জ্যোতি চক্রবর্তী বনগাঁ: দোকানের সামনে ছোট্ট ঝুড়ি (basket)। তাতে রয়েছে কেক, বিস্কুট, লেবু থেকে আজকের নিত্যপ্রয়োজনীয় মাস্ক – আরও কত কী। সেই ‘খুশির ঝুড়ি’র দিকে হাত বাড়াচ্ছেন ভবঘুরে, অভাবী, ক্ষুধার্ত মানুষজন। ঝুড়ি থেকে খাবার নিয়ে খাচ্ছেন নিখরচায়, মেটাচ্ছেন খিদের জ্বালা। এমনই মানবিক ছবি দেখা গেল বনগাঁর (Bongaon)চম্পক সরণি মোড়ে। অতিমারীর সংকটে রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো মানুষগুলোর পেট ভরাতে এই ‘খুশির ঝুড়ি’ নিয়ে হাজির দোকানি দম্পতি। নিজেদের দোকান চালানোর পাশাপাশি দরিদ্র-নারায়ণ সেবা করে চলেছেন তাঁরা।
‘খুশির ঝুড়ি’ নিয়ে খোঁজখবর করতে গিয়ে জানা গেল, পশ্চিম পাড়ার বাসিন্দা দম্পতি সুব্রত নাথ ও প্রিয়া নাথ। চম্পক সরণি মোড়ে তাঁদের একটি চায়ের দোকান রয়েছে। বছর ১৫ ধরে দোকানটি চালান তাঁরা। আগে প্রিয়াদেবী একাই দোকান সামলাতেন। করোনা পরিস্থিতিতে লকডাউনের (Lockdown) পর থেকে সুব্রতবাবু দোকানের দায়িত্ব নিয়েছেন। সুব্রতবাবু বলছেন, স্ত্রী প্রিয়া অতীতে অনেক অভাব-অনটনের মধ্যে কাটিয়েছেন। তাই এর যন্ত্রণা সম্যক উপলব্ধি করতে পারেন। তাঁর ইচ্ছাতেই এই ‘খুশির ঝুড়ি’র উদ্যোগ।
নিজেদের চায়ের দোকানের সামনের ঝুড়িতে বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী (Food) রাখেন তাঁরা। কোনও ক্ষুধার্ত ভ্যানচালক,পথচারী, কিংবা কোনও ভবঘুরে দোকানে এসে চা খেতে চাইলে তাঁদের বিনা পয়সায় ওই ঝুড়ি থেকে তাদের পছন্দমতো খাবার তুলে নিতে বলা হয়। অনেকেই সেখানে এসে দাঁড়িয়ে থাকলেও মুখ ফুটে খিদের কথা বলতে পারেন না। তাঁদের মুখ দেখেই বুঝে নেন সুব্রতবাবু। ঝুড়ি থেকে খাবার তুলে দেন। ফি-দিন এভাবে অন্তত কুড়িজন ক্ষুধার্ত (Hungry) মানুষের পেট ভরিয়ে থাকেন সুব্রত ও প্রিয়া। সুব্রতবাবুর কথায়, “অভাবী, ক্ষুধার্ত মানুষ যখন সামান্য কিছু খেয়েই খুশি হন, তাঁদের চোখ দেখে তৃপ্তি অনুভব করি। তাই ওই ঝুড়িটির নাম রেখেছি ‘খুশির ঝুড়ি।”
দোকানের সামান্য আয় থেকে কীভাবে চলে এমন সাধু উদ্যোগ? সুব্রতবাবু জানালেন, “দোকানে এসে পোস্টার দেখে অনেক ক্রেতাই খুশির ঝুড়িতে খাদ্যসামগ্রী কিনে রেখে যান। বেশ কিছু নিয়মিত খদ্দের আছেন, যাঁরা চা খেতে এলে ওই ঝুড়িতে খাবার রাখেন। আর কয়েকজন ভবঘুরের প্রাতঃরাশের ব্যবস্থা সুব্রতবাবু নিজেই করেন।
মঙ্গলবার দুপুরে চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ নিয়ে ওই দোকানে এসেছিলেন বৃদ্ধ ভ্যানচালক রাধাকান্ত। তাঁর কাছে টাকা কম থাকায় শুধুমাত্র চা চেয়েছিলেন। সুব্রতবাবু তাঁকে দেখেই বুঝতে পারেন যে তিনি ক্ষুধার্ত এবং ‘খুশির ঝুড়ি’ থেকে এক প্যাকেট বিস্কুট তুলে নিতে বলেন। ভ্যানচালককে মাস্কও পরিয়ে দেন তিনি। ঝুড়ি থেকে এক প্যাকেট বিস্কুট নিয়ে দোকানিকে আশীর্বাদ করলেন বৃদ্ধ ।
স্থানীয় বাসিন্দা কিশোর ঘোষের কথায়, “আমাদের এলাকায় এমন অভিনব উদ্যোগ নিয়ে ক্ষুধার্ত মানুষজনকে সামান্য খাবার তুলে দেয়ার ঘটনা আমাদের গর্বিত করে।”
নাথ দম্পতির নিজেদের বাড়ি নেই, থাকেন ভাড়াবাড়িতে। ছোট্ট চায়ের দোকান চালিয়ে কোনওরকমে সংসার চলে। কিন্তু তাতে কোনও দুঃখই নেই। ‘খুশির ঝুড়ি’র খুশিতেই তাঁদের দিব্যি দিন কেটে যায় আনন্দে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.