ধীমান রায়, গুসকরা: করোনা ভাইরাসের প্রকোপে ইটালিতে এখন ভয়াবহ অবস্থা। ভারতেও দ্রুত হারে বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। এই পরিস্থিতিতে পূর্ব বর্ধমান জেলার গুসকরায় তিন ইতালিয় পর্যটককে নিয়ে বৃহস্পতিবার ব্যাপক চাঞ্চল্য ছড়াল। গুসকরা ফাঁড়ির পুলিশের কাছে এদিন সকালে খবর আসে গুসকরা পুরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ড এলাকায় এসেছেন ইটালির তিনজন নাগরিক। খবর পেয়েই পুলিশ ও ব্লক প্রশাসনের প্রতিনিধিরা সেখানে যান। তাঁরা ওই তিন ইতালিয়ান মহিলা ও একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মকর্তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তিন পর্যটকের পাসপোর্ট ও ভিসা খতিয়ে দেখা হয়। পুলিশ প্রশাসনের প্রতিনিধিরা মুখে মাস্ক ও হাতে গ্লাভস পরে সতর্কতার সঙ্গে তাঁদের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন। ওই তিন মহিলাকেও মুখে গ্লাভস পরার নির্দেশও দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার সকালের দিকে স্থানীয় এলাকা থেকে গুসকরা পুলিশ ফাঁড়িতে খবর আসে, একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার প্রতিনিধি তিন ইটালিয় মহিলাকে গুসকরা পুরসভা এলাকার ৪ নম্বর ওয়ার্ডে দেখা গিয়েছে। আদিবাসী সম্প্রদায়ের মহিলাদের দ্বারা পরিচালিত সংস্থার একটি হস্তশিল্পের প্রকল্পের কাজ দেখতে এসেছেন তাঁরা। খবর পাওয়া মাত্রই সেখানে পুলিশ ও প্রশাসনের আধিকারিকরা যান। তারপর ওই তিন ইটালিয়ান মহিলার পরিচয় জানতে চান। পাসপোর্ট ও ভিসা দেখতে চাওয়া হয়। জানা যায়, তিনজনের নাম ফ্রাঙ্কা কাসেতি, এনটুনেল্লা ব্রাজেরিয়া ও ফ্রানচেস্কা কারোজা।
প্রশাসনের জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা জানান গত ২৭ ফেব্রুয়ারি তাঁরা ইটালি থেকে দমদম বিমানবন্দরে নামেন। সেখানেই তাঁদের করোনা ভাইরাসের জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। ছাড়পত্র মেলার পর তাঁরা ঝাড়খণ্ডে চলে যান। বুধবার বর্ধমানে আসার পর সেখানকার একটি হোটেলে রাত্রিবাস করেন তাঁরা। এদিন তাঁরা প্রথমে আউশগ্রামের একপাড়াডাঙা এলাকায় একটি হোমে পরিদর্শনে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে গুসকরায় আসেন। তারপর তাঁরা ভাতারের জামবনিতে আদিবাসীদের আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হয়ে যোগ দিতে যান। জানা যায় অনুষ্ঠানে ওই তিন বিদেশিনীকে বরণ করে নেওয়ার সময়েই ভাতারের বিডিও শুভ্র চট্টোপাধ্যায় ও ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সংঘমিত্রা ভৌমিক সেখানে যান। তখনই অনুষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়। ওই সংস্থার পক্ষে শর্মিষ্ঠা সিংহরায় বলেন, “যদিও করোনা নিয়ে প্রচণ্ড আতঙ্ক চলছে। তা বলে এই আতঙ্কের জন্য তো কাজ বন্ধ হয়ে যেতে পারে না। তিন বিদেশিনী বিমানবন্দরে নামার পর তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হয়েছিল। করোনার প্রমাণ না পাওয়ায় তাঁদের ছাড়া হয়। তাই তাঁরা নিজেদের কাজে আসেন।”
জানা গিয়েছে, এদিন তিন মহিলা তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রমাণপত্র দেখান। যদিও তাঁদের নির্দেশ দেওয়া হয় জেলা ছেড়ে চলে যেতে। পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসক বিজয়ভারতী বলেন, “আমরা খবর পাই ইটালির তিনজন বাসিন্দা গুসকরা ও ভাতার এলাকায় কিছু সমাজসেবামূলক কাজে এসেছেন। সেখানে প্রতিনিধি পাঠানো হয়েছিল। তাঁদের বলে দেওয়া হয়েছে এখন এই ধরনের কাজ করা যাবে না। তারপর তাঁরা জেলা থেকে চলে গিয়েছেন।” ওই তিনজন মহিলাকে পুলিশ গুসকরা মানকর রোড দিয়ে এসকর্ট করে ২ নম্বর জাতীয় সড়কে এগিয়ে দিয়ে আসেন। জানা যায় তাঁরা ফের ঝাড়খণ্ডের দিকে রওনা দিয়েছেন।
ছবি: জয়ন্ত দাস।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.