নন্দন দত্ত, সিউড়ি: পেশায় স্কুল শিক্ষিকা। অথচ, সেই সুকন্যা মণ্ডলের নামে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি! যার বহর দেখলে চোখ কপালে উঠবে। ইডি বলছে, গরু পাচার মামলায় তিনিই পয়লা নম্বর সুবিধাভোগী। অনুব্রত মণ্ডল (Anubrata Mandal) পাচারের টাকা দিয়ে নিজের নামে যত না সম্পত্তি করেছেন, তার চেয়ে বেশি সম্পত্তি করেছেন মেয়ের নামে।
অনুব্রতর মেয়ে সুকন্যা (Sukanya Mandal) নিজে যা হিসাবে দিয়েছেন, সেটাই চমকে দেওয়ার মতো। তাঁর আয় গত ২০১৩-১৪ সালে ছিল ৩ লক্ষ ৯ হাজার ৩৯৯ টাকা। ২০১৫-১৬ আর্থিক বছরে যেন অনুব্রতর মেয়ের বার্ষিক আয় অনেকটা বাড়ে। সে বছর ৪৯ লক্ষ ৩২ হাজার টাকা আয় দেখান অনুব্রত কন্যা। ২০১৮-১৯ সালে ফের লং জাম্প। ওই বছর আয়কর রিটার্নে (IT Return) সুকন্যা তাঁর আয় দেখিয়েছিলেন ১ কোটি ২৯ লক্ষ টাকা। ২০২১-২২ সালে ওই আয় দাঁড়ায় ৯২ লক্ষ ৯৭ হাজার ৬০০ টাকা। সুকন্যার মা প্রয়াত ছবি মণ্ডলের আয় ২০১৩-১৪ সালে যেখানে ছিল ৪ লক্ষ ৪৫ হজার ২৬০ টাকা, সেখানে ২০২০-২১ সালে ওই আয় গিয়ে দাঁড়ায় ৬১ লক্ষ ১১ হাজার ৯৭০ টাকা। মণ্ডল পরিবারের প্রত্যেকটি আয়ের উৎস খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এ তো গেল শুধু সরকারি হিসাবে। সুকন্যার নামে যে বিপুল সম্পত্তির হদিশ মিলেছে, এবং বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে তিনি যে বিপুল টাকা রোজগার করেন, সেটার হিসাবে এর মধ্যে নেই। জানা গিয়েছে, দুটি কোম্পানির ডিরেক্টর পদে রয়েছেন সুকন্যা মণ্ডল। একটি সংস্থা, নীর ডেভলপার এবং অন্য একটি সংস্থা এএনএম অ্যাগ্রোকেম। এই এএনএম অ্যাগ্রোকেমের অধীনে রয়েছে ভোলে ব্যোম রাইস মিল। এর পাশাপাশি বোলপুরের মকরমপুরে দুটি প্লট রয়েছে সুকন্যার নামে। বল্লভপুরেও রয়েছে চারটি প্লট। কালিকাপুর ও গয়েশপুর মিলিয়ে সুকন্যার নামে ২৮টি জমির নথির সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। নিউটাউনেও দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে সুকন্যার নামে।
সামগ্রিকভাবে মণ্ডল পরিবারের বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে মোট ২০ কোটি টাকা নগদ জমা ছিল। ২০১৬ থেকে ২০২০, এই ৫ বছরে বোলপুর এবং তার আশপাশের ব্যাংকে জমা পড়েছে ২০ কোটি নগদ টাকা। এর একটা বড় অংশ সুকন্যার নামে। অনুব্রত মণ্ডলের নামে ২৪টি, তাঁর মেয়ে সুকন্যার নামে ২৬টি, প্রয়াত স্ত্রী ছবি মণ্ডলের নামে ৬টি সম্পত্তির হদিশ পাওয়া যায়। শুধু বোলপুর পুর এলাকাতেই সুকন্যার নামে যা সম্পত্তি আছে, তার আনুমানিক মূল্য হতে পারে ২৫ কোটি টাকা। সূত্রের খবর, এ এন এম অ্যাগ্রোকেম ফুড প্রাইভেট লিমিটেডের অন্যতম ডিরেক্টর সুকন্যা মণ্ডল। মিনিস্ট্রি অফ কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্সের তথ্য অনুযায়ী, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরে এই সংস্থাটি তৈরি হয়। সেই সময় সংস্থার শেয়ার ক্যাপিটাল ছিল ১ কোটি টাকা। ভোলে বোম রাইস মিলের মালিক মণ্ডল পরিবার। এটা ছাড়াও, সুকন্যার নামে আরও ১০টি জমির ডিড বা চুক্তিপত্র পাওয়া গেছে। সূত্রের দাবি, এই সম্পত্তিগুলির মধ্যে ৩টি কেনা হয়েছে ভোলে বোম রাইস মিলের নামে। যেখানে সুকন্যাকে পার্টনার হিসাবে দেখানো হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.