Advertisement
Advertisement
গাছে কোয়ারেন্টাইনে

বাড়িতে বাড়তি ঘরের অভাব, গাছে মাচা খাটিয়ে কোয়ারেন্টাইনে সাত যুবক

পুরুলিয়ার জঙ্গলমহলের যুবকদের অনন্য কীর্তি।

Corona: 7 man returerned from Chennai made Tree quarantine in Purulia
Published by: Paramita Paul
  • Posted:March 28, 2020 5:24 pm
  • Updated:March 28, 2020 6:08 pm  

সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: পেটের টানে ভিনরাজ্যে পাড়ি জমিয়েছিলেন পুরুলিয়ার সাত যুবক। করোনার দাপট বাড়তেই বাড়িমুখো হন তাঁরা। কিন্তু জঙ্গলমহল এলাকার মাটির বাড়িতে অতিরিক্ত ঘর তো নেই। তাহলে ভিনরাজ্য থেকে ফিরে কোয়ারেন্টাইনে থাকবেন কোথায়? ওই যে কথায় আছে, ইচ্ছে থাকলেই উপায় হয়।তাই  সাতজনের বাড়ির কাছে গাছের ডালে মাচা খাটিয়ে কোয়ারেন্টাইন সেন্টার বানানো হয়েছে । অর্থাৎ হোম কোয়ারেন্টাইনের বদলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ‘ট্রি কোয়ারেন্টাইন’ রয়েছেন পুরুলিয়ার সাত যুবক। অযোধ্যা পাহাড় লাগোয়া জঙ্গলমহলের সাত যুবকের নজিরবিহীন উদ্যোগকে কুর্নিশ জানিয়েছেন প্রশাসনিক কর্তারা। তাঁদের কথায়, “যখন মানুষ নিয়ম মানতে চাইছেন না, কোয়ারেন্টাইনে থাকার ভয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন তখন এ এক অন্য নজির।” তবে দ্রুত তাঁদের সরকারি কোয়ারেন্টাইনে থাকার সুব্যবস্থা করে দেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।

জানা গিয়েছে, কর্মসূত্রে কয়েক মাস আগে চেন্নাই গিয়েছিলেন বলরামপুর ব্লকের গেঁড়ুযা অঞ্চলের ভাঙিডি গ্রামের সাত যুবক। সংক্রমণ ছড়াতে থাকায় তাঁরা কাজ ছেড়ে ট্রেন ধরে বাড়ি ফিরে আসেন। রবিবার জনতা কারফিউয়ের দিন খড়গপুর স্টেশনে নেমে গাড়ি করে রাতে গ্রামে ফেরেন তাঁরা। তার আগে অবশ্য ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে স্বাস্থ্যপরীক্ষা করিয়েছিলেন। তবে কোনও সমস্যা ধরা পড়েনি। তারপরেও সচেতনতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ওই সাত যুবক কোয়ারেন্টাইনে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। এদিকে তাঁদের বাড়িতে অতিরিক্ত কোনও ঘর নেই। তাই ওই সাত যুবকের জন্য এহেন অভিনব ব্যবস্থা করেন গ্রামের বাসিন্দারা। একটি বড় গাছের বিভিন্ন ডালে খাটিয়া চাপিয়ে মাচা বানিয়ে দেন। মশারি খাটিয়ে ওখানেই সারাদিন থাকছেন ওই যুবকেরা। দিনের বেলা গাছ থেকে নেমে নিচে রান্না করে খেয়ে আবার গাছে উঠে যাচ্ছেন। ওদের বাড়ির লোকজন চাল-ডাল গাছের তলায় রেখে দিয়ে আসছেন।

Advertisement

[আরও পড়ুন : করোনা আবহেও দায়িত্বে অবিচল, কর্ণাটকের বধূর পরিজনের খোঁজ দিল হ্যাম রেডিও]

গ্রামে ফেরা বিজয় সিং লায়া, বিমল সিং সরদার, দীনবন্ধু সিং সরদাররা জানান, “বাড়িতে ঘর কম। তাই একটি গাছের বিভিন্ন ডালে মাচা বেঁধে খাটিয়া চাপিয়ে সাতজনের আলাদা থাকার ব্যবস্থা করে নিয়েছি। নলকূপ থেকে জল নিয়ে গ্রাম থেকে দূরে স্নান, শৌচকর্ম সারছি।” কিন্তু এমন ভাবনা এল কীভাবে? ওই গ্রামের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, “আমাদের এলাকায় হাতি মাঝেমধ্যেই হামলা চালায়। তারা যাতে ফসলের খেতে ঢুকে ক্ষতি করতে না পারে তার জন্য এমন করে গাছে মাচা করে রাতভর শুয়ে নজর রাখি আমরা। সেখান থেকেই এই ভাবনা।” প্রসঙ্গত, বিজয় সিং লায়া একসময় হাতি তাড়ানোর হুলা পার্টির সদস্য ছিলেন।

[আরও পড়ুন : অন্ধ্র থেকে মাছের আমদানি বন্ধ, লকডাউনে মনখারাপ বাড়ছে মৎস্যপ্রিয় বাঙালির]

জানা গিয়েছে, গাছের উপর মাচা করে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে রয়েছেন ওই যুবকরা। প্রশাসনিক কর্তাদের কানে এই খবর পৌঁছে গিয়েছে। জেলাশাসক রাহুল মজুমদার জানান, “ওই সাত যুবককে গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে কোয়ারেন্টাইনে রাখা হবে। সেখানে এখনও বিদ্যুৎ নেই। বিদ্যুৎ আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।” এদিকে চরম সংকটকালীন পরিস্থিতিতে জঙ্গলমহলের প্রত্যন্ত এলাকার সাত যুবকের এই কীর্তিকে কুর্নিস জানাচ্ছেন অনেকেই। এই ঘটনা শহরবাসীকে লজ্জায় ফেলে দিল বলেই মনে করছেন অনেকেই।

ছবি ও ভিডিও: সুনীতা সিং

দেখুন ভিডিও:

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement