চঞ্চল প্রধান, হলদিয়া: হলদিয়া (Haldia) বন্দরেও সাগরদিঘি মডেলে জয় বাম-কংগ্রেস জোটের। শুভেন্দু অধিকারীর গড়ে নিজেদের নাক কেটে তৃণমূলের যাত্রাভঙ্গ করতে জোটকে তলে-তলে সমর্থনের অভিযোগ উঠছে বিজেপির বিরুদ্ধেও। ফলে হলদিয়া ডক ইনস্টিটিউট নির্বাচনে ১৯ আসনে জয় পেল বাম-কংগ্রেস জোট। অন্যদিকে তৃণমূল ও বিজেপির হাতে রইল পেনসিল! জয় নিয়ে বাম-কংগ্রেসের পাশাপাশি উচ্ছ্বসিত বিজেপিও। পরাজয়ের কারণ পর্যালোচনার পথে হাঁটছে তৃণমূল। তবে আগামী হলদিয়া পুরভোটে সাগরদিঘি মডেলের প্রভাব পড়ে কিনা সেটাই দেখার।
শুক্রবার ছিল হলদিয়া বন্দরের স্থায়ী কর্মচারীদের রিক্রেয়শান ক্লাব প্রতিনিধি নির্বাচন। মোট আসন ১৯টি। আইএনটিটিইউসি সমর্থিত এনইউডব্লিউডব্লিউআই এককভাবে ১৯টি আসনে প্রার্থী দিয়েছিল। বিজেপি সমর্থিত ভারতীয় মজদুর সংঘ(বিএমএস) সবক’টি আসনে পৃথকভাবে লড়াই করে। সেই সঙ্গে সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটু সমর্থিত ক্যালকাটা পোর্ট অ্যাণ্ড শো-র মজদুর ইউনিয়ন(সিপি অ্যাণ্ড এসএমইউ)-সহ জোট এই ভোটযুদ্ধে পৃথকভাবে প্রার্থী দিয়েছে। তাতে মুখ্য ভূমিকা পালন করে সিপি অ্যাণ্ড এসএমইউ। এসইউসিআই সমর্থিত ক্যালকাটা পোর্ট শ্রমিক ইউনিয়ন (সিপিএসইউ), কংগ্রেস সমর্থিত কলকাতা-হলদিয়া পার্মানেন্ট এমপ্লয়িজ ইউনিয়ন (কেএইচপিইইউ) এবং আইএনটিটিইউসি সমর্থিত হলদিয়া পোর্ট অ্যাণ্ড ডক এমপ্লয়িজ অ্যাসোসিয়েশন (এইচপিডিইএ) ছিল সিটুর জোট সঙ্গী। তিনটি প্যানেলের প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়।
মোট ভোটার ছিল ৭৩৭ জন। ভোট দিয়েছেন ৬৯৪ জন। তিনটি প্যানেলে এক নির্দল-সহ মোট ৫৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছেন। শনিবার ছিল ভোট গণনা। প্রথম থেকেই এগিয়ে ছিলেন বাম সমর্থিত প্রার্থীরা। ৭টি টেবিলে গণনার শেষে তৃণমূলকে সমস্ত আসনে হারিয়ে নিরঙ্কুশ জয় ছিনিয়ে নেয় সিটু সমর্থিত জোট। জোট প্রার্থীদের মধ্যে সহ সভাপতির পদটি বামেদের দখলে গিয়েছে। বাকি ১৮টি আসনের মধ্যে জোট সঙ্গীদের সিপি অ্যাণ্ড এসএমইউ-৭টি, কেএইচপিইইউ-৭টি, সিপিএসইউ-৩টি এবং এইচপি অ্যাণ্ড ডিইএ পেয়েছে ১টি আসনে জয়ী হয়েছে।
এই জয় মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত জয় বলে জানান সিপি অ্যাণ্ড এসএমইউ’র রাজ্যের ডেপুটি জেনারেল সেক্রেটারি বিমান মিস্ত্রি। তিনি বলেন,”পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সাগরদিঘি মডেলকে মানুষ দু’হাত ভরে সমর্থন জানিয়েছেন। হলদিয়া ডক ইনস্টিটিউট নির্বাচনেও সাগরদিঘি মডেল কাজ করেছে। সমস্ত আসনে জয়ী হওয়ার জন্য অনেক দায়িত্ব বেড়ে গিয়েছে। হলদিয়া বন্দরে স্থায়ী কর্মী কমে যাচ্ছে। তাই ২৪৩ জন অস্থায়ী শ্রমিককে ইনস্টিটিউটের সদস্য করার চেষ্টা করব। সেই সঙ্গে তাঁদের ভোটাধিকারের সুযোগ তৈরি করব।”
তবে এই ভরাডুবির কারণ জানতে এনইউডব্লিউডব্লিউআই নেতা দেবপ্রসাদ মাইতিকে ফোন করা হয়। রিং বাজলেও তিনি ফোন কেটে দেন। তবে আইএনটিটিইউসি’র তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি চন্দন দে সাফ জানান,”হলদিয়া ডক ইনস্টিটিউট নির্বাচনে সাগরদিগি মডেল কাজ করেনি। তবে কেন পরাজয় হল তা নিয়ে পর্যালোচনা হবে।” বাম সমর্থিত জোটের জয়ে অবশ্য বিজেপির ভাবাদর্শে থাকা ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ রীতিমতো খুশি। ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘের অল ইণ্ডিয়া ডক ফেডারেশনের সভাপতি প্রদীপ বিজলি জানান,”আমাদের সদস্য সংখ্যার তুলনায় আমরা অনেক বেশি ভোট পেয়েছি। তবে তৃণমূলকে হারিয়ে জোট প্রার্থীরা জয়ী হওয়ায় আমরা খুশি। সিটুর উল্লসিত হওয়ার কিছু নেই। কারণ তাদের সঙ্গে তৃণমূলের অপর একটি অংশ যুক্ত আছে ।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.