অভিরূপ দাস: “দাদা চার পাতা ভিটামিন সি দেবেন।” এমন অর্ডার শুনে শুনে কান পচে গিয়েছে দোকানির। কেউ বা গোটা জিঙ্ক ট্যাবলেটের বাক্সটাই বগলদাবা করে বাড়ি ফিরছেন। এদিকে আসল করোনা রোগী ওষুধ পাচ্ছেন না। কোভিড আবহে এমন ছবি গা সওয়া।
করোনার বাজারে প্রতিটি ওষুধের দোকান থেকে কর্পুরের মতো উবে যাচ্ছে ভিটামিন সি, জিঙ্ক, মাল্টি ভিটামিন ট্যাবলেট। করোনা না হলেও মুড়ি মুড়কির মতো এই ওষুধ খাচ্ছেন আমজনতা। কারণ? করোনা ঠেকাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে নানা পুষ্টিকর খাবারের তালিকা দেওয়া হয়েছে। সেখানেই বলা হয়েছে শরীরে জিঙ্ক বা দস্তার পরিমাণ নিয়ে সচেতন হতে হবে। কারণ রক্তে জিঙ্কের পরিমাণ কম থাকলে করোনা সংক্রমণ মারাত্মক আকার নিতে পারে। যা দেখেশুনে আতঙ্কিত সকলে। জনস্বাস্থ্য আধিকারিক অনির্বাণ দলুই জানিয়েছেন, করোনা না হলেও মুড়ি মুড়কির মতো এই ট্যাবলেট খাচ্ছেন অনেকেই। অগুনতি মানুষ বাড়িতে এই ধরণের ট্যাবলেট মজুত করে রেখেছেন। যার ফলে বিপদে পরেছেন করোনা রোগীরা।
শহরের অধিকাংশ ওষুধের দোকানে গত ৪৮ ঘন্টা ধরে মিলছে না জিঙ্ক, মাল্টি ভিটামিন কিম্বা ভিটামিন সি ট্যাবলেট। দোকানিদের বক্তব্য, আমরা নিরুপায়। কোনও কোনও ক্রেতা গোটা বাক্স কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। তা ঠেকাতেই এবার নয়া নির্দেশিকা জারি করতে চলেছে রাজ্যের স্বাস্থ্যদপ্তর। প্রেসক্রিপশন ছাড়া কোনওভাবেই ভিটামিন সি, জিঙ্ক জাতীয় ওষুধ কেনা যাবে না।
সাধারণত করোনা হলে এই জাতীয় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বর্ধক ওষুধ খেতে বলছেন চিকিৎসকরা। প্রেসক্রিপশনেও তা লেখা থাকছে। ডা. অনির্বাণ দলুইয়ের কথায়, এই ওষুধ গুলিকে বলা হয় ইমিউনো মডিউলেটর। নয়া নির্দেশিকা অনুযায়ী শুধুমাত্র প্রেসক্রিপশন আনলেই পাওয়া যাবে এহেন ওষুধ। শুধু ভিটামিন সি আর জিঙ্ক নয়, এই তালিকায় রয়েছে ডক্সিসাইক্লিন, ডেক্সামিথাজোন, আইভারমেকটিন। এই আইভারমেকটিন আদতে একটি অ্যান্টি প্যারাসাইটিক ওষুধ। করোনা রোগীদের শরীর থেকে ভাইরাল লোড কমাতে এই ওষুধ সাহায্য করছে। এমন খবর জানাজানি হতেই অনেকে এই ওষুধ কিনেও বাড়িতে রেখে দিচ্ছেন। এমনই এক ব্যক্তির কথায়, “কবে অসুখ হবে ঠিক নেই। পরিবারের সকলের জন্য এক পাতা করে কিনে রেখে দিয়েছি।” জনস্বাস্থ্য আধিকারিক অনির্বাণ দলুইয়ের কথায়, এই প্রবণতা মারাত্মক। সংকটজনক রোগী ওষুধ পাচ্ছে না।
শুধুমাত্র ওষুধ নয়, নয়া নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রেসক্রিপশন ছাড়া মিলবে না বুডেসোনাইড ড্রাগও। হাঁপানি রোগীদের ইনহেলারে এই ওষুধ ব্যবহার হয়। ডা. অনির্বাণ দলুইয়ের বক্তব্য, যেসমস্ত করোনা রোগীর অল্প থেকে মাঝারি শ্বাসকষ্ট রয়েছে তারা বুডেসোনাইড ইনহেলার দিনে দুই পাফ ব্যবহার করলে দ্রুত সুস্থ হচ্ছেন। যত্রতত্র লোকজন এই ওষুধ বাড়িতে মজুত করতে শুরু করলে বাজারে ওষুধের অভাব দেখা দেবে। বেকায়দায় পরবেন করোনা রোগীরা। মহামারি থেকে রক্ষা পেতে দেদার ভিটামিন সি ট্যাবলেট খাচ্ছেন প্রচুর মানুষ। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাপ্লিমেন্ট হিসেবে ভিটামিন সি খাওয়া ভালো জেনেই এই ট্যাবলেট মজুত করার প্রবণতা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে নতুন নির্দেশিকার পর এই সমস্যা কাটবে বলে মত ওষুধ বিক্রেতাদের।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.