সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: পঞ্চায়েত ভোটের আগে সিঙ্গুর ইস্যু ঘিরে ফের সরগরম বাংলার রাজনীতি। শিলিগুড়ির বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চ থেকে বিস্ফোরক দাবি করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তাঁর সাফ কথা, “আমি টাটাকে (TATA) তাড়াইনি। সিপিএম তাড়িয়েছে। আমি চাই রাজ্যে বিনিয়োগ হোক।” রাজ্যে শিল্পের পরিবেশ, নিয়োগ নিয়ে বিরোধীরা শাসক দলকে নিশানা করছে, ঠিক সেই সময় তাৎপর্যপূর্ণ দাবি করলেন মুখ্যমন্ত্রী। স্বাভাবিকভাবেই তাঁর এই মন্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হয়েছে। বাম-কংগ্রেস-বিজেপি একযোগে তৃণমূল নেত্রীকে ‘মিথ্যেবাদী’ বলে কটাক্ষ করেছেন। তাঁদের দাবি, “মুখ্যমন্ত্রী মিথ্যে বলছেন।”
এদিনের বিজয়া সম্মিলনীর মঞ্চ থেকে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “কেউ কেউ মিথ্যে কথা বলে বেড়াচ্ছে। বলছে, আমি টাটাকে তাড়িয়েছি। টাটাকে আমি তাড়াইনি, সিপিএম (CPIM) তাড়িয়েছে।” তাঁর আরও অভিযোগ, “জোর করে জমি নেওয়া হয়েছিল। সবার থেকে জোর করে জমি নিয়েছিল। আমি জমি ফিরিয়ে দিয়েছি।” রাজ্যে শিল্প বিনিয়োগ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “আমি চাই রাজ্যে শিল্প বিনিয়োগ হোক। এখানে শিল্পপতিদের মধ্যে কোনও বৈষম্য করতে চাই না। সবাই সমান সুযোগ পায়।”
বছর ঘুরলেই রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোট। ঠিক তার আগে তৃণমূল সুপ্রিমোর মুখে ফের সিঙ্গুর-টাটা ইস্যু। এগারোয় রাজ্যের পালাবদলের ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা নিয়েছিল সিঙ্গুরের জমি আন্দোলন। অভিযোগ, তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য ও রাজ্য়ের শাসকদল বামফ্রন্ট সিঙ্গুরের গ্রামবাসীদের কাছ থেকে জোর করে জমি নিয়েছিল। সেখানেই তৈরি হচ্ছিল টাটার ন্যানো গাড়ির কারখানা। কিন্তু তৎকালীন বিরোধী নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আন্দোলেনের জেরে জমি ফেরত দিতে বাধ্য হয় টাটা। বাংলা ছেড়ে গুজরাটের সানন্দে তৈরি হয়েছিল ন্যানোর কারখানা। এরপর থেকেই বাম-কংগ্রেস-বিজেপির অভিযোগ, তৎকালীন বিরোধী নেত্রী তথা বর্তমান মুখ্যমন্ত্রীর জন্য টাটা রাজ্য ছেড়েছে। শিল্পের পরিবেশ নষ্ট হয়েছে। এদিন মুখ্যমন্ত্রী সেই অভিযোগের পালটা জবাব দিলেন বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবির পালটা দিয়েছেন সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, “এবার তো উনি বলবেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য রাস্তায় নেমে আন্দোলন করে টাটাকে তাড়িয়েছিলেন। রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন করেছিল সিপিএম। উনি বোধহয় রতন টাটার বলা কথাটা ভুলে গিয়েছেন। রতন টাটা বলেছিলেন, মাথায় বন্দুক ঠেকালে তো আর কিছু করার থাকে না।” একই সুর শোনা গিয়েছে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরীর গলাতেও। তাঁর কথায়, “ইউনেস্কো যদি মিথ্যেবাদীদের তালিকা তৈরি করে তাহলে একনম্বরে থাকবে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর নাম।” হুগলির বিজেপির সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় বলেন, “মিথ্যে কথা বলছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়।” এদিকে বিরোধীদের অভিযোগ নস্য়াৎ করে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “আমাদের আন্দোলন ছিল জমি বাঁচানোর। শিল্প তাড়ানোর নয়। জোর করে জমি নিয়েছিল তৎকালীন সরকার। আমরা তার বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলাম।” সবমিলিয়ে ফের একবার বাংলার রাজনীতিতে চর্চায় সিঙ্গুরের টাটাদের কারখানা।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.