তরুণকান্তি দাস: কারণে-অকারণে বাড়ির বাইরে পা রাখা বারণ। কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। কিন্তু এ মোটেই বন্দিদশা নয়। বরং করোনা নামক বিপদের হাতছানিতে সাড়া দেওয়ার কোনও উপায় যাতে না থাকে, সেই লক্ষ্যে অতি সতর্কতা ও নিরাপত্তার ঘেরাটোপ। প্রশাসনিক পরিভাষায়, ‘স্পেশ্যাল কেস’। এবং সেই বিশেষ সতকর্তা বলবৎ করতে একেবারে পাড়া ধরে ধরে পরিকল্পনা ছকতে হয়েছে। যাকে বলে, ‘মাইক্রো প্ল্যানিং’ রাজ্যজুড়ে নয়, বিশেষভাবে চিহ্নিত কিছু এলাকার জন্য। সরকারের বিশেষজ্ঞ কমিটির সুপারিশ মেনে ওই সব নির্দিষ্ট অঞ্চলে বিশেষ পদক্ষেপ করছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। যেগুলির অধিকাংশ জেলায় হলেও তালিকায় কলকাতা ও হাওড়ার কিছু এলাকার নাম মজুত। যদিও সেখানকার বাসিন্দাদের প্রতি প্রশাসনের অভয়বাণী, আতঙ্কিত হবেন না। আতঙ্কের কোনও কারণ তো নেইই, বরং প্রশাসনের সাহায্য মিলবে আরও বেশি।
সেই মতো বাড়তি দায়িত্ব নিয়ে কোমর বেঁধেছে স্বাস্থ্যদপ্তর। সংশ্লিষ্ট অঞ্চলবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাপনে ব্যাপক হস্তক্ষেপ না করেও বাড়তি কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হচ্ছে। মূলত আক্রান্তদের বাসস্থান, কর্মক্ষেত্র অথবা রোগ সংক্রমণের উৎপত্তিস্থল খুঁজে, তাঁদের জীবনযাপনের রুটম্যাপ বুঝে তৈরি হয়েছে এই বিশেষ রোডম্যাপ। যে প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার বলেছেন, “হটস্পট বলা ঠিক হবে না। এগুলি বিশেষ কেস। তা নিয়ে ম্যাপ তৈরি করছি। এটি সরকারের মাইক্রো প্ল্যানিং। আমরা অনেকগুলো সীমান্তের মধ্যে আছি, এটা মাথায় রাখতে হবে।” সামাজিক কারণেই চিহ্নিত অঞ্চলসমূহের নাম প্রকাশ্যে আনতে চাইছে না সরকার। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “এলাকা ধরে বিস্তারিত তথ্য বলতে পারি না। জীবনযাপনের ক্ষেত্রে ওই সমস্ত এলাকায় কোনও বাধা থাকবে না। তবে লকডাউন চলবে এবং বিশেষ সর্তকতা নেওয়া হবে। কোনও এলাকার নাম বললে সেখানকার বাসিন্দাদের বন্ধু বা আত্মীয়দের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়াতে পারে। কোনওভাবেই আতঙ্ক ছড়ানো যাবে না।”
নির্দিষ্ট এলাকাগুলিতে কী কী পদক্ষেপ হবে? স্থির করতে শনিবারও একাধিক জেলার আধিকারিক বৈঠক করেছেন। সিদ্ধান্ত হয়েছে, আক্রান্তের বাড়ির মোটামুটি এক কিলোমিটার চৌহদ্দি জুড়ে বাড়তি সতর্কতা বলবৎ হবে। অযথা মেলামেশা চলবে না। অত্যন্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরের লোকের প্রবেশও যেমন নিষিদ্ধ, তেমন স্থানীয় বাসিন্দারা এলাকা ছেড়ে বাইরে যেতে পারবেন না। প্রবেশপথ এক বা একাধিক যা-ই হোক না কেন, প্রহরায় পুলিশকর্মী অথবা সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন থাকবেন। নিয়মিত সবার হেলথ চেক আপ না হলেও কারও সামান্য জ্বর অথবা অন্য সমস্যা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে টেস্ট হবে। গোটা এলাকা নিয়মিত জীবাণুমুক্ত করা হবে। গ্রামের ক্ষেত্রে নলকূপে একসঙ্গে একাধিক ব্যক্তির যাওয়া চলবে না। সম্ভব হলে স্থানীয় প্রশাসন জলের ব্যবস্থা করতে পারে। বড় বাজার বসবে না। তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের জোগান নিশ্চিত থাকবে।
এও ঠিক হয়েছে, এক বা একাধিক নোডাল অফিসার পুরো প্রক্রিয়া তদারকি করবেন, যাঁদের ফোন নম্বর জানিয়ে দেওয়া হবে প্রতিটি পরিবারকে। এলাকা বড় হলে এবং জনসংখ্যা বেশি হলে একাধিক নম্বর থাকবে হেল্পলাইন হিসেবে। কেউ অসুস্থ হলে অথবা অন্য সমস্যায় পড়লে হেল্পলাইনে যোগাযোগ করা যাবে। সাহায্যের হাত বাড়াতে তৈরি থাকবে টিম। “বিশেষ ব্যবস্থা মানে কেউ যেন না ভাবেন, সেখানকার মানুষকে বন্দি করে রাখা হয়েছে। বরং মাথায় রাখতে হবে, বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করছে সরকার,” মন্তব্য এক স্বাস্থ্যকর্তার।
সরকারি সূত্রের খবর, জেলার প্রশাসনিক বৈঠকে পরিকল্পনার রূপরেখা অনেকটা তৈরি হলেও সরকারি নির্দেশিকা এখনও হাতে আসেনি। তবে দেখা হবে, প্রশাসনিক এই কর্মকাণ্ড দেখে লাগোয়া মহল্লায় যাতে় অহেতুক আতঙ্ক না ছড়ায়। পূর্ব মেদিনীপুরের শহিদ মাতঙ্গিনী ব্লকের একটি গ্রামে এই ব্যবস্থা ইতিমধ্যে জারি হয়ে গিয়েছে। জেলার হলদিয়া ও পাশাপাশি দুই ব্লকের দু’টি গ্রাম চিহ্নিত হয়েছে। তালিকায় আছে আছে নদিয়ার তেহট্টের একটি গ্রাম। বিরূপ প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায় সরকার নামগুলি প্রকাশ্যে আনতে চাইছে না।
সরকারি কর্তাদের অভিমত, প্রক্রিয়াটি কার্যকর হলে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রাজ্যের সাফল্যের ভিত আরও পোক্ত হবে।
ছবি: পিন্টু প্রধান
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.