ফাইল ফটো
ক্ষীরোদ ভট্টাচার্য: দু’শো চিকিৎসক। নার্স, মাইক্রোবায়োলজিস্ট মিলে আরও তিনশো। চুক্তির ভিত্তিতে এমন প্রায় পাঁচশো স্বাস্থ্যযোদ্ধা এনে কোভিডত্রস্ত রাজ্যে চিকিৎসা পরিষেবার খুঁটি পোক্ত করতে চাইছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্যদপ্তর ইতিমধ্যে পাকা সিদ্ধান্ত নিয়েও ফেলেছে।
বাংলার মাটিতে ফেরত আসা পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা যত বাড়ছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সন্দেহভাজন করোনা আক্রান্তের সংখ্যাও। যা নিয়ে লকডাউনের শেষ পর্যায়ে রাজ্য প্রশাসন রীতিমতো উদ্বিগ্ন। আগাম সতর্কতা হিসাবে সংক্রমণ ঠেকানোর লক্ষ্যে ইতিমধ্যে প্রায় ৫৭টি বেসরকারি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসার ব্যবস্থা হয়েছে। এবার শুরু হয়েছে চিকিৎসক, নার্স এবং ব্যাপকহারে মাইক্রোবায়োলজিস্ট নিয়োগের উদ্যোগ। বিভিন্ন জেলায় কোয়ারেন্টাইন সেন্টারও বাড়ানো হবে। কোভিড আগ্রাসনে বাঁধ দিতে সরকার এ ভাবেই কোমর বাঁধছে। স্বাস্থ্য-সূত্রের খবর, এই মুহূর্তে কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যে প্রায় ৬৪টি সরকারি হাসপাতালে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসা চলছে।
অতি সংক্রমণশীল এই রোগ যাতে কোনওমতে আরও না ছড়ায়, তাই শ্রমিক স্পেশ্যাল ট্রেনের সব সওয়ারির লালারস পরীক্ষা, এবং প্রয়োজনে আক্রান্তদের হাসপাতালে ভর্তি করা একান্ত জরুরি। কিন্তু সে জন্য গেলে আরও বেশ কিছু চিকিৎসক, নার্স, মাইক্রোবায়োলজিস্ট চাই। জরুরি ভিত্তিতে তার সংস্থান করতে সরকার তাই কোমর বেঁধেছে। রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম শুক্রবার বিষয়টি নিয়ে বিভাগীয় আধিকারিকদের সঙ্গে জরুরি আলোচনায় বসেন। তাঁর কথায়, “পরিযায়ী শ্রমিকদের একটা বড় অংশে করোনা সংক্রমিত হচ্ছে। স্বাভাবিকভাবেই আক্রান্তের সংখ্যা ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী। তাই জরুরি ভিত্তিতে কয়েকটি জেলায় চুক্তিতে ডাক্তার, নার্স ও মাইক্রোবায়োলজিস্ট নিয়োগের ব্যবস্থা হয়েছে।”
স্বাস্থ্যসচিব জানান, প্রাথমিকভাবে করোনা মোকাবিলায় অন্তত দুশো চিকিৎসককে চুক্তিতে নিয়োগ করা হবে। চুক্তির ভিত্তিতে আনা হবে তিনশো নার্স ও পর্যাপ্ত মাইক্রোবায়োলজিস্ট। স্বাস্থ্যদপ্তরের এক যুগ্মসচিব জানিয়েছেন, প্রস্তাবটি অনুমোদনের জন্য নবান্নে অর্থদপ্তরে পাঠানো হয়েছে। অর্থাৎ নীতিগত সিদ্ধান্ত পাকা। শুধু নবান্নের আনুষ্ঠানিক সিলমোহরের অপেক্ষা। যুগ্মসচিবের বক্তব্য, মূলত, হুগলি, মুর্শিদাবাদ, উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুর এবং পুরুলিয়া জেলায় পরিযায়ী শ্রমিকরা ঘরে ফিরছেন। এঁদের থেকে এলাকায় যাতে বিপদ না ছড়ায়, তা নিশ্চিত করতেই এই পদক্ষেপ। তথ্য বলছে, মহারাষ্ট্র, গুজরাট বা তেলেঙ্গানাফেরত শ্রমিকদের বড় অংশ বাড়িতে নিভৃতবাসে থাকতে নারাজ। অনেকের পরিবারই চাইছেন সরকারি কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে ১৪ দিন কাটিয়ে ঘরের মানুষ ঘরে ঢুকুন। হুগলি, উত্তর দিনাজপুর, পুরুলিয়া-সহ কিছু জেলায় সমস্যাটি প্রকট। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, পরিবারের সঙ্গে একটি ঘরে ঠাসাঠাসি করে থাকছেন ভিন রাজ্য থেকে আসা পরিযায়ী শ্রমিক, বহুগুণ বাড়িয়ে দিচ্ছেন সংক্রমণের চোখরাঙানি।
এ সবের মোকাবিলা করতেই দক্ষিণ ও উত্তরবঙ্গের অন্তত ন’টি জেলায় আরও নতুন কোয়ারেন্টাইন সেন্টার খুলতে জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকদের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। পঞ্চায়েত ও স্কুলশিক্ষা দপ্তরের সঙ্গে এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্যকর্তাদের একপ্রস্থ আলোচনা হয়েছে। পঞ্চায়েত দপ্তরের খবর, কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে খাবার সরবরাহ প্রক্রিয়ায় স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলিকে শামিল করা হবে। দরকারে স্কুলবাড়িগুলিকে কাজে লাগানোর পরিকল্পনাও মজুত। নোভেল করোনা প্রতিরোধে চুক্তি-চিকিৎসক নিয়োগের পদক্ষেপকে স্বাগত জানাচ্ছেন ডাক্তারবাবুরা। চিকিৎসকদের সংগঠন ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনের তরফে অর্জুন দাশগুপ্তের প্রতিক্রিয়া, “চুক্তির ভিত্তিতে যে ডাক্তাররা নিযুক্ত হবেন, তাঁদের আর্থিক দিকটিও যেন সরকার সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনা করে। এর আগে গত কয়েক বছরে অন্তত দু’বার চুক্তিতে চিকিৎসক নিয়োগের চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু আশানুরূপ সাড়া মেলেনি।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.