সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: দেশজুড়ে দীর্ঘ কয়েক দফা ভোটের কাজ সেরে চুয়ান্ন দিন পর ঘরে ফিরছে জঙ্গলমহলে মাওবাদী দমনে মোতায়েন থাকা কেন্দ্রীয় বাহিনী। আর এই ঘরে ফেরার মুখে একটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে ধাক্কা খেতে হচ্ছে৷ প্রায় দু’মাস কেন্দ্রীয় বাহিনীর অনুপস্থিতিতে থাকা রাজ্যের জঙ্গলমহল কি নিরাপদ? মঙ্গলবার ভোররাতে পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ডের সরাইকেলা-খরসোঁওয়া জেলার কুচাইয়ে বিস্ফোরণের কথা ভাবলেই হাড় হিম হয়ে যাচ্ছে আধা সামরিক বাহিনীর জওয়ানদের৷
মাওবাদী দমনে মোতায়েন থাকা জঙ্গলমহলের চার জেলা-সহ বীরভূম থেকে মোট ২৯ কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনীকে গত ৪ এপ্রিল ভোটের ডিউটি নিয়োগ করে নির্বাচন কমিশন। তারপর থেকে রাজ্যের একের পর এক জেলা ঘুরে ফের নিজেদের কর্মস্থলে ফিরছেন সিআরপিএফ জওয়ানরা৷ এদের অনুপস্থিতিতে এই তাঁদের ক্যাম্পগুলির দায়িত্ব নিয়েছিল রাজ্য পুলিশ-সহ ইন্ডিয়ান রিজার্ভ ব্যাটালিয়নের আওতায় থাকা নাগাল্যান্ড আর্মড ফোর্স।এমনিতে পুরুলিয়ায় নাগা সশস্ত্র বাহিনীর ক্যাম্প আছে৷ সেখানকার জওয়ানরাই সিআরপিএফের ক্যাম্পের সাময়িক দায়িত্বে ছিলেন৷ গত ১ এপ্রিল থেকেই ভোটের কাজে বিভিন্ন জায়গায় যাওয়া শুরু করে এই বাহিনী। ৪ এপ্রিলের মধ্যে জঙ্গলমহলে মোতায়েন থাকা ২৯ কোম্পানিকেই তুলে নেওয়া হয়। এই ২৯ কোম্পানির মধ্যে ঝাড়গ্রামে ১৬, পশ্চিম মেদিনীপুরে ৬, পুরুলিয়ায় ৩, বাঁকুড়া ও বীরভূমে দু’কোম্পানি করে মোট চার কোম্পানি সিআরপিএফ রয়েছে।
আসলে এর আগে কখনওই জঙ্গলমহলে মাও দমনে মোতায়েন থাকা সমস্ত কেন্দ্রীয় বাহিনীকেই ক্যাম্প খালি করে ভোট ডিউটিতে নিয়ে যাওয়ার উদাহরণ ছিল না। এবারই প্রথম নির্বাচনী নিরাপত্তায় জোর দিতে এমন ঘটনা৷ তবে ভোটের কাজ শেষ, বুধবারের মধ্যেই এই বাহিনী চার জেলায় চলে আসবে। মঙ্গলবার দুপুর থেকেই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম এলাকায় বাহিনী আসতে শুরু করেছে। জঙ্গলমহলের কেন্দ্রীয় বাহিনীর ক্যাম্পগুলিতে আবার সিআরপিএফ জওয়ানরা ফিরতে শুরু করায় খানিকটা স্বস্তিতে এলাকার মানুষজন। কিন্তু চাপা আতঙ্ক তাড়া করে বেড়াচ্ছে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা বাহিনীকেই৷ টানা চুয়ান্ন দিনের অনুপস্থিতিতে এখন যেন পায়ে–পায়ে বিপদ বনমহলে৷ ঝাড়খণ্ড লাগোয় এলাকায় মোরাম রাস্তা থেকে জঙ্গলমহলের পথে যে মাইন বিছানো থাকবে না, তার নিশ্চয়তা কে দেবে?
এ রাজ্যে মাওবাদী কার্যকলাপ আপাতত অতীত৷ কিন্তু বাংলা-ঝাড়খণ্ডের একেবারে সীমানা লাগোয়া গ্রামগুলিতে লিংকম্যানদের হাত ধরে তাদের আনাগোনা বাড়ছে৷ এই সতর্কবার্তা দিচ্ছেন গোয়েন্দারাই। মাও উপদ্রুত ছত্তিশগড়ে কেন্দ্রীয় বাহিনীর অভিযানের সময় যেভাবে আইইডি বিস্ফোরণে প্রায়শই জওয়ানদের উপরে মাওবাদীরা হামলা চালিয়েছে, তাতে আগে থেকেই চিন্তার ভাঁজ ছিল বাহিনীর। আর মঙ্গলবার ভোরে রাতে ঝাড়খণ্ডে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের ঘটনায় ১১ জনের আহত হওয়ায় নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বাহিনীর অন্দরে৷ জঙ্গলমহলে মোতায়েন থাকা বাহিনীর অ্যাসিন্ট্যান্ট কম্যান্ডান্টের কথায়, ‘জঙ্গলের পথে মাইন যে পাতা থাকবে না, সে নিশ্চয়তা কে দেবে? তাই অন্তত হোম ওয়ার্ক করে সতর্কভাবে আমাদের পা ফেলতে হবে। এখন আমাদের কাছে এটাই বড় চ্যালেঞ্জ।’
বুধবার থেকেই এলাকায় লং রুটে টহলদারি করে জঙ্গলে যাওয়া শুরু করবে বাহিনী। সঙ্গে থাকবে মেটাল ডিটেক্টর, ডগ স্কোয়াড। ছত্তিশগড়ে ধারাবাহিক বিস্ফোরণের ঘটনায় মাওবাদী দমনে থাকা সিআরপিএফ–এর অধিকাংশ সদস্যকেই এবিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ফলে নিজেদের বিপন্মুক্ত রাখতে তাঁরা সমর্থ হবেন বলেই আশা৷
ছবি: অমিত সিং দেও৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.