সংবাদ প্রতিদিন ব্যুরো: গ্রামবাংলার সাধারণ এক ছেলে। আর পাঁচজনের মতোই সংগ্রামী জীবন। বাবার একফালি সাইকেলের দোকান চালানো এবং তার ফাঁকে রাজনীতির কাজে হাত লাগানো। শোষিতদের হয়ে আওয়াজ তোলা সিপিএমের (CPM) দীর্ঘদিনের সৈনিক। দরিদ্র মানুষের সেবায় নিজেকে নিয়োজিতও করেছেন। আর এই সব কিছু শেষে পড়াশোনার সময় বের করা। তবে মেধার ছটাই যেখানে মূল সম্পদ, সেখানে আর কীসেরই বা প্রয়োজন হয়? বর্ধমান রায়ান গ্রামের ‘কমরেড’ চণ্ডীচরণ লেট সাইকেলের দোকানের যন্ত্রপাতি ছেড়ে এবার কলেজের অধ্যাপক হতে চলেছেন! চণ্ডীচরণ স্টেট লেভেল এলিজিবিলিটি টেস্ট বা SLET’এ পাশ করেছেন, কোনও বিশেষ গাইড ছাড়াই। এমন মধুর সাফল্যের গল্প মুখে মুখে ছড়িয়ে পড়েছে গ্রামজুড়ে। খুশি তিনি নিজেও। তবে শ্রেণি সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ যুবক অধ্যাপক হয়ে সমাজের প্রথম সারির তালিকায় ঢুকে পড়লেও আদর্শের লড়াই জারি থাকবেই, জানাচ্ছেন চণ্ডীচরণ।
একুশে বাংলার বিধানসভা নির্বাচনে বর্ধমান (Burdwan) উত্তর কেন্দ্রে সিপিএমের প্রার্থী হয়েছিলেন চণ্ডীচরণ লেট। শোনা যায়, সেবার প্রার্থী হিসেবে তাঁর নাম ঘোষণা হওয়ার পর পাড়ার এক কাকিমা একটা লাল পাঞ্জাবি কিনে দিয়েছিলেন। সেটা পরেই সারাদিন প্রচার করতেন চণ্ডীচরণ। ছোট থেকে বড় – সকলের সঙ্গেই নিবিড় জনসংযোগ গড়ে তুলেছিলেন। অবশ্য ভোট বলে নয়, সারাবছরই গ্রামবাসীদের সঙ্গে বছর তিরিশের চণ্ডীচরণের সুসম্পর্ক বজায় থাকে। প্রকৃত কমরেডের মতোই সকলের বিপদ-আপদে সবার আগে ঝাঁপিয়ে পড়েন তিনি। আর সেইসঙ্গে ছিল পড়াশোনা। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের (Political Science) ছাত্র এম ফিল কোর্স করছিলেন। তাও দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গিয়েছে।
এভাবে সকলের সুখদুঃখের সঙ্গী হয়ে, বাবার সাইকেলের দোকান চালিয়ে, পার্টি অফিসে রাজনৈতিক আলোচনার যেটুকু সময় হাতে পান চণ্ডীচরণ, সেই সময়ে স্লেটের প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। সাফল্য এল তাতেই। দেখা গেল, এই পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়ে এবার অধ্যাপকের (Professor) চেয়ারে বসতে চলেছেন চণ্ডীচরণ লেট। সাফল্যের খবর পেয়ে ‘সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল’ তাঁকে ফোনে যোগাযোগ করে। প্রশ্ন ছিল, এত বড় সাফল্য, কোনও স্যর ছিলেন? যুবকের উত্তর – ”পেটের ভাত জোটে না, আবার স্যর! একা একা নিজের চেষ্টায় সব করেছি। তবে সকলে খুব সাহায্য করেছেন। বিশেষ করে মা। পাশে ছিলেন সবসময়।”
সাইকেলের দোকান থেকে এবার চণ্ডীচরণের উড়ান সোজা কলেজে, অধ্যাপকের চেয়ারে। তবে কি পিছনে পড়ে থাকবে মেঠো রাজনীতির পথ? মোটেই নয়। সিপিএমের যুব নেতার দাবি, রাজনীতি থাকবে রাজনীতির জায়গাতেই। তার সঙ্গে যোগাযোগ ছিন্ন হবে না কখনওই।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2025 Sangbad Pratidin Digital Pvt. Ltd. All rights reserved.