শেখর চন্দ্র, আাসানসোল: ঘটা করে বিয়ে হলেও সংসার সুখের হয় না। আজকাল আবার বেশির ভাগ দাম্পত্য কলহ চলে যাচ্ছে আদালতে। তারপরেই ডিভোর্স। বিবাহ বিচ্ছেদের মামলা বেড়েই চলেছে। দাম্পত্য সুখের গ্যারান্টি কেউ দিতে পারে না। কিন্তু বাবা বৈদ্যনাথ ধামে রয়েছে বিশেষ লোকাচার। যা অন্য কোনও মন্দিরে সচরাচর মেলে না। শিব-পার্বতীর মন্দিরে গাঁটবন্ধন বা গাঁটছড়া বাঁধলেই এড়ানো যাবে ডিভোর্স। ভক্তরা এই বিশ্বাসে শিবরাত্রিতে এই বিশেষ লোকাচার পালন করেন আসানসোলের (Asansol)জয়দুর্গার মন্দিরে।
লাল আর হলুদ কাপড়ের ফালি। মন্দির চত্বরেই পাণ্ডার তৈরি করেন গাঁটবন্ধন বা গাঁটছড়া। ৫০ মিটারের এই কাপড়ের টুকরোই গ্যারান্টি দেবে দাম্পত্য সুখের ৫০ বছরের! বাবা বৈদ্যনাথ মন্দিরের চূড়া থেকে জয়দুর্গার মন্দিরের চূড়ায় গাঁটছড়া বাঁধার রেওয়াজ রয়েছে শিবরাত্রিতে। স্বামী-স্ত্রী বা নবদম্পতি লাল-হলুদের গাঁটবন্ধন বাঁধেন। ডিভোর্স এড়ানোর মোক্ষম দাওয়াই নাকি এই গাঁটবন্ধন। পাণ্ডা স্বপন চক্রবর্তী জানান শিব-পার্বতীর মতো চির অমর বন্ধনের মনোস্কামনা যাঁরা করেন, তাঁরা বিশেষ মন্ত্রপূত গাঁটছড়া বাঁধলে তা পূরণ হয়। ভূ-ভারতে যেহেতু শিব-শক্তি একসঙ্গে কোথাও নেই, তাই বিশেষ লোকাচারটি এখানেই রয়েছে।
আসানসোল রেল ডিভিশনের আওতায় বৈদ্যনাথধাম (Baidyanathdham)। আাসনসোল থেকে ৬০ কিলোমিটার দূরে এই দেওঘর বা বৈদ্যনাথধাম একসময় বাংলার সাবেক মানভূম জেলার অর্ন্তভুক্ত। পরে তা বিহারে (বর্তমানে ঝাড়খণ্ডে)চলে যায়। তবে মন্দিরের মূল পুরোহিত ও পাণ্ডারা বংশ পরম্পরায় সব বাঙালি। শিব ও শক্তি একসঙ্গে বিরাজমান এখানে। একদিকে দ্বাদশ জোর্তিলিঙ্গের অন্যতম মনোস্কামনা লিঙ্গ আর অন্যদিকে শক্তিপীঠ, এখানে মুখোমুখি। পুরাণ মতে, সতীর হৃদয় পড়েছিল এখানে। এখানের মন্দিরটি তাই জয়-দূর্গা নামে খ্যাত। কৈলাস পর্বত থেকে জোর্তিলিঙ্গ লঙ্কায় নিয়ে যাওয়ার পথে লঙ্কেশ্বর রাবণ এখানেই নামিয়ে ফেলেছিলেন। সেই থেকে শিবলিঙ্গটি বৈদ্যনাথ নামে খ্যাত।
কলকাতা (Kolkta)থেকে ভক্তরা ট্রেনে সরাসরি চলে আসেন যশিডি (Joshidi)স্টেশনে। সেখান থেকে অটো করে কুড়ি মিনিটের পথ। পুজো দিয়ে ফিরে যান। খালি পেটে উপবাস যদি সহ্য না হয়, তবে দিনভর পেঁড়া খেয়ে পুজো করা যায় এখানে। এটাই এখানকার রীতি। দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গ ও সতীপীঠের সমন্বয়! শিবশক্তির বৈদ্যনাথ ধামে মহাধুমধামে মহা শিবরাত্রি। এই দেওঘর বৈদ্যনাথধাম মন্দিরে শিবরাত্রিতে (Mahashivratri)মহা ধুমধাম। লক্ষ লক্ষ মানুষের সমাগম হয় শনিবার। সকাল থেকেই বাবা বৈদ্যনাথের অভিষেকায়ণ শুরু হয়। দুধ-ঘি -আবির দিয়ে শুরু হয়েছে পুজো-আচ্চা। মহাযজ্ঞ চলে সারারাত ধরে। বৈদ্যনাথের বিয়েতে মূল আকর্ষণ ভূত বারাতি। সারা শহরের মানুষ এদিন ভূত সেজে ঘুরে বেড়ালেন।
এদিন পুরুষরাও পুজো দেন বাবা বৈদ্যনাথকে। বিশেষ লোকাচারে পেঁড়া আর ছোট্ট টোপর চড়িয়ে শিবরাত্রিতে হয় পুজো পুরুষদের মনোস্কামনা পূরণে। অন্যান্য মন্দিরে শিবের তত্রিশুল থাকে। কিন্তু এখানে রয়েছে পঞ্চশুল। সেই পঞ্চশুল শুক্রবার ধ্বজা বাঁধার জন্য নামানো হয়েছিল। আবার শনিবার তুলে দেওয়া হয়। অতীতে শিবরাত্রিতে এখানে ভিড়ের চোটে পদপিষ্টর ঘটনা ঘটেছে। তাই এবারে প্রশাসন সতর্ক এবং কড়া নিরাপত্তা রয়েছে মন্দিরজুড়ে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.