সুরজিৎ দেব, ডায়মন্ড হারবার: মাত্র একবছরের দাম্পত্য জীবন। কিন্তু বিয়ের পর থেকে কেউ কাউকে ছাড়া একমুহূর্তও থাকেননি। ভবিষ্যতেও থাকার কথা ভাবতেই পারেন না। তাই দু’জনই করোনা আক্রান্ত হওয়ায় সেফ হোমে থাকতে হবে শুনে ভেবেছিলেন, এবার তাঁদের আলাদা হতে হবে। কেউ হয়তো কাউকে দেখতেও পাবেন না। সেই ভয় থেকেই গ্রাম ছেড়ে পালানোর চেষ্টা করলেন করোনা আক্রান্ত দম্পতি। যদিও শেষরক্ষা হয়নি। ধরা পড়ে যান গ্রামবাসীদের হাতে। শেষপর্যন্ত সেফ হোমেই নিয়ে যাওয়া হয় তাঁদের। তবে আলাদা নয়, একসঙ্গেই রয়েছেন দম্পতি।
পাথরপ্রতিমা ব্লকের দিগম্বরপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ইন্দ্রনারায়ণপুরের অধিকারীপাড়া, উত্তরপাড়ার (Uttarpara) অনেক বাসিন্দারই করোনার (Coronavirus) প্রাথমিক উপসর্গ রয়েছে। ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকজনের শরীরে মিলেছে করোনার জীবাণু। স্বাভাবিকভাবেই আশাকর্মীরা নিয়মিত আশাকর্মীরা ওই এলাকার বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ নিচ্ছেন। সেই রকমই একদিন খোঁজ নিতে ইন্দ্রনারায়ণপুরের উত্তরপাড়ার বাসিন্দা ওই দম্পতির বাড়ি যান আশাকর্মীরা। জানতে পারেন, তাঁদের কয়েকদিন ধরেই জ্বর, সর্দিকাশি রয়েছে। এরপরই পাথরপ্রতিমার মাধবনগর হাসপাতালে র়্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষা করা হয়। রিপোর্টে জানা যায় দু’জনেই করোনা আক্রান্ত। এরপরই তাঁদের কাকদ্বীপ সেফ হোমে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতেই কোভিড পজিটিভ ওই দম্পতি ভেবে নেন, আলাদা আলাদা জায়গায় থাকতে হবে দু’জনকে। বেশ কিছুদিন ছেড়ে থাকতে হবে একে অপরকে। তখনই গ্রাম ছেড়ে পালানোর সিদ্ধান্ত নেন তাঁরা।
এবিষয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী সৈয়দ শাহেনশা আকবর বলেন, স্বাস্থ্যদপ্তর ও প্রশাসন অনেক খুঁজেও দম্পতিকে না পেয়ে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের সাহায্য চায়। মোটরবাইকে চড়ে গ্রাম ছেড়ে পালানোর সময় গ্রামবাসীদের হাতে ধরা পড়ে যান তাঁরা। ধরা পড়ার পর ওই দম্পতি গ্রামবাসীদের কাছে তাঁদের সেফ হোমে না পাঠানোর জন্য কাকুতি-মিনতি করতে থাকেন। দু’জনেই চিৎকার করে বলতে থাকেন, “কিছুতেই আলাদা থাকতে পারব না আমরা দু’জন। তাতে যা হবার হোক।” যাতে তাঁরা আর পালাতে না পারেন সেজন্য বহুমুখী ঝড় কেন্দ্রে দু’জনকে বসিয়ে রেখে বাইরে পাহারার বন্দোবস্ত করা হয়। স্বাস্থ্যকর্মীদের খবর দিলে রাতেই স্বামী-স্ত্রী দু’জনকেই নিয়ে যাওয়া হয় কাকদ্বীপ সেফ হোমে। জানা গিয়েছে, ওই দম্পতির পরিবারের সমস্ত সদস্যদের রবিবার করোনা পরীক্ষার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.