অংশুপ্রতিম পাল এবং সুরজিৎ দেব: করোনায় (Corona Virus) মৃতরা যেন অচ্ছুত! কোথাও তাঁদের সৎকারের জন্য পরিবারের সদস্যদের হদিশ মিলছে না, তো কোথাও আবার প্রশাসনিক সহযোগিতার অভাব। আবার পরিবারের হদিশ না পেয়ে প্রশাসনিক সহযোগিতায় শেষকৃত্যের নজিরও রয়েছে। সবমিলিয়ে মৃত্যুর পরও করোনা রোগীদের নিয়ে টানাপোড়েন অব্যাহত। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজ্যের দুই প্রান্তের দুই বিপরীতধর্মী ঘটনা সামনে এল। আমতলার সেফহোমে করোনা রোগীর মৃত্যুর পর পরিবারের কেউ এগিয়ে এল না সৎকার করতে। প্রশাসন নিজের দায়িত্বে শেষকৃত্য সারল। আবার পশ্চিম মেদিনীপুরের বুরাল অঞ্চলে মৃত্যুর ১২ ঘণ্টা পরেও হাসপাতালে পড়ে রইল মৃতদেহ।
প্রথম ঘটনাটি সাতগাছিয়া বিধানসভার অন্তর্গত বজবজ ২ নম্বর ব্লকের চড়ারায়পুরের। এই এলাকার বাসিন্দা সঞ্জয় ভক্ত(৩৭) করোনায় আক্রান্ত হলে আমতলার সেফহোমের আবাসিক হন। এরপর সোমবার রাত আড়াইটে নাগাদ সঞ্জয়ের মৃত্যু হয়। সেই খবর সঞ্জয়ের পরিবারের সদস্যকে দেওয়া মাত্রই তাঁরা যোগাযোগ বন্ধ করে দেন বলে অভিযোগ। সমস্যা দেখা দেয় সঞ্জয়ের কোভিড টেস্টের পজিটিভ কাগজটির জন্য। কারণ সেই কাগজ ছাড়া অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া করা যাবে না। তাই দেহ পড়ে থাকে আমতলার সেফ হোমেই।
সেফহোম কর্তৃপক্ষ পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কোনভাবেই যোগাযোগ করে উঠতে না পেরে, অবশেষে বজবজ ২ নম্বর ব্লকের সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিক ও বজবজ ২ নম্বর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি বুচান বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন কারণ সঞ্জয়কে এই দুজনের তদারকিতেই সেফ হোমে ভরতি করা হয়েছিল। বুচানবাবু খবর পাওয়া মাত্রই অনেক চেষ্টা করে সঞ্জয়ের ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে এসে মঙ্গলবার রাতে বজবজ কালীবাড়ি সংলগ্ন বজবজ পুরসভার চিত্রগঞ্জ শ্মশানে সঞ্জয়ের দেহ সৎকারের ব্যবস্থা করেন বুচানবাবু।
অন্যদিকে মৃত্যুর ১২ ঘণ্টা পরেও সরকারি হাসপাতালে পড়ে করোনায় মৃতের দেহ। প্রশাসন জেনেও মৃতদেহ সৎকারের কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ। পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ের ঘটনা। মঙ্গলবার দুপুর থেকে বুধবার পর্যন্ত সবং গ্রামীণ হাসপাতালে পড়ে রইল দেহ। হাসপাতাল সূত্রে খবর, পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ব্লকের বুরাল অঞ্চলের বারজগু এলাকার বাসিন্দা দিলীপ আদকের করোনায় মৃত্যু হয়। বেশ কয়েকদিন তিনি বাড়িতে অসুস্থ ছিলেন। মঙ্গলবার তাঁর করোনা পরীক্ষা হলে রিপোর্ট পজিটিভ আসে। গতকাল দুপুর থেকে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তারপরেই তাঁকে সবং গ্রামীণ হাসপাতাল ভরতি করা হয়। হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। মৃত্যুর খবর পেয়েও দেহ বাড়িতে নিয়ে যেতে রাজি হয়নি মৃতের পরিবার। এই ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক আতঙ্কের সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গতকাল দুপুরে ওই ব্যক্তির করোনায় মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পর দীর্ঘ সময় কেটে গেলও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসন মৃতদেহ সৎকারের ব্যবস্থা নেয়নি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলেছে এলাকার মানুষজন।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.