ব্রতদীপ ভট্টাচার্য, বারাসত: আমডাঙায় ত্রিশঙ্কু পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের ক্ষেত্রে বামেদের সাহায্য করবে বিজেপি। আমডাঙার সিপিএম এমনকী সিপিএমের পঞ্চায়েত সদস্যরা বিজেপির হেফাজতেই রয়েছে। এমনই চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করে বাম-রাম জোটের বিতর্ক উসকে দিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ৷ বারাসত আদালতে একটি মামলার হাজিরা দিতে এসে তিনি বলেন, “আমডাঙায় সিপিএমের লোক যারা জিতেছে, তাঁরা আমার হেফাজতে আছে। সিপিএমের দম নেই। ঠিক সময়মতো তাঁদের বের করব। প্রধান আমরাই করব।” দিন কয়েক আগেই আমডাঙায় দাঁড়িয়ে বিজেপি বিরোধী বক্তব্য রাখেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু। তার কয়েক দিনের মধ্যেই বিজেপির রাজ্য সভাপতির এহেন মন্তব্যে স্বাভাবিকভাবেই অস্বস্তিতে বাম শিবির। দিলীপবাবুর এই মন্তব্যকে গুজব ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা বলে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে সিপিএম।
২০১৭ সালের হেয়ার স্ট্রিট থানার একটি মামলায় এদিন বারাসতের এমপি এমএলএ কোর্টে হাজিরা দিতে আসেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ-সহ, রূপা গঙ্গোপাধ্যায়, লকেট চট্টোপাধ্যায়, শমীক ভট্টাচার্য এবং রাজু সেনগুপ্ত। তাঁদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছিল আদালত। এদিন প্রত্যেকে এক হাজার টাকার বেল বন্ডে জামিন নেন। আদালতে এসে এই বিস্ফোরক মন্তব্য করেন বিজেপি রাজ্য সভাপতি। যদিও সে অভিযোগ খারিজ করে সিপিএম। সিপিএমের জেলা কমিটির দাবি, বামেদের সঙ্গে বিজেপির কোনও যোগাযোগ নেই। যদিও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আমডাঙার গন্ডগোলের আগে মরিচা পঞ্চায়েতে দুই বিজেপি সদস্য সিপিএমকে সমর্থন করে এবং বোর্ড গঠন করতে যায়। তার কয়েক দিনের মাথায় বিজেপির এক সদস্যকে ধর্ষণের মামলায় গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাৎপর্যপুর্ণভাবে ওই বিজেপি সদস্যকে সিপিএমের জেলা পার্টি অফিস থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
[খবরের জের, বারাকপুরের সহায়-সম্বলহীনা বৃদ্ধার পাশে অভিষেক]
অন্যদিকে, আমডাঙা কাণ্ডের মূল অভিযুক্ত জাকির বুল্লুক ওই ঘটনার পর থেকেই ফেরার ছিল। ১৫ সেপ্টেম্বর তাকে রাজস্থানের আজমেঢ় থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুলিশ সূত্রে খবর, রাজস্থানে পালানোর আগে বিজেপির রাজ্য অফিসে ছিল জাকির। বাম-বিজেপি আঁতাঁতের অভিযোগ তুলেছিল তৃণমূল। এদিন সেই অভিযোগে ঘৃতাহুতি দেয় দিলীপবাবুর এই মন্তব্য।
[পঞ্চায়েতের প্রধান ও উপপ্রধানের পদে দম্পতি, খানাকুলে ‘ঈশ্বর’দের মালাবদল!]
আমডাঙায় সংঘর্ষের ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার মাধবপুর মোড়ে জনসভায় দাঁড়িয়ে বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু শাসকদলের পাশাপাশি আগাগোড়া বিজেপিকে তুলোধোনা করেন। ধর্মের নামে রাজনীতি করার অভিযোগ তোলেন বিজেপির বিরুদ্ধে। এমনকী আমডাঙার মাটিতে বিজেপিকে কোনও জায়গা না দেওয়ার নির্দেশ দেন কর্মীদের। কিন্তু তার তিন দিনের মাথায়, বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ সিপিএমের সঙ্গে আঁতাঁতের কথা প্রকাশ্যে ঘোষণা করায় স্বভাবতই বিতর্ক বাড়তে শুরু করেছে। উত্তর ২৪ পরগনা তৃণমূলের জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “আমরা এতদিন অভিযোগ করছিলাম, রাজ্য সভাপতি এদিন নিজের মুখে বলে সেটা প্রমাণ করে দিলেন। জাকির বুল্লুক রাজস্থানে পালানোর আগেও বিজেপি তাকে আশ্রয় দিয়েছিল।” যদিও জাকিরকে আশ্রয় দেওয়ার কথা মানতে রাজি নন দিলীপবাবু। তিনি স্পষ্ট জানান, আমডাঙার সিপিএম সদস্যরা বিজেপির হেফাজতে রয়েছে। বিজেপির রাজ্য সভাপতির এই মন্তব্যকে মিথ্যা বলে দাবি করেছেন সিপিএমের জেলা সম্পাদক মৃণাল চক্রবর্তী। তিনি বলেন, “এটি সম্পূর্ণ গুজব। বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে।” তবে সিপিএমের সদস্যরা কোথায় আছেন তার উত্তর পাওয়া যায়নি মৃণালবাবুর থেকে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.