রঞ্জন মহাপাত্র, কাঁথি: একুশের বিধানসভা নির্বাচনে (Assembly Election 2021) তলে তলে সিপিএম-বিজেপি জোট হয়েছে, এমন গুঞ্জন শোনা যাচ্ছিল। বাম সমর্থকরা তৃণমূলের বিরোধিতা করতে গিয়ে নাকি কেন্দ্রবিশেষে বিজেপিতে ভোট দিয়েছেন। দু, একবার দেখা গিয়েছে, বিজেপির মিছিলে লাল কাস্তে-হাতুড়ি-তারা পতাকা। বামেদের ভোটে রামের দলে গিয়েছে, সেকথা সম্প্রতি প্রকাশ্যে আনেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। তাঁর কথায়, নন্দীগ্রামে বামপন্থীদের ভোটেই তিনি জিতেছিলেন। কিন্তু তাঁর পালটা অবস্থান গ্রহণ করলেন সিপিএমের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র (Suryakanta Mishra)। দিঘার সম্মেলন দলীয় কর্মীদের তাঁর কড়া বার্তা, ”কেউ যদি মনে করেন, বিজেপিতে গিয়ে তৃণমূলকে ঠেকানো যাবে। আবার উলটোদিক থেকেও কেউ যদি মনে করেন, তৃণমূলে গিয়ে বিজেপিকে হঠানো যাবে, এরকম কেউ থাকলে লাল ঝান্ডার পার্টিতে তাঁর জায়গা নেই।”
গত বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল বলছে, নন্দীগ্রামে শুভেন্দু অধিকারীর কাছে সামান্য কিছু ভোটে পরাজিত হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Banerjee)। যদিও সেই ফলাফল নিয়ে বিতর্ক আছে। শুভেন্দুর বিরুদ্ধে গণনায় বেনিয়মের অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছে তৃণমূল। সেই মামলা এখনও বিচারাধীন। দিন দুই আগে বাম-রামের এই ‘অশুভ আঁতাঁত’ নিয়ে কার্যত বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি করেন বিরোধী দলনেতা। তাঁর মুখে বামেদের ভূয়সী প্রশংসাও শোনা গেল। নন্দীগ্রামে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘‘এদের (তৃণমূলের) থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী ছিল বামফ্রন্ট। এদের থেকে অনেক বড় সংগঠন ছিল সিপিএমের। ৩৪ বছর ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু সব বামপন্থী খারাপ নন। অনেক বামপন্থীই আমাদের সঙ্গে এসেছেন। নন্দীগ্রামে একটা বড় অংশ যাঁরা হিন্দু, তাঁরা ভোট দিয়েছেন বলে আমি জিতেছি। আমি তা অকপটে স্বীকার করি।’’
শুভেন্দুর এহেন ‘স্বীকারোক্তি’র পালটা বাম শিবিরের প্রতিক্রিয়া জানতে আগ্রহী ছিলেন রাজনৈতিক সচেতন মানুষজন। রবিবার দিঘায় সেই জবাবটাই যেন দিলেন সিপিএম নেতা সূর্যকান্ত মিশ্র। দলের নীতিগত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, বিজেপি-তৃণমূলের থেকে সমদূরত্ব বজায় রেখে তিনি বলেন, ”তৃণমূল দলে সবাই চোর নয়, সবাই খারাপ নয়, ভাল মানুষ আছেন। আবার একইভাবে সব বিজেপি দাঙ্গাবাজ নয়, বিজেপি করেন এমন ভাল লোকজনও আছেন। কেউ বিজেপিকে হারাবার জন্য তৃণমূলে গিয়েছেন, কেউ তৃণমূলকে হারানোর জন্য বিজেপিতে গিয়েছেন। কিছু লোকজন আছেন সরকারের থেকে কিছু সুযোগসুবিধা নেবেন, তাই দলবদল করেছেন।”
এরপরই তাঁর হুঁশিয়ারি, ”কেউ যদি মনে করেন, বিজেপিতে গিয়ে তৃণমূলকে ঠেকানো যাবে। আবার উলটোদিক থেকেও কেউ যদি মনে করেন, তৃণমূলে গিয়ে বিজেপিকে হঠানো যাবে, এরকম কেউ থাকলে লাল ঝান্ডার পার্টিতে তাঁর জায়গা নেই। জায়গা থাকবে না। এই বার্তা ছড়িয়ে দিতে হবে সব জায়গায়।”
এনিয়ে তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষের (Kunal Ghosh) প্রতিক্রিয়া, ”সূর্যবাবু সিনিয়র নেতা। কিন্তু তাঁদের দলের ওপর কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। দলের নীতি কিন্তু দু’মুখো। মুখে বলছেন, করা যাবে না। কিন্তু কাজে করছেন। রাজীব গান্ধীর ক্ষতি করতে গিয়ে অটল বিহারীর সঙ্গে মিটিং করেছেন। বামেদের ভোট কমেছে বলেই বিজেপির ভোট বেড়েছে। কাজের সঙ্গে মুখের মিল নেই। কোথাও আবার বিজেপিকে ভোট দিয়ে দিচ্ছেন বামেরা। সিপিএম দু’মুখো নীতিতে চলছে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.