সংগ্রাম সিংহরায়, শিলিগুড়ি: পাড়াতেই কোয়ারেন্টাইন সেন্টার। মাঝেমধ্যেই হুঁশ করে বেরিয়ে যাচ্ছে সরকারি গাড়ি। আবার কোনও সময় ঢুকছে অ্যাম্বুল্যান্স। আর এতেই করোনা আতঙ্ক যেন চেপে বসেছে শিলিগুড়ির খড়িবাড়ির বাতাসির দুর্গামণ্ডপ এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে। যদিও পাঁচিলে ঘেরা কোয়ারেন্টাইন সেন্টার থেকে কার্যত বিচ্ছিন্নই এই এলাকা।
উঁচু দেয়ালে ঘেরা প্রায় ন’বিঘা জমি। তার ঠিক মাঝখানে শুরু না হওয়া আইটিআই কলেজের ক্যাম্পাসেই কোয়ারেন্টাইন সেন্টার। একপাশে দুর্গামণ্ডপ। অন্যপাশে বলাইঝোড়া। সামনে দিয়ে এঁকেবেঁকে চলে যাওয়া রাস্তা গ্রামের ভিতরে চলে গিয়েছে। অন্যপাশে সোজা গেলে বাতাসি বাজার। এমনিতে লকডাউনের ফলে লোকজন কম থাকাই স্বাভাবিক। কিন্তু এলাকায় পৌঁছলে মালুম হবে যে স্বাভাবিকের চেয়েও বেশিই থমথমে চারপাশ। দু’চারটে ঘুঘু, চড়াই, শালিক, ময়না, রাস্তার কয়েকটি কুকুর ছাড়া এলাকা ঘুরে প্রকাশ্যে কোনও মানুষ দেখা যাবে না। শিলিগুড়ির মহকুমাশাসক সুমন্ত সহায় অবশ্য জানিয়েছেন, আতঙ্ক সব জায়গাতেই আছে। ওই এলাকায় কোনও সমস্যার খবর নেই। নির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ থাকলে তা নিয়ে মহকুমা প্রশাসন পদক্ষেপ করবে।
এই মুহূর্তে জনা কুড়ি আবাসিক রয়েছেন ওই কোয়ারেন্টাইন সেন্টারে। দু’দিন আগেই একদল কোয়ারেন্টাইন পিরিয়ড শেষ করে চলে গিয়েছেন। এমনটাই চলছে গত প্রায় এক মাস ধরে। এখনও পর্যন্ত আশঙ্কার কিছু দেখা যায়নি। তবুও মনকে বোঝাবে কে? পারতপক্ষে কোয়ারেন্টাইন সেন্টারটির ধারে কাছে যাচ্ছেন না এলাকার বাসিন্দারা। এমনিতেও এখানে যখন প্রথম সেন্টার করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, তারপর গ্রামের একটা বড় অংশের মানুষ আপত্তি জানিয়েছিলেন। যদিও তা ধোঁপে টেকেনি। এরপর ফের আপত্তি ওঠে। স্থানীয় আশা কর্মীদের কোয়ারেন্টাইন সেন্টারের ডিউটির পাশাপাশি তাঁদেরই বাইরে ব্যবহার করা হচ্ছিল। ফলে কোনও আক্রান্ত কোয়ারেন্টাইনে থাকলে তা থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল। এ বিষয়ে বিজেপির শিলিগুড়ি সাংগঠনিক জেলা যুব সভাপতি কাঞ্চন দেবনাথের নেতৃত্বে ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, পরে ওই আশাকর্মীদের কোয়ারেন্টাইনের ডিউটি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য নিতাই মণ্ডল জানিয়েছেন, প্রথমদিকে কিছু বাসিন্দা আপত্তি জানালেও পরে তাঁরা বাধ্য হয়ে মেনে নেন। পঞ্চায়েতে তরফেও মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে চাপা আতঙ্ক একটা আছেই। কাঞ্চনবাবু জানান, মানুষের মধ্যে এখনও ভীতি রয়েছে। তাই অনেকেই ঘর ছেড়ে বের হচ্ছেন না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.