দেবব্রত মণ্ডল, বারুইপুর: আমফানের তাণ্ডবে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সুন্দরবন। ফলে একটা বিরাট অংশের মানুষের কাছে এখন ভরসা ত্রাণ। আর এতেই করোনা সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কারণ, ত্রাণ নিতে জটলা করছেন শতাধিক মানুষ। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন পরিযায়ী শ্রমিকরাও। সামাজিক দূরত্ব তো দূর-অস্ত, মাস্কটুকুও নেই কারও মুখে!
সুপার সাইক্লোন আমফান আছড়ে পড়ার আগেই সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকা থেকে বহু মানুষকে সরাতে শুরু করেছিল জেলাপ্রশাসন। বহু মানুষ স্বেচ্ছায় ঠাঁই নিয়েছিল পাকা বাড়ি ও স্কুলগুলোতে। সেই পরিস্থিতিতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। তখনই সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা করেছিলেন বহু মানুষ। সেই আশঙ্কাই আরও প্রবল হল। কারণ, সুন্দরবন এলাকার বিভিন্ন ত্রাণ শিবির গুলিতে গেলে দেখা যাচ্ছে শতাধিক মানুষের ভিড়। দুপুরের থালার গায়ে থালা ঠেকিয়ে ভুরিভোজ সারছেন সকলে। এমনকি নদীর পাড়ে যেখানে ত্রাণ দেওয়া হচ্ছে সেখানেও ভিড় উপচে পড়ছে। রাঙাবেলিয়া, পাথরপ্রতিমা, কুলতলি, গোসাবা সর্বত্র একই ছবি। ত্রাণ শিবিরে আশ্রয় নেওয়া এই মানুষদের মধ্যে রয়েছেন পরিযায়ী শ্রমিকরাও। যাদের কেউ ফিরেছেন মহারাষ্ট্র থেকে কেউ আবার দিল্লি থেকে। এলাকায় ফিরে কোয়ারেন্টাইনে থাকার কথা থাকলেও, আমফানের দাপটে ঠাঁই হয়েছে ত্রাণ শিবিরে। কেউ আবার নিজের উদ্যোগে ফিরেছেন বলে সরকারের কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করছেন না! তাঁদের কথায়, সরকার তাঁদের ফেরায়নি, ফিরেছে নিজেদের টাকা খরচা করে তাই সরকারের কোন নিয়ম তাঁরা মানতে রাজি নন।
এ বিষয়ে মোল্লাখালির বাদল মণ্ডল বলেন, “মানুষের খাওয়া জুটছে না। সরকারের ত্রাণ ও সেইভাবে পৌঁছাচ্ছে না। এলাকায় নদী বাঁধ ভেঙে জল ডুকছে। মানুষ ভুলেছে করোনাকে। তাই সব মানুষ একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন ত্রাণ নিতে। এইভাবে চলতে থাকলে আগামী দিনে সুন্দরবনের দ্বীপে করোনা ব্যাপক আকার ধারণ করবে।সরকারি তরফে প্রথম দিকে সামাজিক দূরত্ব রেখে সমস্ত মানুষকে ত্রাণশিবিরে রাখার ব্যবস্থা হয়েছিল। মুখে দেওয়া হয়েছিল মাস্ক। স্যানিটাইজেশনও করা হয়েছিল। কিন্তু ঝড় মিটে যেতেই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়ে এখন সেসব আর মানুষের মাথায় নেই।” এবিষয়ে গোসাবার বিধায়ক জয়ন্ত নস্কর বলেন, “উপায় নেই। মানুষ কী করবে বুঝে উঠতে পারছেন না। বহু শ্রমিক বিভিন্ন রাজ্য থেকে বাড়িতে চলে এসেছে তাঁরাও ঘুরে বেড়াচ্ছে চারিদিকে।” এই কারণেই সুন্দরবনের দ্বীপগুলিতে করোনা সংক্রমণ ব্যাপক হারে বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.