কল্যাণ চন্দ, বহরমপুর: ৭ দিনব্যাপী অচলাবস্থার পর অবশেষে এনআরএস সমস্যার সমাধান হল সোমবার। অবশেষে গেট খুলল রাজ্যের বন্ধ থাকা স্বাস্থ্য পরিষেবা কেন্দ্রগুলির। একদিকে চলছিল ডাক্তারদের আন্দোলন। অন্যদিকে চিকিৎসা না পেয়ে রোগীর পরিবার-পরিজনদের হাহাকার, হাসপাতালের বাইরে উৎকণ্ঠা নিয়ে ঠায় বসে থাকা মানুষগুলির ভিড়। এত সবকিছুর মাঝেই চিকিৎসক ও রোগীদের মধ্যে আস্থা ফেরাতে এক সদ্যোজাত যেন ‘দূত’ হয়ে এল।
[আরও পড়ুন: জট কাটিয়ে সচল রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিষেবা, কর্মমুখর এনআরএস-সহ রাজ্যের হাসপাতালগুলি]
রোগীর পরিবার ও চিকিৎসকদের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস বজায় রাখতেই সাধ করে সদ্যোজাতের নাম রাখা হল ‘আস্থা’। বহরমপুরের একটি বেসরকারি
হাসপাতালে ওই পুত্র শিশুর জন্ম হয়েছে। শিশুর বাবা-মায়ের দাবি, ভবিষ্যতে চিকিৎসক নিগ্রহ সমাধানের প্রতীক হবে ‘আস্থা’। সপ্তাহব্যাপী রাজ্য জুড়ে জুনিয়র
ডাক্তারদের কর্মবিরতির কারণে ভোগান্তি বেড়েছে রোগীদের। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালও তার ব্যতিক্রম নয়। জেলার অসহায় রোগীরা সরকারি
হাসপাতালের পরিষেবা না পেয়ে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা পাবেন না বলে অনেকেই বিভ্রান্ত হচ্ছেন। বহরমপুরের দম্পতি সোনিয়া খাতুন ও কুশল শরিফ সরকারি হাসপাতালের ‘মাতৃ মা’ বিভাগে পরিষেবা পাবেন না বলে, সেই জেলারই ইন্দ্রপ্রস্থের এক নার্সিংহোমে যোগাযোগ করেন। রবিবার সন্ধ্যায় ওই নার্সিংহোমে এক সদ্যোজাতের জন্ম হয়। সোনিয়া খাতুন ও কুশল শরিফ তাঁদের সন্তানের নাম রাখেন আস্থা। মেয়ে-জামাইয়ের আস্থার ওপর সায় দিয়েছেন শাশুড়িও।
এদিন সদ্যোজাতের বাবা কুশল শরিফ বলেন, “রোগী ও চিকিৎসকদের সম্পর্ক সুদৃঢ় করতেই ছেলের নাম রাখা হয়েছে ‘আস্থা’। যে কোনও চিকিৎসকই সবসময় রোগীকে বাঁচাতে চান। কিন্তু অনেকসময় শেষ মুহূর্তে নিয়ে আসা হয় রোগীদের। আবার অনেকের দু’তিন দিন পরে মৃত্যু হয়। স্বাভাবিক ভাবেই প্রিয়জন হারিয়ে শোকাহত হয়ে পড়েন আত্মীয়রা। সেই রাগ গিয়ে পড়ে ডাক্তারদের পরিষেবার উপর। সামনে যা কিছু পড়ে সেটাই তখন দোষের কারণ হয়ে যায়। তর্কাতর্কির ফলে অনেক সময় চিকিৎসকরা নিগৃহীত হন। এই বোঝাবুঝির সম্পর্ক সুদৃঢ় করতেই নিজের সন্তানের নাম রেখেছি আস্থা।”
[আরও পড়ুন: তৃণমূলের ‘ডার্টি পলিটিক্স’এ থমকে কাজ, সংসদের প্রথমদিনই অভিযোগ বাবুল সুপ্রিয়র]
আস্থা শরিফ চিকিৎসক ও রোগীর আত্মীয়দের সম্পর্কের প্রতীক মাত্র বলে জানান সদ্যোজাতের পিতা। অন্যদিকে আস্থার দিদিমা মিনকি বিবি বলেন, পাড়ার লোকের কথা শুনে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মেয়েকে নিয়ে যাননি। ওই নার্সিংহোম ১৮ হাজার টাকা নেবে বলে জানিয়েছে। যেটা তাঁর পক্ষে কষ্টসাধ্য। তবে তাঁর নাতি জন্মগ্রহণ করেছেন এক চিকিৎসকের হাতেই। নিরাপত্তা চেয়ে আন্দোলনকারী ডাক্তারদের দাবি অমূলক নয় বলেও জানান সদ্যোজাতের দিদিমা। তবে তাঁদের মতো আর্থিক সংকটে থাকা পরিবারের সরকারি হাসপাতাল ছাড়া অন্য কোনও গতি নেই বলেই জানান তিনি।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.