সম্যক খান, মেদিনীপুর: শোকজ করা হচ্ছে একসময়কার ডাকাবুকো সিপিএম নেতা সুশান্ত ঘোষকে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কমিটির অনুমোদন ছাড়াই জেলার কয়েকজন নেতাকর্মীকে নিয়ে তিনি পাশের জেলা বাঁকুড়ায় এক বৈঠক করেছেন। এনিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে উপদলীয় কাজকর্মে ইন্ধন দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। রবিবার খোদ দলের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র এবং বর্ষীয়ান নেতা রবীন দেবের উপস্থিতিতে শোকজের প্রস্তাব পাশ করিয়ে নিয়েছেন জেলা সম্পাদক তরুণ রায়। হাত তুলে সেই প্রস্তাবকে সমর্থন জানিয়েছেন জেলার অন্য নেতারাও। যদিও এনিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন তরুণবাবু। তিনি বলেছেন এ বিষয়ে এখনই তিনি কিছু বলবেন না। যখন সময় হবে তখনই সবাইকে জানানো হবে।
বামফ্রন্ট আমলে জেলা তথা রাজ্যের দোর্দণ্ডপ্রতাপ নেতা ছিলেন সুশান্ত ঘোষ। গড়বেতার প্রাক্তন বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী দাপট এতটাই ছিল, যে তিনিই ছিলেন গড়বেতা ও আশেপাশের এলাকায় শেষ কথা। ব্যাপক প্রভাব ছিল জেলা এবং রাজ্য কমিটিতেও। পালাবদলের পর, সেই সুশান্ত ঘোষকেই দীর্ঘদিন কাটাতে হয়েছে জেলে। গড়বেতা দাসেরবাঁধ কঙ্কাল কাণ্ডে নাম জড়িয়ে পড়ায় গ্রেপ্তার হন তিনি। বর্তমানে জামিনে থাকলেও আদালতের নির্দেশে তার জেলায় ঢোকার ক্ষেত্রেও নিষেধাজ্ঞা আছে। তিনি এখন কলকাতাতেই থাকেন। মাঝে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর বিরোধও বাঁধে। প্রায় তিন বছর আগে দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের এতটাই অবনতি হয়, যে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মনে হয়েছিল তিনি পূর্ব মেদিনীপুরের লক্ষ্মণ শেঠের মতো নতুন কিছু ভাবতে চলেছেন। প্রকাশ্যে দলীয় নেতৃত্বের সমালোচনাও করতে শুরু করেছিলেন সুশান্ত ঘোষ। তখনকারমতো তাঁকে কোনওক্রমে শান্ত করা গেলেও ক্রমাগত তাঁকে কোণঠাসা করার অভিযোগ উঠেছে দলের মধ্যেই। গড়বেতার জয়ী বিধায়ক হওয়া সত্বেও দল তাঁকে গত বিধানসভায় টিকিট দেয়নি। যদিও তিনি নিজে প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। এরপর গত বছর জেলা সম্মেলনে তাঁকে জেলা সম্পাদকমণ্ডলী থেকেও ছেঁটে ফেলা হয়। এখন তিনি জেলা কমিটির সামান্য সদস্য মাত্র।
বিদ্রোহী সুশান্ত ঘোষ সম্প্রতি পাশের জেলা বাঁকুড়া বিষ্ণুপুরে যদুভট্ট হলে পশ্চিম মেদিনীপুরের বেশ কিছু নেতাকর্মীকে নিয়ে গোপনে বৈঠক করেছেন বলে অভিযোগ পেয়েছে জেলা কমিটি। জানা গিয়েছে, ওই বৈঠকে গড়বেতা, চন্দ্রকোণা রোড, চন্দ্রকোণা টাউন, গোয়ালতোড়, শালবনী প্রভৃতি এলাকা থেকে তাঁর ঘনিষ্ঠ অনুগামীরা হাজির হয়েছিলেন। দলের অনুমোদন ছাড়া ঠিক কী কারণে এ ধরনের মিটিং করার প্রয়োজন পড়ল? সেটাই জানতে চাওয়া হবে সুশান্তবাবুর কাছে। জেলা কমিটির এক সদস্য বলেছেন, গড়বেতা বা পার্শ্ববর্তী এলাকায় দলের হাল ফেরাতে যদি এ ধরনের কোনও বৈঠক করার প্রয়োজনও পড়ে তাহলে তা তিনি জেলা সম্পাদককে জানাতে পারতেন। গুরুত্ব বুঝে তখন জেলা থেকেই এই বৈঠকের ব্যবস্থা করে দেওয়া যেত। জেলা নেতৃত্বের অনুমোদন ছাড়া কেউ ব্যক্তিগতভাবে এধরনের বৈঠক করতে পারেন না। এটা উপদলীয় কার্যকলাপের মধ্যে পড়ে। জেলা কমিটির কাছে সেই অভিযোগ জমা পড়ার পরই তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি চুড়ান্ত হয়। জেলা কমিটির বৈঠকে সূর্যবাবুদের উপস্থিতিতেই জেলা সম্পাদকের উত্থাপন করা শোকজের বিষয়টি সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হয়। খুব শীঘ্রই সুশান্তবাবুকে শোকজের চিঠি পাঠিয়ে দেওয়া হবে বলে দলীয় সূত্রের খবর।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.