নিজস্ব সংবাদদাতা, বনগাঁ: গৃহস্থের সাধের গোয়াল ঘর। গরুর জন্য রাখা খড় বিচুলি কিংবা বাড়ির উঠোনে ফেলে রাখা চাষের ফসল রোজ রোজ খেয়ে যায় গ্রামের ভবঘুরে বলদ। কিন্তু প্রত্যেক দিন এ জ্বালাতন সহ্য হয় না। রোজ রোজ জ্বালাতনের শব্দ শুনে তাড়িয়ে দিলেও হতচ্ছাড়া কিছুক্ষণের জন্য অন্যত্র সড়ে গিয়ে গা ঢাকা দেয়। গৃহস্থ নজর ঘোরালেই আবার পরিস্থীতি যে কে সেই। গোয়াল ঘরে কিংবা বাড়ির উঠোনে আবার হাজির হত সে। তাই গৃহস্থ মনে মনে ফন্দি আঁটলেন কিভাবে ওই জ্বালাতনে ষাঁড়কে শায়েস্তা করা যায়। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। এবার আর লাঠি সোঁটা নয়। অনেক ভেবে সোজা সাপটা গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে বাড়ি কিংবা গ্রামের চৌহদ্দি থেকে একেবারে খেদিয়ে বিদায় করতে হবে। রীতিমতো ষড়যন্ত্র করে পুড়িয়ে মারতে হবে ষাঁড়কে। সেই মতো প্রহর গুনছিলেন গৃহস্থ। ষাঁড়টি রবিবার রাতে সাধের গোয়াল ঘরে আসামাত্রই আর একমুহূর্ত সময় নষ্ট করেননি গাইঘাটা থানার দক্ষিন দিঘা গ্রামের বাসিন্দা জয়দেব দাস। এমনকি ভবঘুরে পশুর গায়ে কেরোসিন তেল ঢেলে সেকথা নিখাদ গোপন করে গ্রামেরই যুবক দেবাশিস ঘোষকে ডেকে ষাঁড়ের গায়ে আগুন ধরিয়ে দিতে বলে অভিযুক্ত। পাড়াতুতো জ্যাঠার কথা শুনে তড়িঘড়ি কেরোসিন তেল ঢালা ষাঁড়ের গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় দেবাশিস।
[বিয়েতে রাজি নয় পছন্দের তরুণী, দুঃখে নিজের যৌনাঙ্গে কোপ মারল যুবক]
তারপর জ্বলন্ত অবস্থায় এদিক সেদিক পাগলের মতো দৌড়ে বেড়াতে শুরু করে ষাঁড়টি। অবলা জীবের আর্তনাদ শুনে শীতের রাতে গ্রামবাসীরা ঘর থেকে বেড়িয়ে এলেন। কিন্তু জ্বলন্ত ষাঁড়ের সামনে কেইবা যাবে আর কেইবা আগুন নিভিয়ে তাকে স্বস্তি দেবে। তবুও কয়েক জন গ্রামবাসী দুর থেকে জল ঢেলে কোনওরকমে আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেন। জ্বলন্ত অবস্থায় তখন ষাঁড় যাঁকেই সামনে পায় তাঁকেই গুঁতিয়ে দেয়। কিন্তু এই জঘন্য কাজ করল কে? গ্রামবাসীরা তখন রেগে আগুন। অবশেষে জানা গেল অভিযুক্ত জয়দেব দাসের নাম। য়ে কিনা এই পাশবিক ঘটনা ঘটিয়েছেন। ততক্ষনে শরীরের আগুন নিভে গিয়ে কিছুটা নিস্তেজ হয়ে গিয়েছে অবলা ষাঁড়। ইতিমধ্যেই খবর পৌঁছে গিয়েছে গাইঘাটা ব্লক পশুচিকিৎসকের কাছে। শোনা মাত্রই অগ্নিদগ্ধ ষাঁড়ের চিকিৎসায় চলে আসেন প্রভাত কুমার মণ্ডল। শেষমেশ চিকিৎসা শুরু হলেও তার আগেই শরীরের বেশ কিছুটা অংশ আগুনে ঝলসে গিয়েছে ষাঁড়ের। এরপর উত্তেজিত গ্রামবাসীদের কাছে ক্ষমা ভিক্ষা চেয়ে রেহাই মেলে দুই অভিযুক্তের। চিকিৎসক জানান, এখনকার মতো চিকিৎসা হলেও ভবিষ্যতে সংক্রমিত হয়ে প্রাণ যেতে পারে বলদটির। কিন্তু যেভাবেই হোক বাঁচাতে হবে বলদটিকে। ঘটনার খবর পেয়ে সোমবার ঘটনা স্থলে যান রাজ্য প্রাণিসম্পদ বিকাশ দপ্তরের চিকিৎসকরা। গ্রামবাসীদের কাছ থেকে রেহাই মিললেও পাশবিক ঘটনার খবর পেয়ে দুই অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে গাইঘাটা থানার পুলিশ। এলাকা ছেড়ে চম্পট দিয়েছে দুই অভিযুক্ত বলে জানা গিয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.