সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়,দুর্গাপুর: একসময়ের সতীর্থ, সহযোদ্ধা৷ পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের জেরে দু’জনের পথ চলে গিয়েছে দু’দিকে৷ ফের আরেক রাজনৈতিক লড়াই আসন্ন৷ দু’জনেই প্রার্থী৷ লড়াই এবার পরস্পরের বিরুদ্ধে৷ তা’বলে প্রাক্তন সতীর্থকে চিনতে অস্বীকার করবেন? তাই-ই হচ্ছে বর্ধমান-দুর্গাপুর কেন্দ্রে৷ এখানে সিপিএম প্রার্থী আভাস রায়চৌধুরি এবং এসইউসিআই প্রার্থী সুচেতা কুণ্ডু৷ দীর্ঘ সময়ের সহপাঠী, ছাত্র রাজনীতির ময়দানের প্রতিদ্বন্দ্বী এখন একে অপরের পরিচিত বলতেও পিছিয়ে আসছেন৷
আভাস রায়চৌধুরি এবং সুচেতা কুণ্ডু – দুজনেই কলেজ জীবন থেকে বামপন্থায় বিশ্বাসী। তবে পথ ও নীতি সম্পূর্ন পৃথক। লাল পতাকা হাতে দু’জনের ক্ষুরধার বক্তব্য কর্মী, সমর্থকদের চাঙ্গা করে তুলত নিমেষে৷ দু’জনই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া৷ নয়ের দশকের উত্তাল ছাত্র আন্দোলনের সময়েও একে অন্যের চরম প্রতিদ্বন্দ্বী। ফি বৃদ্ধি নিয়ে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন আগুনঝরা দিন৷ জোরদার প্রতিবাদে শামিল এসইউসিআই৷ সংগঠনের নেত্রী সুচেতা কুণ্ডু এসএফআই-এর নির্মম সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জারি রেখেছিলেন লড়াই৷ ১৯৯১ সালে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে আন্দোলনের সময় সুচেতাকে টেনেহিঁচড়ে ক্লাসরুম থেকে বের করে পুলিশ। আর বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন এসএফআই-এর সাধারণ সম্পাদকের পদে বসেছিলেন আজকের সিপিএম প্রার্থী আভাস রায়চৌধুরি। লড়াই তখন থেকেই৷ আভাস এবং সুচেতা – উভয়ের শিক্ষাগত যোগ্যতাও এক। দু’জনই বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই এম ফিল করেছেন রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে। একে অন্যের বিরুদ্ধে আগেও ভোটে লড়েছেন। আভাস রায়চৌধুরি আগে বারাবনী বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী হিসেবে হেরেছেন। সুচেতা কুণ্ডু তিন তিনবার দুর্গাপুর পুরনিগমের ভোটে দাঁড়িয়ে পরাজিত হয়েছেন৷ এবারও একে অন্যের বিরুদ্ধে লড়ছেন৷
কিন্তু নির্বাচনের প্রাক্কালে এ কেমন অসৌজন্যের পরিচয় দিলেন বর্ধমান-দুর্গাপুরের সিপিএম প্রার্থী? এক সময়ের বামপন্থী ‘বন্ধু’কে অস্বীকার করলেন আভাস রায়চৌধুরি। সুচেতার প্রসঙ্গে তিনি একেবারেই আলগাভাবে উত্তর দিলেন, “বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ে একসঙ্গে পড়তাম। আমার সঙ্গে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতা, কর্মীদেরও বন্ধুত্ব আছে। সবাই আমার বন্ধু। এর বাইরে কেউ কিছু নয়।” বন্ধুত্বের কথা আভাস এভাবে অস্বীকার করলেও, সুচেতা কিন্তু সৌজন্য বজায় রেখেছেন৷ তাঁর কথায়, “ আভাস বন্ধুত্বের কথা অস্বীকার করলে কিছু বলার নেই। ভোট রাজনীতির স্বার্থে বন্ধুত্বকে ও অস্বীকার করছে। আমরা একসঙ্গেই এম ফিল করেছি। একসঙ্গেই ক্লাস করতাম। ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব বা শত্রুতা নেই। তবে রাজনৈতিকভাবে চরম প্রতিদ্বন্দ্বিতা আছে।” এবার ভোটে এক ইঞ্চিও জমি একে অন্যকে ছাড়তে রাজি নয়, তা বোঝা যাচ্ছেন এঁদের কথা থেকেই৷
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.