সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: গরু চুরি করতে এসে স্থানীয়দের হাতে ধরা পড়ল দুই দুষ্কৃতি৷ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্যাপক উত্তেজনা দুর্গাপুর থানা এলাকার স্টিল হাউস বসতিতে৷ চলে গরু চোরদের মারধোর৷ ধরে রাখা হয় দুষ্কৃতীদের৷ বিশাল পুলিশবাহিনী গিয়েও ছাড়াতে পারেনি দুষ্কৃতীদের৷ অন্যান্য এলাকা থেকেও চুরি যাওয়া গরুর মালিকরা জড়ো হয় স্টিল পার্ক বসতিতে৷ পরে পুলিশ জোর করে দুষ্কৃতীদের নিয়ে যেতে চাইলে ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর করে৷ পুলিশের মাথাও ফাটিয়ে দেয় বলে অভিযোগ৷ পুলিশ লাঠিচার্জ করে হঠিয়ে দেয় উন্মত্ত জনতাকে৷
রবিবার সকালে স্টিল হাউস বসতিতে ‘এক্সাইজ অন ডিউটি’ লেখা একটি ছোট ট্রাক নিয়ে চার দুষ্কৃতী গরু চুরি করতে ঢোকে বলে অভিযোগ৷ স্থানীয় বাসিন্দা মোহন সিং ও তার কাকু রাজু সিংয়ের এদিন ভোরেই চারটি গরু চুরি হয়েছে বলে অভিযোগ করেন মোহন সিং৷ তাই তাঁরা এদিন সতর্কই ছিলেন৷ সকাল দশটা নাগাদ এক দুষ্কৃতী তার একটি গরুকে ধরে নিয়ে যেতে দেখেই তাকে আটকান মোহন৷ ওই দুষ্কৃতী তাঁকে বলে, এক ব্যক্তির বাগান নষ্ট করেছে এই গরুটি৷ তাকে ধরে নিয়ে যেতে বলা হয়েছে তার কাছে৷ তখন মোহনবাবু বলেন, ‘আমাকে নিয়ে চলুন৷ আমি তার কাছে গিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি৷’ কিন্তু ওই দুষ্কৃতী তা মানতে রাজি না হওয়াতেই শুরু হয় বচসা৷ বসতির অন্যান্য বাসিন্দারাও চলে আসেন৷ ওই দুষ্কৃতীকে চেপে ধরতেই সে আরও দুটি গরু নিয়েছে বলে জানায়৷ দেখা যায় একটু দুরেই আবাগারি দপ্তরের স্টিকার লাগানো একটি ছোট ট্রাকে দুটি গরু চাপানো আছে৷ ওই ছোট ট্রাকে বসেও আছে তিনজন৷ স্থানীয় বাসিন্দাদের উত্তেজিত হয়ে এগিয়ে আসতে দেখে পালায় দুই দুষ্কৃতী৷ অপরজনকে ধরে ফেলেন বাসিন্দারা৷ এরপরই দুই দুষ্কৃতীকে জেরা শুরু করে বসতির বাসিন্দারা৷ অসংলগ্ন কথা বলতেই শুরু হয় গণপিটুনি৷ তাদের আটকে রাখা হয়৷ খবর পেয়ে বিশাল পুলিশবাহিনী আসে ঘটনাস্থলে৷ পুলিশ দুই দুষ্কৃতীকে ছাড়িয়ে থানায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে বাধা দেন স্থানীয় বাসিন্দারা৷ রাজু সিং বলেন, ‘‘গত একবছরে এই বসতি থেকেই বহু গরু চুরি হয়েছে৷ পুলিশকে বলা হলেও তা আটকানো যায়নি৷ আজ এক দুষ্কৃতীকে আমরা হাতেনাতে ধরে ফেলি৷ আমাদের সামনে পুলিশের উপস্থিতিতে আগের চুরি যাওয়া গরুর দাম মেটাতে হবে৷ আর মূল দুষ্কৃতীকে এখানে আনতে হবে৷”
এদিকে গরু চোর ধরা পড়েছে জানতে পেরে অন্যান্য এলাকা থেকেও খোয়া যাওয়া গরুর মালিকরা ঘটনাস্থলে চলে আসেন৷ তাঁরাও চুরি যাওয়া গরুর দাম চাইতে থাকেন৷ এলাকার পরিস্থিতি ক্রমেই অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠতে থাকে৷ পুলিশ কোনওভাবেই দুষ্কৃতীদের আটক করে নিয়ে যেতে ব্যর্থ হয়৷ এরপরই বিশাল পুলিশবাহিনী এসে উন্মত্ত জনতাকে হঠাতে শুরু করে লাঠিচার্জ৷ পালটা উত্তেজিত জনতাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ছুঁড়তে থাকে ইট৷ রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় এলাকা৷ ইটের আঘাতে দুর্গাপুর থানার এ-জোন ফাঁড়ির ইনচার্জ সিনাথ অধিকারির মাথা ফাটে৷ আহত হন আরও পাঁচ পুলিশকর্মী৷ লাঠিচার্জের পরই দুই দুষ্কৃতীকে নিয়ে থানায় আসতে সমর্থ হয় পুলিশ৷ প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর তাদের আটক করতে পারে পুলিশ৷ পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আটক দুই দুষ্কৃতী আমিরুল শেখ ও আকাশ বাগদি পানাগড়ের বাসিন্দা৷ আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশের ডিসি অভিষেক মোদি জানান,“ দুই গরু চুরি করতে আসা দুষ্কৃতিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ পুলিশকে মারধরের অভিযোগেও স্থানীয় চারজনকে আটক করা হয়েছে৷ তিনজন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন৷ আবগারি দপ্তর লেখা গাড়িটি কোথা থেকে আনা হয়েছে এবং এটা কার গাড়ি তাও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে৷”
[শিলিগুড়িতে একই রুটে পেট্রল পাম্পে সিরিয়াল ডাকাতির কিনারা, জালে তিন দুষ্কৃতী]
ছবি: উদয়ন গুহরায়
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.