সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়,দুর্গাপুর: রক্তক্ষরণ বাড়ছে। সংগঠনের জোর ক্রমশই কমছে। তবু হুঁশ নেই সিপিএমের।দলেরই একসময়ের দাপুটে নেতাকে মারধরের অভিযোগ, তাও আবার দলের এরিয়া কমিটির কার্যালয়েই। তখন সেখানে উপস্থিত দলের তাবড় তাবড় নেতা, চোখের সামনে এই ঘটনা দেখে স্তম্ভিত কর্মীরা। ‘বহিরাগত’র হাতে মার খেয়ে একসময় দলের দু’বারের কাউন্সিলর, ডিওয়াইএফআইয়ের জোনাল সম্পাদক ও প্রাক্তন জোনাল কমিটির সদস্য ভরতি হাসপাতালে। তুমুল ক্ষোভ দলের অন্দরে। ঘটনা স্বীকার করে অনুতাপ প্রকাশ করেছে নেতৃত্ব।
অনুপ দাস। দুর্গাপুরের বেনাচিতির একসময়ের দাপুটে নেতা। বছর চল্লিশ ধরে সিপিএমের সক্রিয় কর্মী। বরাবরই স্থানীয় নেতৃত্বের সামান্য বেচাল দেখলেই সরব হয়েছেন। ২০১৭ সালে তিনি আর দলের সদস্যপদ পুনর্নবীকরণ করাননি। জেলা সম্পাদকের অনুরোধে ২০১৮ সালের ১২ সেপ্টেম্বর চিঠি দিয়ে ফের সদস্যপদ রিনিউয়ের আবেদন করেন দুর্গাপুর পশ্চিম–১ নম্বর এরিয়া সম্পাদক। বৃহস্পতিবার সন্ধেবেলা বেনাচিতির জলখাবার গলিতে সিপিএমের এরিয়া অফিসের দলীয় সভায় অনুপবাবু সদস্যপদের কী হল, তা জানতে চান এরিয়া সম্পাদক মহাব্রত কুণ্ডুর কাছে। আর তাতেই ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন অনান্যরা। শুরু হয় বচসা।
এরপর পার্টি অফিসেই আশ্রয় নেওয়া ‘বহিরাগত’ নন্দ পাল তাঁকে ব্যাপক মারধর করে বলে অভিযোগ করেন অনুপবাবু। সিপিএমের এরিয়া অফিসে চিৎকার চেঁচামেচি শুনে স্থানীয়রা ছুটে যান। দেখেন, নিজেদের মধ্যেই বচসা ও মারপিটে জড়িয়ে পড়েছেন দলের নেতা-কর্মীরা। প্রায় আধঘন্টা ধরে বছর চৌষট্টির অনুপ দাসকে মার খেতে দেখে স্থানীয়রাই উদ্ধার করে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা মেন হাসপাতালে ভরতি করেন।
কিন্তু নিজের সদস্যপদ নিয়ে জানতে চাওয়ার জন্যে কেন এভাবে মার খেলেন অনুপবাবু? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের এক সক্রিয় কর্মী জানিয়েছেন, “অনুপবাবু বরাবরই স্পষ্টবাদী। দলের নেতাদের ‘কীর্তি’ নিয়ে তিনি দলের অন্দরে সবসময়ই সরব থাকতেন। ফলে দলের মধ্যে
প্রমোটার ঘনিষ্ঠ, মহিলা সংক্রান্ত অভিযোগে দুষ্ট কিংবা গোপনে শাসকদল ও বিজেপি ঘনিষ্ঠদের চক্ষুশূল ছিলেন তিনি। তার জন্যেই তাঁর সদস্যপদ রিনিউ করতে গড়িমসি করছে স্থানীয় নেতৃত্ব।” এই ঘটনা নিয়ে শুক্রবার শোরগোল পড়ে যায় দলের বিভিন্ন স্তরে। হাসপাতালে শুয়ে অনুপবাবু বলেন, “আবেদনের চোদ্দ মাস পেরিয়ে গেলেও কেন সদস্যপদ পাচ্ছি না, জানতে চাইতেই বহিরাগত দুষ্কৃতী নন্দ পাল আক্রমণ করে। দলের অফিসেই এভাবে আক্রান্ত হওয়াতে প্রথমে হতবাক হয়ে যাই। ওই দুষ্কৃতীর শাস্তি দাবি করছি। পার্টি অফিসে অসামাজিক মানুষ কীভাবে আশ্রয় পায়? স্থানীয় নেতাদের ছত্রছায়া ও মদত রয়েছে বলেই মনে হয়। এটা পার্টির অবক্ষয় ছাড়া আর কিছুই নয়।”
তিনি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেই দলের জেলা সম্পাদককে সমস্ত ঘটনা জানাবেন বলেও জানিয়েছেন।
ঘটনা সম্পর্কে দুর্গাপুর পশ্চিম–১ নম্বর এরিয়া কমিটির সম্পাদক মহাব্রত কুণ্ডু জানান, “অনুপ দাস আমাদের দলের সম্পদ। তাঁকে মারধোর করাটা অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা। অভিযুক্ত নন্দ পালকে চরম ভৎর্সনা করেছি। আমরা অনুতপ্ত। এই ঘটনা কাম্য নয়।” তবে অনুপবাবুর সদস্যপদ রিনিউ নিয়ে বচসার কথা তিনি মানতে অস্বীকার করেছেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.