শুভদীপ রায় নন্দী, শিলিগুড়ি: শুক্রবার থেকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে করোনার চিকিৎসা বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিল স্বাস্থ্যদপ্তর। এখন থেকে কোনও করোনা সন্দেহ বা সংক্রমিত রোগীর ওই হাসপাতালে চিকিৎসা হবে না। বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গের শাখা সচিবালয় উত্তরকন্যায় একথা জানান রাজ্য সরকারের করোনা মোকাবিলায় গঠিত বিশেষ টাস্ক ফোর্সের সদস্য তথা চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরি।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে গোটা উত্তরবঙ্গের পাশাপাশি বিহার, ঝাড়খণ্ড-সহ নেপাল, ভুটান এবং বাংলাদেশ থেকেও প্রচুর রোগী চিকিৎসার জন্য গিয়ে থাকে। শুধুমাত্র করোনার জন্য ওই হাসপাতালকে ব্যবহার করলে অন্যান্য রোগের চিকিৎসা বন্ধ করতে হবে। তা না হলে অন্যান্য রোগীরাও সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কার পাশাপাশি উত্তরের সমস্ত চিকিৎসা পরিষেবা ব্যাহত হতে পারে। মূলত সেজন্যই ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বাস্থ্যদপ্তর। মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের পরিবর্তে প্রধাননগর এবং মাটিগাড়ার দুটি নার্সিংহোমকে শুধু মাত্র করোনার চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হবে বলে জানা গিয়েছে।
অন্যদিকে, করোনায় সংক্রমিত হয়ে কালিম্পংয়ের মৃত মহিলার সংস্রবে আসা সাত জনের সোয়াব টেস্টের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। দশদিন ধরে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের আইশোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি ওই সাত জন অবজার্ভেশনে ছিলেন। তাদের মধ্যে চার জন পুরুষ এবং দুজন মহিলা ছাড়াক একটি শিশু রয়েছে। মঙ্গলবার সকলের লালা রসের নমুনা সোয়াব পরীক্ষার জন্য উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছিল। এদিন দুপুরে রিপোর্ট হাতে পায় জেলা স্বাস্থ্যদপ্তর। প্রত্যেকের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে বলে জানিয়েছেন জেলা হাসপাতাল সুপার গয়ারাম নস্কর।
করোনা মোকাবিলায় রাজ্যের টাস্ক ফোর্সের সদস্য অভিজিৎ চৌধুরি বলেন, “উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে অনেক জটিল রোগের চিকিৎসা হয়। প্রচুর রোগী যায়। শুধু মাত্র করোনার চিকিৎসা করলে অন্যান্য রোগীরা সংক্রমিত হতে পারে। সেজন্যই করোনা চিকিৎসার একদম আলাদা পরিকাঠামো তৈরি করা হয়েছে।” এছাড়া তিনি জানান, রাজ্যের ৬০টি করোনা হাসপাতালের জন্য চারটি করে ভেন্টিলেটর, দুটো করে ইনভেসিভ ভেন্টিলেটর, একটি করে বাইপাস ভেন্টিলেটর ও ট্রান্সপোর্ট ভেন্টিলেটর ইতিমধ্যে পাঠানো হয়েছে। এছাড়াও তিনি জানান, আগামী দু’সপ্তাহ উত্তরবঙ্গে থেকে করোনা মোকাবিলায় যাবতীয় চিকিৎসা ব্যবস্থার বিষয়য়ের উপর নজিরদারি চালাবেন টাস্ক ফোর্সের সদস্য চিকিৎসক গোপালকৃষ্ণ ঢালি।
এদিন উত্তরকন্যায় দার্জিলিং এবং জলপাইগুড়ি জেলার স্বাস্থ্য ও প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে করোনা মোকাবিলায় উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে বসেন টাস্ক ফোর্সের দুই সদস্য চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরি এবং গোপালকৃষ্ণ ঢালি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে এদিন উত্তরবঙ্গের সামগ্রিক করোনা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন তারা। এদিনের বৈঠকে টাস্ক ফোর্সের দুই সদস্য ছাড়াও উত্তরবঙ্গের ডিভিশনাল কমিশনার অজিতরঞ্জন বর্ধন, জলপাইগুড়ির জেলাশাসক অভিষেক তিওয়ারি, জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক রমেন্দ্রনাথ প্রামাণিক, দার্জিলিংয়ের জেলাশাসক দীপাপ প্রিয়া পি, মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় আচার্য, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সুপার কৌশিক সমাজদার, অধ্যক্ষ প্রবীর দেব, রোগী কল্যান সমিতি’র চেয়ারম্যান রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য, ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল এসোসিয়েশনের শিলিগুড়ি শাখার সম্পাদক চিকিৎসক শেখর চক্রবর্তী-সহ অন্যান্যরা। এদিনের আলোচনার পরই উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালকে করোনা চিকিৎসার জন্য ব্যবহার না করার কথা জানান অভিজিৎবাবু।
স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে, করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত কালিম্পংয়ের মহিলার সংস্রবে এসে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের সহকরি সুপার এবং একজন নার্স করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন। পাশাপাশি ওয়ার্ডের ওই মহিলার সংস্রবে এসে এক রেল কর্মীরও সংক্রমিত হয়ে মৃত্যু হয়। সেই কারনেই করোনার চিকিৎসা বন্ধর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রধাননগরের নার্সিংহোমটিতে ১৪৪টি এবং মাটিগাড়ার নার্সিংহোমে ৯০টি শয্যার ব্যবস্থা রয়েছে। কোনও রোগীর মধ্যে করোনার উপসর্গ দেখা দিলে তাকে প্রথমে প্রধাননগরের নার্সিংহোমে ভর্তি করা হবে। এরপর যদি তার সোয়াব টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ আসে তবে তাকে পরবর্তী চিকিৎসার জন্য মাটিগাড়ার নার্সিংহোমে স্থানান্তরিত করা হবে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.