দিব্যেন্দু মজুমদার, হুগলি: করোনা আবহে সকলেই যেন নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। অন্যের বিষয়ে ভাবার সময়ই যেন নেই। তবে এসবের মধ্যেই ব্যতিক্রমও রয়েছে। ঠিক যেমন চুঁচুড়ায় (Chinsurah) এক বিদায়ী সিপিএম কাউন্সিলরের মানবিকতায় প্রাণে রক্ষা পেলেন রামচন্দ্র রজক নামে এক মানসিক ভারসাম্যহীন বৃদ্ধ। জানা গিয়েছে, সারারাত ধরে নালার মধ্যে পড়েছিলেন মানসিক ভারসাম্যহীন ওই বৃদ্ধ। কার্যত মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। তখনই দেবদূতের মতো এসে হাজির হন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি তথা হুগলি-চুঁচুড়া পুরসভার বিদায়ী সিপিএম কাউন্সিলর সমীর মজুমদার। নিজে হাই ড্রেনের মধ্যে নেমে ওই বৃদ্ধকে উদ্ধার করে তাঁকে বাড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দেন সমীরবাবু। আর এই ঘটনাই ফের প্রমাণ করল করোনা সম্পর্কে যতই সচেতনতার প্রচার চালানো হোক না কেন, সাধারণ মানুষের মধ্যে তা এখনও আসেনি।
জানা গিয়েছে, মানসিক ভারসাম্যহীন ওই সত্তরোর্ধ্ব বৃদ্ধ চুঁচুড়া পুরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের চকবাজার নিত্যমঠ মোগলপুরা লেনের বাসিন্দা। বুধবার গভীর রাতে পরিবারের অজান্তেই রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন তিনি। কিন্তু অসতর্ক থাকায় কাপাসডাঙা পালপাড়া এলাকার একটি নিকাশি নালার মধ্যে পড়ে যান। সারারাত ওই নালার নোংরা জলের মধ্যে পড়েই গোঙাতে থাকেন বৃদ্ধ। তার উপর বৃষ্টিতে ঠান্ডায় আরও কুঁকড়ে যান।
বৃহস্পতিবার ভোর পাঁচটায় এলাকার মানুষ গোঙানির আওয়াজ শুনে কাছে গিয়ে দেখেন, ওই বৃদ্ধ হাই ড্রেনে পড়ে কাতরাচ্ছেন। কিন্তু করোনা আতঙ্কে সকলেই দূর থেকে উঁকি মেরে চলে যান। ভোর হওয়ার পরও ঘন্টা তিনেক ওই ভাবেই পড়ে থাকেন বৃদ্ধ। এরপরই কোনওভাবে সিপিএমের বিদায়ী কাউন্সিলর সমীর মজুমদারের কানে খবরটি পৌঁছায়। শোনার পরই তিনি ঘটনাস্থলে ছুটে যান। তখনও ওই বৃদ্ধ বেঁচে আছে দেখে কোনও চিন্তা ভাবনা না করেই তাঁকে বাঁচাতে নিকাশি নালায় নেমে পড়েন সমীরবাবু। কিন্তু করোনার ভয়ে বৃদ্ধকে তুলতে সাহায্য চাইলেও কাউকে এগোতে দেখা যায় না। সকলেই করোনার সংক্রমণের কারণ দেখিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে যান। কেউ কেউ আবার দমকলকে ডাকার পরামর্শও দেন। শেষপর্যন্ত মরিয়া হয়ে একাই সমীরবাবু ওই বৃদ্ধকে অনেক লড়াই করার পর নালা থেকে তোলেন। এরপর আর কারওর জন্যই অপেক্ষা করেননি সমীরবাবু। তিনি নিজেই ওই বৃদ্ধকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে আসেন। বৃদ্ধের পরিবার কিন্তু সমীরবাবুকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানিয়ে ঈশ্বরের কাছে তার মঙ্গল কামনাও করেন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.