ফাইল ফটো
স্টাফ রিপোর্টার: ভোটের বাকি আরও পাঁচ দফা। তার মধ্যেই দ্রুত গতিতে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। এমন পরিস্থিতিতে কোভিডের (COVID) দ্বিতীয় ঢেউ সামাল দিতে ফের কোমর বেঁধে নামতে চলেছে রাজ্য সরকার। গত বছর করোনা যখন সব থেকে ভয়ংকর আকার নিয়েছিল, তখন স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে যে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছিল, আবার তেমনই সব ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। করোনার ভ্যাকসিন না পেয়ে এদিন আবার কেন্দ্রকে তুলোধনা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তিনি বলেন, “মানুষকে বিনামূল্যে টিকা দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু পেলাম না। টাকাটা আমরাই দিতাম। কী কারণ, আমরা খুঁজছি। একটাই কোম্পানি কেন বরাত পাবে?” নির্বাচনী প্রচারে আসা প্রধানমন্ত্রী-সহ বিজেপি (BJP) নেতাদের একহাত নিয়ে মমতা বলেন, “যখন করোনা হয়েছিল, তখন কোথায় ছিলেন? আমি একা একা ঘুরে বেড়াতাম। মানুষকে সাহায্য করতাম। তখন কাউকে দেখা যায়নি। ওষুধটা পর্যন্ত পাইনি আমরা।”
রাজ্যে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়লেও দেশের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় তা কমই রয়েছে। তবু পরিস্থিতি বিচার করে আগামী ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই পুরনো ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার লক্ষ্য নিয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তর। ভোট প্রচার থেকে সভা, কোথাও সেভাবে করোনা বিধি তেমনভাবে মানা হচ্ছে না বলে উদ্বিগ্ন চিকিৎসক মহলও। স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর, রাজ্যের যে যে জেলাতে তিন পর্বে ভোট মিটে গিয়েছে, সেখানে বাড়তি নজর দেওয়া হচ্ছে। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) ভিডিও বৈঠক করেন দেশের করোনাপ্রবণ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে। রাজ্য থেকে সেই বৈঠকে প্রতিনিধি হিসাবে ছিলেন মুখ্যসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। আগামী সোমবার তিনি ভোট মিটে যাওয়া জেলার ডিএম, এসপি, সিএমওএইচ-দের সঙ্গে বৈঠকে পরিস্থিতি পর্যালোচনা করতে পারেন।
গত বছর ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই করোনা কড়া নাড়তে শুরু করে রাজ্যে। মার্চের মাঝামাঝি স্পষ্ট হয়ে যায়, পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। ২৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি গোটা দেশে লকডাউন ঘোষণা করেন। রাজ্যে ক্রমশ বাড়তে থাকে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। স্বাস্থ্য দপ্তরের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত বছরের অক্টোবর মাসে রাজ্যে সর্বাধিক হয় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। তখন তা প্রায় ৩৭ হাজারে পৌঁছেছিল। যদিও তার আগে থেকেই স্বাস্থ্য দপ্তর করোনা মোকাবিলায় নেমে পড়ায় পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যায়নি। এবারও করোনার রেখচিত্র যেভাবে ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে, তা দেখে আগেভাগেই সামাল দেওয়ার যাবতীয় ব্যবস্থা প্রস্তুত করে ফেলার পথেই হাঁটছে স্বাস্থ্য দপ্তর। ইতিমধ্যেই সরকারি হাসপাতালগুলিতে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে। একাধিক বৈঠক করা হয়েছে বেসরকারি নার্সিংহোমগুলির সঙ্গেও। সেখানেও শয্যাসংখ্যা বাড়ছে। কলকাতায় প্রায় ১৩ হাজার ৫৮৮ শয্যা করা হয়েছিল করোনা আক্রান্তদের জন্য। পরে তা কমে প্রায় ৯০০ হয়। ফের তা বাড়ানো হয়েছে। সেফ হোম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। সেগুলিও নতুন করে পুরোদমে চালু করা হচ্ছে। ফের পুরোদমে চালু হয়েছে টেলিমেডিসিন, কল সেন্টার ও অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবাও। করোনা পরীক্ষার সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। কেন্দ্রীয় গাইডলাইন মেনে প্রায় ৭০ শতাংশ পরীক্ষাই আরটিপিসিআরে করা হচ্ছে। স্যানিটাইজ করা, মাস্ক ব্যবহার-সহ যা যা ব্যবস্থা নেওয়া দরকার, সবই করা হচ্ছে বলে স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রে খবর।
একইসঙ্গে সরকারি দপ্তরগুলিতে ৫০ শতাংশ হাজিরার নির্দেশিকা আগে থেকেই বলবৎ রয়েছে। কাজের প্রয়োজনে সামান্য কিছু পরিবর্তন করা হলেও ফের সেই নির্দেশিকা অনুযায়ী দপ্তরগুলিকে রোস্টার ব্যবস্থা চালু করতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী জানিয়েছেন, হাওড়ার রবার পার্ক, উত্তর ২৪ পরগনার সিএনসিআই, দক্ষিণ কলকাতার গীতাঞ্জলি স্পোর্টস কমপ্লেক্সে সেফ হোম চালু হবে। দ্রুত যোগাযোগে স্বাস্থ্য ভবনের সঙ্গে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া এবং কলকাতায় কোভিড হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। তবে করোনা ফের থাবা বসালেও রাজ্যে টিকাকরণ চলছে জোরকদমে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এখনও পর্যন্ত প্রায় ৭০ লাখেরও বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন প্রায় সাড়ে তিন লাখেরও বেশি টিকাকরণ হচ্ছে। সেই সংখ্যা পাঁচ লাখে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নিয়েছে স্বাস্থ্য দপ্তর। আরও বেশি মানুষ যাতে টিকা নেন, তার জন্য প্রচারেও জোর দিচ্ছে স্বাস্থ্য দপ্তর। সেক্ষেত্রে যত মানুষ প্রতিষেধক নেবেন, তত করোনা আক্রান্তের সংখ্যাও কম হবে। সেক্ষেত্রে করোনা (Coronavirus) হলেও তার প্রভাব পড়বে অনেকটাই কম। কম হবে মৃতু্যর সংখ্যাও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.