বিপ্লবচন্দ্র দত্ত, কৃষ্ণনগর: টোপরের বদলে হেলমেট! হ্যাঁ, একঝলক দেখে চমকে যেতে পারেন আপনিও, যে সে কী নবদম্পতি মাথায় হেলমেট পরে কেন? আসলে নবদম্পতির অভিনব এই প্রয়াসের মূল উদ্দেশ্য একটাই। “সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ” সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করাl যে উদ্যেগে সাধুবাদ জানিয়েছেন দম্পতি ঘনিষ্ঠ থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা।
মোটরবাইক চালিয়ে রীতিমতো বিয়ের ধুতি-পাঞ্জাবি পড়ে বর গেলেন বিয়ে করতেl তবে মাথায় বিয়ের টোপরের বদলে ছিল হেলমেট। শুধু পাত্রই নন, বরযাত্রীরাও গিয়েছিলেন মাথায় হেলমেট পড়ে মোটরবাইক চালিয়ে। রাতের লগ্নে বিয়ে সেরে বৃহস্পতিবার বিকেলে নিজের মোটর বাইকের পিছনে বসিয়ে বাড়িতে নতুন বউ নিয়ে এলেন পাপাই ঘোষ। তাই নতুন বউকেও টোপরের বদলে পড়তে হয়েছে হেলমেটl যদিও নতুন ধুতি-পাঞ্জাবি পড়া মোটর বাইকচালককে দেখে পাত্র বলে মনে হলেও টোপরের বদলে হেলমেট দেখে কিছুটা হলেও ঘাবড়ে গিয়েছিলেন কনেপক্ষ। অবাক হয়েছিলেন পাত্রী জয়িতা দাস ঘোষও। কিন্তু কী আর করা! অবশেষে কিছুটা ধাতস্থ হয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসলেন কনে। পরে অবশ্য বরের কাছ থেকে সব কথা জানার পর নিজেই মোটরবাইকের পিছনে বসে শ্বশুর বাড়িতে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন পাত্রী।
জয়িতা এবং পাপাই দু’জনেরই বাড়ি নদিয়ার শান্তিপুরে। মোটর বাইক চালক বর এবং মোটরবাইক বাহিনী বরযাত্রীদের দেখে হেসেই লুটোপুটি খেয়েছেন বিয়ে বাড়ির অনেকেই। বুধবার রাতে ছিল বিয়ের লগ্ন। শান্তিপুরের সুত্রাগড়ের তুলসী মন্দিরের কাছে পাপাইদের বাড়ি। আড়াই কিলোমিটার দূরে কুঠিরপাড়াতে বাড়ি জয়িতারl রাত আটটার পর পাপাই ও তার বন্ধু-বান্ধবেরা প্রত্যেকে মাথায় হেলমেট পড়ে রওনা দিয়েছিলেন বিয়ে বাড়ির উদ্দেশে। দেখাশোনা করে সামাজিক মতেই ঠিক হয়েছিল বিয়ে।
পেশায় কাপড়ের ব্যবসায়ী পাপাই ঘোষ জানিয়েছেন, “মোটরবাইক চালিয়ে বিয়ে করতে যাবার বিষয়টা আমরা সারপ্রাইজ দিয়েছি। জয়িতাকে পর্যন্ত আগাম জানানো হয়নি। আসলে ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’ সম্পর্কে মানুষের কাছে একটা বার্তা পৌঁছে দেওয়াই ছিল আমাদের মূল উদ্দেশ্যl অনেক মানুষ দেখেছেন। জয়িতাদের বাড়ির লোকজনকেও জানিয়েছি, অবশ্যই মাথায় হেলমেট পড়ে মোটরবাইক চালাতে হবে। তবেই এড়ানো যাবে দুর্ঘটনা।”
আর নতুন বউ জয়িতা কী বলছেন? “আমি ভেবেছিলাম, ও গাড়িতে করেই বিয়ে করতে আসবে। মাথায় হেলমেট পড়ে মোটরবাইক চালিয়ে বিয়ে করতে আসবে, সেটা আমাকেও আগে বলেনি। কিছুটা অবাকই হয়েছিলাম। পরে অবশ্য আমি ওর সঙ্গেই মাথায় হেলমেট পড়ে বিয়ের পরের দিন বৃহস্পতিবার শ্বশুর বাড়িতে এসেছি। শ্বশুর বাড়ির গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আবার হেলমেট খুলে পড়ে নিয়েছি বিয়ের টোপর। আমিও একমত, দুর্ঘটনা এড়াতে মাথায় হেলমেট পড়েই মোটরবাইক চালানো উচিত।”
আসলে পাপাই ও তার বন্ধুরা কয়েকজন মিলে দীর্ঘদিন ধরেই সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফের প্রচার করে আসছেন। তারা মূলত ‘বাইক বাহিনী’ নামেই পরিচিত এলাকায়। রয়েছে তাদের ‘ক্রিয়েটিভ বয়েজ’ নামে একটি ক্লাবও। পাপাইয়ের কথায়, “এর আগে আমরা নিজেরা তো বটেই, শান্তিপুর থানার পুলিশের সঙ্গেও ‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’-এর প্রচার কর্মসূচী পালন করেছিলাম। তাই বিয়ের সময়ও প্রচারের ভাবনা থেকেই বিষয়টি মাথায় আসে।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.