চন্দ্রশেখর চট্টোপাধ্যায়, আসানসোল: বাড়ির মেঝে তপ্ত হয়ে উঠছে হঠাৎ করে। মেঝের গনগনে আঁচেই হাঁড়িতে জল চাপালে গরম হয়ে যাচ্ছে উনুন ছাড়াই। অবাক করা এই ঘটনা ঘটেছে আসানসোল পুরনিগমের এক নম্বর ওয়ার্ড জামুড়িয়ার নণ্ডি গ্রামে। ‘গরম’ ঘর নিয়ে গ্রামের অন্যান্য মানুষের উৎসাহ থাকলেও আতঙ্কে রয়েছে নণ্ডির চট্টোপাধ্যায় পরিবার।
দেখা যায়, সিঁড়ি ঘরের কাছে বেশ কিছুটা জায়গা উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। খুব বেশিক্ষণ পা রাখা যাচ্ছে না। ওই অংশে কোন পাত্রে জল রাখলে গরম হচ্ছে খুব তাড়াতাড়ি। ঠিক যেমনটা হয় ইন্ডাকশন কুকারের ক্ষেত্রে। ঘটনাটি প্রথম নজরে আসে বাড়ির রবিবার। গৃহকর্ত্রী শ্যামলী চট্টোপাধ্যায়ের জানান, বউমা বাড়ির মেঝে পরিষ্কার সময় অনুভব করেন যে অংশে সিঁড়ি আছে সেখানের অংশ খুবই গরম। বাড়ির সদস্যদের প্রথমে ভেবেছিলেন ওখানে ফ্রিজ থাকার জন্য গরম হয়ে উঠেছে। ফ্রিজটি অন্য জায়গায় সরিয়ে দেওয়া হয়। তারপরেও ওই অংশে গরম কম না হওয়ায় ইলেকট্রিক মিস্ত্রিকে ডেকে আনা হয়। তিনিও জানিয়ে দেন, ইলেকট্রিক্যাল কারণে বাড়ির মেঝে গরম হয়নি। অন্য কোনও কারণ হতে পারে।
বাড়ির ছেলে পলাশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, বিষয়টি স্থানীয় কাউন্সিলর, জামুড়িয়া থানা ও ইসিএলের শ্রীপুর এরিয়ার জেনারেল ম্যানেজারকে লিখিতভাবে জানাই। পলাশবাবুর অভিযোগ, এই বিষয়ে কেউ কোনও সাহায্য করতে আসেনি। তিনি বলেন, আমরা সবাই আতঙ্কে আছি। রাতে আমাদের ভয়ে ঘুম হচ্ছে না। মনে হচ্ছে এই বুঝি উঠোন ফেটে আগুন জ্বলে উঠবে। আমাদের ধারণা খনি সংক্রান্ত কারণে আমাদের ঘরটি গরম হয়ে যাচ্ছে। অঘটনের অশনি সঙ্কেত নিয়ে আতঙ্কিত রয়েছেন চট্টোপাধ্যায় পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা।
জানা গিয়েছে, নণ্ডি গ্রামের ওই বাড়ি প্রায় দেড়শ বছরের পুরনো। দুপাশে একশো মিটারের মধ্যে রয়েছে ব্রিটিশ কোল আমলের পরিত্যক্ত খনি। এলাকাটি এমনিতে ধস কবলিত। ওই খনিতে কয়লা উত্তোলন না হলেও অতীতে কয়লা উত্তোলন হয়েছে। ঘটনার কথা শোনার পর খনি বিশেষজ্ঞ তথা প্রাক্তন মাইনিং ইঞ্জিনিয়ার ইন্দ্রনাথ লায়েক বলেন, ‘আমার মতে পরিত্যক্ত ওই খনিগর্ভে কোথাও কয়লার স্তরে আগুন ধরে রয়েছে। সেজন্যই ওপরের অংশ গনগনে আঁচ টের পাওয়া যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ব্রিটিশ কোল আমলে ওই খনি বন্ধ থাকলেও কোনও চোরাপথ দিয়ে অক্সিজেন ঢুকে কয়লারস্তরে হয়তো আগুন লেগেছে। কয়লার সঙ্গে অক্সিজেনের সংস্পর্শে স্পনটিনিয়াস হিটিং থেকে অনেক সময় আগুন লাগে। আবার কখনও চোরা খাদানে মোমবাতি জ্বেলে আগুন জ্বেলে ঢুকলেও মিথেন গ্যাস থেকে আগুন ধরে যায় কয়লার স্তরে। যদি খনি সংক্রান্ত কারণে বাড়ির উঠোন গরম হচ্ছে তার মধ্যে এই দুটির মধ্যে একটি কারণ হতে পারে। তিনি বলেন, কয়লার স্তরে আগুন জ্বলতে থাকলে ওই অংশ একসময় ছাই হয়ে যাবে। তখনই কিন্তু ধস নামার সম্ভাবনা থাকে। ফলে ওই নিরাপদ দূরত্বে থাকা উচিত ওই পরিবারের।
ইসিএলের শ্রীপুর এরিয়ার জেনারেল ম্যানেজার জে.সি রায় বলেন, ‘ঘটনার কথা জানতে পেরে আমি ইসিএলের ওপর মহলে জানিয়েছি।’ ইসিএলের এক প্রতিনিধি দল ঘটনাস্থলে পরিদর্শনে যাবে। তবে গ্রামবাসীরা চাইছেন, অবিলম্বে পুর্নবাসন দিক ইসিএল।
ছবি: মৈনাক মুখোপাধ্যায়
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.