শ্রীকান্ত পাত্র, ঘাটাল: করোনার (Coronavirus) কুনজর পড়ল পারিবারিক দুর্গাপুজোয় (Durga Puja)। বলা ভাল, করোনা আতঙ্কে এক ঝটকায় রীতিনীতি বদলে ফেললেন চন্দ্রকোনার জগন্নাথপুরের চৌধুরি পরিবার। তিনশো বছরেরও বেশি সময় ধরে যে দুর্গাপুজো সাড়ম্বরে চলে আসছিল, তা এবার উধাও।
এই চৌধুরি পরিবার কলকাতার বিখ্যাত সাবর্ণ চৌধুরি পরিবারের বংশধর। সাবর্ণ চৌধুরি পরিবারেই বংশধর রামকলি চৌধুরি ছিলেন কলকাতার বড় ব্যবসায়ী। মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনায় ছিল তাঁর প্রচুর জমিজমা ছিল। যার দেখভাল করতে প্রায়ই তিনি মেদিনীপুরে যেতেন। জগন্নাথপুর গ্রামেও যাওয়া-আসা ছিল। সেখানে একটি অস্থায়ী বাড়িও নির্মাণ করাচ্ছিলেন তিনি। কথিত আছে, ধর্মপ্রাণ রামকলিবাবু মা দুর্গার স্বপ্নাদেশে ইংরাজি ১৭১৫ সালে জগন্নাথপুর গ্রামে শুরু করেছিলেন দুর্গাপুজো। কলকাতায় সাবর্ণ চৌধুরি পরিবারের রীতিনীতি মেনেই সেখানে পুজো শুরু করেন। আজও সাবর্ণ চৌধুরি পরিবারের আদলে জগন্নাথপুর গ্রামে মুর্তি নির্মাণ করে দুর্গাপুজা চলে আসছে। গত বছর পর্যন্তও নিখুঁত নিয়মে বাঁধা ছিল দুর্গাপুজো। প্রথা মেনে নবমীর দিন গ্রামের মানুষদের নিমন্ত্রণ করে পাত পেড়ে খাওয়ানো হত। করোনা ত্রাসে এ বছর তা উধাও। চৌধুরি পরিবারেরই নয় নয় করে ১০০ জন সদস্য রয়েছেন। আত্মীয়দেরও নিমন্ত্রণ করা হত এই দুর্গাপুজোয়। তাও এবার হচ্ছে না বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে পরিবারের পক্ষ থেকে। দূর সম্পর্কের আত্মীয়দের নিমন্ত্রণই করা হবে না বলে জানিয়ে দিয়েছেন পরিবারের বরিষ্ট সদস্য রামঅরুণ চৌধুরি।
পরিবারের সদস্যরা যে একসঙ্গে দালানে বসে পুষ্পাঞ্জলি দিতেন, পাতপেড়ে খেতেন তাও এবার বাতিল করা হয়েছে। দু’দলে ভাগ করে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, দুর্গাপুজোয় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা পরিবারের সদস্যরা প্রতি বছরই মিলিত হতেন। স্রেফ করোনা আতঙ্কে অনেকে আসতে পারবেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। প্রায় তিনশো বছরের প্রথা ভাঙতে মন টানতে চাইছে না চৌধুরি পরিবারের সদস্যদের। কিন্তু বিধি বাম। চৌধুরি পরিবারের সবচেয়ে বরিষ্ট সদস্য রামসুন্দর চৌধুরি, রামবিনয় চৌধুরি, রামঅরুণ চৌধুরি, রামভজন চৌধুরিরা ভীষণই ভেঙে পড়েছেন। রামঅরুণ চৌধুরি বলেন, “তিনশো বছরেরও বেশি সময়কাল ধরে আমাদের পরিবারে প্রথা মেনে পুজো হয়ে আসছে। কিন্তু পারিবারিক প্রথাগুলো এবছরই এই করোনা ত্রাসে পরিবর্তন করতে হয়েছে । পারিবারিক প্রথা ভাঙতে খুব কষ্ট হচ্ছে আমাদের। তবে মায়ের পুজোয় কোনও হেরফের হবে না। নিখুঁত নিয়ম মেনে হবে মায়ের পুজো। স্থায়ী দুর্গা দালানে কোনও ভিড় করা হবে না। যাঁরা আসবেন তাঁদের সবাইকে মাস্ক ও স্যানিটাইজ ব্যবহার করতে হবে।” করোনার কারণে বদলে গিয়েছে দুর্গা পুজোর চালচিত্রও।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.