দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: দেখে বোঝার উপায় নেই এটা মোহনবাগান ক্লাব, না একটা পৈতের অনুষ্ঠান। বাইরে থেকে দেখলে হোঁচট খেতে হবে৷ কারণ, গোটা অনুষ্ঠানটাই মোহনবাগান অ্যাথলেটিক ক্লাবের আদলে। ঐতিহ্যপূর্ণ জয়নগরের বহড়ু-ক্ষেত্র গ্রাম পঞ্চায়েতের লাইব্রেরি পাড়ার বাসিন্দা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার আদ্যোপান্ত মোহনবাগানি। তাই তাঁদের পরিবারের ছোট সদস্যের উপনয়নের অনুষ্ঠানে এবার তারা গোটা বাড়িটিকেই মোহনবাগানের আদলে মুড়ে ফেলেছেন।
এই পরিবারের সদস্য কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায় পেশায় বেসরকারি সংস্থার ইঞ্জিনিয়ার। দাদা সজল বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একই বাড়িতে একান্নবর্তী পরিবারের মতো তাঁরা থাকেন। মোহনবাগান ক্লাবের প্রতি তাঁদের অনুরাগই এখনও এই দুই পরিবারকে এক সুতোয় বেঁধে রেখেছে। কুন্তল বন্দ্যোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী সোনালি বন্দ্যোপাধ্যায়ের একমাত্র পুত্র তমালের পৈতে অনুষ্ঠানটি ছিল একেবারে চমকে মোড়া। সপ্তম শ্রেণিতে পাঠরত এই তমালকে সবাই ‘টুবাই’ নামে চেনে। শুরুতেই বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবার পরিকল্পনা করেছিল যে, মোহনবাগানের প্রতি ভালোবাসা এবার তাঁরা ফুটিয়ে তুলবেন এই অনুষ্ঠানকে ঘিরে। শুরুতেই ফাঁপরে পড়তে হয় কুন্তল বাবুদের। ডেকরেটরকে প্যান্ডেল বানানোর বরাত দিতে গেলে পিছু হঠতে থাকেন ডেকরেটার্স মালিকরা। কারণ, তাদের কারও কাছে নেই সবুজ ও মেরুন কাপড়।
অবশেষে এক ডেকরেটার্স মালিক কলকাতা থেকে নতুন সবুজ-মেরুন কাপড় কিনে এনে তৈরি করেন বন্দ্যোপাধ্যায় বাড়ির প্যান্ডেল। ৮০০ অতিথি অভ্যাগতদের জন্য ছাপা কার্ডেও মোহনবাগানের আদল। বাড়ি থেকে প্যান্ডেল সব জায়গাতেই মোহনবাগানের লোগোও লাগিয়ে দেওয়া হয়। তমালের প্রিয় ফুটবলার ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোর ছবির সঙ্গে ও তার ছবি দেওয়া অসংখ্য ফ্লেক্সও অবশ্য ছিল। পৈতে অনুষ্ঠানের ভুরিভোজ খেতে এসে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের এহেন কাণ্ডকারখানায় রীতিমতো অবাক হয়ে যান অতিথিরা। গোটা প্যান্ডেল জুড়ে তখন বেজে চলেছে মোহনবাগানের থিম সং।
এসবের মধ্যে সবচেয়ে বড় চমক অবশ্য দিল যার পৈতে, সেই তমাল। জ্যাঠতুতো দাদা পিয়াল বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে নিয়ে সটান ঢুকে পড়ে আমন্ত্রিতদের খাওয়ার টেবিলের সামনে। হাতে ফুটবল,পায়ে বুট আর পরনে জার্সি। খেলোয়াড়ের ভঙ্গিতে সে সবার সঙ্গে কুশল বিনিময় করে। পরে ছোট্ট তমাল হাসিমুখে জানায়,”আমি মোহনবাগান অ্যাথলেটিক ক্লাবকে জীবন দিয়ে ভালবাসি। পড়াশোনার ফাঁকে যখনই সময় পাই, ফুটবল নিয়ে নেমে পড়ি মাঠে। সেই জন্য আমার পরিবারও আমাকে ভালবাসে।আমার পৈতে অনুষ্ঠানে এত সুন্দর ভাবে মোহনবাগান করায় আমি খুব আনন্দ পেয়েছি।” এ বিষয়ে কুন্তল বাবু বলেন,”আমার স্ত্রী সোনালির পরিবার বহু বছরের মোহনবাগান ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত। আমি এবং দাদা দু’জন এই শতবর্ষ পুরনো ঐতিহ্যপূর্ণ ক্লাবের সদস্য। তাই যখন সুযোগ পাই তখন সপরিবারে চলে যাই ময়দানে ফুটবল দেখতে। যে ক্লাবকে আমরা এতটাই ভালবাসি, সেই ক্লাবকে আমরা আমাদের ছেলের পৈতে অনুষ্ঠানের প্যান্ডেল করিয়ে সাজিয়ে তুলেছি সবাইকে আনন্দ দিতে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.