম্পকে সুরক্ষিত রাখতে লোকসভা ভোট পর্যন্ত এই ভাবেই তাদের মহড়া চলবে বলে সিআরপিএফের ১৬৯ নম্বর ব্যাটেলিয়ন জানিয়েছে।
এই ব্যাটেলিয়নের অ্যাসিন্ট্যান্ট কম্যান্ডান্ট মনোজকুমার পান্ডে বলেন, “সাবধানের মার নেই। তাই আমাদের এই মহড়া চলছে।” শত্রুপক্ষ হামলা করলে যে উচিত শিক্ষা দেবেন তা মহড়া থেকে জানিয়ে দিয়েছেন জওয়ানরা। তাঁদের কথায়, মাওবাদীরা ছত্তিশগড়ের কোন ফাঁকা জায়গায় এভাবেই তাদের লাল ব্যানার ঝুলিয়ে রাখে। মাটিতে ফেলে রাখে পতাকা। ক্যামোফ্লেজ করে গাছের আড়াল থেকে সাজানো থাকে বন্দুকধারী মাওবাদীদের মত কোন কাঠামো। বা পড়ে থাকে নিথর দেহর মত কাপড়ে মোড়া কোন কিছু। যাকে দেখতে উৎসুক টহলরত জওয়ানরা সেখানে গেলেই পায়ের চাপে ফাটে ল্যান্ড মাইন। আবার পা ফেলে তা আলগা করলেও ফেটে যায় বোমা। কিংবা জঙ্গলে লুকিয়ে থেকে মাওবাদীদের ছোঁড়া অ্যারো বোমা বা গাছের আড়াল থেকে পরপর গুলিতে টহলরত সিআরপিএফ জওয়ানরা একাধিক বার শহিদ হয়েছেন ছত্তিশগড়ের সুকমায়। সেই অতীতের আর পুনরাবৃত্তি চায় না সিআরপিএফ। ফলে কাশ্মীরের হামলার পর আরও সতর্ক জঙ্গলমহলে মাও দমনে মোতায়েন এই কেন্দ্রীয় বাহিনী।
ছবি : অমিত সিং দেও
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.