সুব্রত বিশ্বাস: রবিবার রাত ন’টা। প্রধানমন্ত্রীর আবেদনে সাড়া দিয়ে যখন আলো নিভিয়ে মোমবাতি বা প্রদীপ জ্বালাচ্ছেন দেশের বেশিরভাগ মানুষ। ঠিক তখনই খোলা আকাশের নিচে মোমবাতি নিয়ে হাজির হলেন কর্তব্যরত রেলকর্মীরা। স্টেশন মাস্টারও নিজের দপ্তরের সামনে জ্বালালেন মোমবাতি। চলন্ত মালগাড়ির চালক ও গার্ডের কামরা থেকে অন্ধকার ভেদ করে ছুটে গেল টর্চের আলো। করোনার বিরূদ্ধে একতার ডাকে শামিল হলেন রেলকর্মীরাও। যদিও ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতে যথেষ্ট সুরক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় তাঁরাই এখন চরম অসহায় বোধ করছেন। আর এর জন্য তাঁরা দায়ী করেছেন রেল কর্তৃপক্ষকেই।
রেলকর্মীদের অভিযোগ, আপৎকালীন পরিস্থিতিতে কাজ করলেও সুরক্ষা ব্যবস্থা তেমন নেই। রবিবার সকালে শিলিগুড়ির ডিজেল শেডের কর্মী অরুণ লোহার মারা যান করোনা ভাইরাস (Corona Virus) আক্রান্ত হওয়ার কারণে। এরপরই কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষা বলয় তৈরি না হওয়ায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করেন কর্মীরা।
ন্যাশনাল রেলওয়ে মজদুর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক পি নায়ারের অভিযোগ, কেন্দ্রীয় সরকার ঘোষণা করার পরেও রেল চিকিৎসক, নার্স ও চিকিৎসা কর্মীদের জন্য ৫০ লক্ষ টাকার বিমার কথা ঘোষণা করেনি। এআইআরএফ (AIRF)-কে এইজন্য তৎপর হতে আবেদন জানান নায়ার। এর পাশাপাশি রেল হাসপাতালগুলিকে পুরোপুরি করোনা চিকিৎসা কেন্দ্র বানালেও সেখানে পরিকাঠামো নেই বলে অভিযোগ তুলেছে রেলের কর্মী সংগঠন। হাওড়া অর্থোপেডিক ও লিলুয়া হাসপাতালকে পুরোপুরি করোনা চিকিৎসা কেন্দ্র করা হয়েছে। কিন্তু, চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মী ও নার্স তেমন না থাকায় প্রচণ্ড সমস্যা দেখা দেয়। তাই এই সব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের নোটিস জারি করে পূর্ব রেল। হাওড়া অর্থোপেডিকের জন্য ১০ ডাক্তার, ১০ নার্স ও ২১ জন স্বাস্থ্যকর্মী চাইলে মাত্র তিন জন ডাক্তার, চার জন নার্স ও আট জন স্বাস্থ্যকর্মী নিতে পেরেছে। আসলে হাসপাতালগুলির জন্য কর্মী খুঁজেও পাচ্ছে না রেল।
কাঁচরাপাড়া, মালদহ ও জামালপুরে একজনও আসেনি বলে জানান পূর্ব রেলের মেনস ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অমিত ঘোষ। তিনি বলেন, যা চুক্তির পদ্ধতি ও অর্থ তাতে আপৎকালীন পরিস্থিতিতে কোন শিক্ষিত মানুষ আসবেন না। ফলে কর্মী নিয়োগ উপযুক্ত মানের হবে না বলে তিনি দাবি করেছেন। পাশাপাশি রেলকর্মীরা অভিযোগ তুলেছেন, এক শ্রেণির আধিকারিক ঊর্ধ্বতনদের সন্তুষ্ট করতে মৌখিকভাবে কর্মীদের কাজে ডেকে পাঠাচ্ছেন। তাঁদের অভিযোগ, গত ২৩ মার্চ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক ৫৬ ধারার উল্লেখ করে নির্দেশ দেয়, কন্ট্রোলিং অফিসারের নির্দেশ ছাড়া কোনও কর্মী কাজে আসার পর করোনা আক্রান্ত হলে তাঁর দায় রেল যেমন নেবে না তেমনই সহকর্মীর করোনা সংক্রমণে তাঁকেই দায়ী করে এক বছরের জন্যও জেলে পাঠানো হবে। তাই এক্ষেত্রে ঊর্ধ্বতনদের দায়িত্ববান হওয়ার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.