জ্যোতির্ময় কর্মকার: কারাতের ইন্ধনে কেরল লবির আক্রমণ তো ছিলই, এবার ঘরোয়া অনৈক্যেই বিপর্যস্ত হয়ে পড়ল বঙ্গ ব্রিগেড৷ জোটের প্রশ্নে রাজ্য নেতৃত্বের সমালোচনা করে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে বিরুদ্ধ অবস্থান নিলেন মদন ঘোষ, দীপক দাশগুপ্তর মতো ‘সিনিয়র’ নেতারা৷ পরিস্থিতি এতটাই ঘোরালো যে, জোট থাকবে কি না তা নিয়ে ভোটাভুটির সম্ভাবনাও তৈরি হয়ে গিয়েছে৷ শনিবার আগ বাড়িয়ে আগুন উসকে দিয়েছিলেন গৌতম দেব৷ পার্টি কংগ্রেসের গৃহীত লাইনের বিরুদ্ধে গিয়ে জোটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে যখন কেরলের কমরেডরা রে রে করছেন, সেই সময়ই পরিস্থিতির মোকাবিলায় প্রাক্তন সাধারাণ সম্পাদক প্রকাশ কারাতের বিরুদ্ধে একটি সিডি কেন্দ্রীয় কমিটিতে পেশ করেন তিনি৷ অভিযোগ করেন, কলকাতায় পার্টির প্লেনামে কংগ্রেসের সঙ্গে বোঝাপড়ার প্রশ্নে একসময় কারাতই সাংবাদিক বৈঠকে বলেছিলেন, রাজনীতিতে পরিস্থিতি অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতে হয়৷ রবিবার কার্যত এই আক্রমণই বুমেরাং হয়ে ফিরে এসেছে সূর্যকান্ত মিশ্রদের দিকে৷ কেরল, ত্রিপুরার পাশাপাশি জোট নিয়ে সমালোচনায় সরব হয়েছে বঙ্গ ব্রিগেডের একাংশই৷ এই টানাপোড়েনে জল কোন দিকে গড়াবে তা নিয়ে রীতিমতো সংশয়ে রাজনৈতিক মহল৷
রবিবার বৈঠকের দ্বিতীয় দিনেও কেন্দ্রীয় কমিটিতে জোট নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত হল না৷ তবে ভোটভুটির সম্ভাবনা রয়েই গেল৷ ৯১ জনের কেন্দ্রীয় কমিটিতে এখনও পর্যন্ত ৭৩ জন বলেছেন৷ সোমবার বৈঠকের শেষদিনে প্রথমে সকালে পলিটব্যুরোর বৈঠক বসেছে৷ এরপর শুরু হবে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক৷ জোট পর্বে আলোচনা শেষ হলেও এই নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে আজই৷ অবশ্য ভোটাভুটি হলে জোট বিরোধী হাওয়াই শক্তিশালী৷
ভোটে ভরাডুবির পর থেকেই বামফ্রণ্টের অন্দরে শরিকদের প্রশ্নের মুখে পড়ে গিয়েছে সিপিএম৷ শরিকি ঐক্য অটুট রাখাই এখন বড় দায়৷ এই পরিস্থিতিতে আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে বসে সূর্যকান্ত মিশ্ররা যতই জোট চালিয়ে যাওয়ার কথা বলুন, নয়াদিল্লির এ কে গোপালন ভবনে রীতমতো ঝড়ের মুখে বঙ্গ ব্রিগেড৷ কেরল, ত্রিপুরার চাপের মুখে পড়ে কিছুটা কৌশলী অবস্থান নিয়ে আপাতত কংগ্রেসের সঙ্গে জোটের থেকেও বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে ফ্রণ্টের ঐক্যের উপরই৷ অর্থাত্ কংগ্রেসকে নিয়ে অকারণ বেশি আলোচনা করতে নারাজ আলিমুদ্দিনের কর্তারা৷ ভোট পরবর্তী রাজ্য কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত পেশ করে জানানো হয়েছে, একক ক্ষমতায় লড়াই-আন্দোলনের কর্মসূচি নেওয়াই এখন বাংলার পার্টির লক্ষ্য৷ ফ্রণ্টের মধ্যে আলোচনা করেই কর্মসূচি ঠিক করা হবে৷ বৃহত্তর বাম ঐক্যের পাশাপাশি আরজেডি, জেডিইউ, এনসিপি-র মতো বন্ধু দলের সঙ্গেও যোগাযোগ রাখা হবে৷ সব শেষে কংগ্রেসের কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, কয়েকটি এলাকায় পরিস্থিতি অনুযায়ী কংগ্রেসের সঙ্গেও বোঝাপড়া করা যেতে পারে৷
এদিন পশ্চিমবঙ্গের খারাপ ফলের জন্য শাসকদল তৃণমূলের সন্ত্রাসের সাফাইকেই সামনে আনা হয়েছে৷ এড়ানো যায়নি সংগঠন নিয়ে দুর্বলতার প্রসঙ্গও৷ বলা হয়েছে, ভোটের প্রচারে বড় সভা ডাকলে মাঠ ভরে লোক হয়েছে৷ কিন্তু বাড়ি বাড়ি ঘুরে জনসংযোগ করার ক্ষেত্রে খামতি ছিল৷ অনেক জায়গাতেই বুথস্তরে ন্যূনতম সাংগঠনিক কাজটাও করা যায়নি৷ যেখানে পার্টি মাঠে নেমে প্রতিকূলতার মোকাবিলা করে কাজ করতে পেরেছে, সেখানে জয় না এলেও ভোটের হার মন্দ নয়৷ আর এই যুক্তি খাড়া করে জোটের পক্ষে মরিয়া লড়াই চালিয়ে যান গৌতম দেব, হান্নান মোল্লা-সহ এক ঝাঁক নেতা৷ জানানো হয়, বাম গণতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ প্রার্থীদের ভোটের হার বেড়েছে প্রায় ১৬৯টি বিধানসভা এলাকায়৷ অনেক জায়গায় ভোট বেড়েছে বাম প্রার্থীদেরও৷ সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় কমিটিতে পলিটব্যুরোর রিপোর্ট পেশ করে কোন জরুরি পরিস্থিতিতে জোটের সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে তা বোঝানোর মরিয়া চেষ্টা চালান স্বয়ং সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরিও৷ কিন্তু মানুষের এত উৎসাহ-উদ্দীপনার প্রতিফলন কেন ব্যালটে হল না, তা নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন তুলেছেন এস আর পিল্লাই, প্রকাশ কারাত গোষ্ঠীর কমরেডরাও৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.