ছবিতে নবনিযুক্ত সভাধিপতি উমাকান্ত বর্মন ও বিদায়ি সভাধিপতি পুষ্পিতা রায় ডাকুয়া, ছবি: দেবাশিস বিশ্বাস।
বিক্রম রায়, কোচবিহার: জেলা পরিষদের বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে কোচবিহারে তৃণমূলে ভাঙনের সুর প্রকট। প্রকাশ্যে দলীয় কোন্দল। এদিন বোর্ডগঠনে জেলা সভাধিপতির নির্বাচন নিয়েই জলঘোলা হয়। বিতর্কে জড়ান জেলা পরিষদের সদস্যরা। বিদায়ী জেলা পরিষদ সভাধিপতি পুষ্পিতা রায় ডাকুয়া ক্ষোভের সঙ্গে দল ছাড়ারও ইঙ্গিত দিয়েছেন। যদিও সেই প্রসঙ্গে মুখ খুলতে নারাজ কোচবিহারের জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। গোটা ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে তৃণমূলের অন্দরে।
জানা গিয়েছে, সভাধিপতি নির্বাচন নিয়েই যত গন্ডগোল। এদিন বোর্ড গঠনের সময় জেলার নতুন সভাধিপতি হিসেবে উমাকান্ত বর্মনের নাম ঘোষণা করা হয়। সহ-সভাধিপতি হিসেবে পুষ্পিতাদেবীর নাম উঠে আসে। এদিকে সভাধিপতির নাম ঘোষণা হতেই জেলা পরিষদ ভবনের উপস্থিত সদস্যদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়ে যায়। রীতিমতো দু’দলে ভাগ হয়ে যান উপস্থিত তৃণমূল নেতৃত্বরা। জেলা পরিষদ ভবনের মধ্যেই একদল হইচই শুরু করে দেন। বলা বাহুল্য, পুষ্পিতা রায় ডাকুয়ার জায়গায় উমাকান্ত বর্মনকে অনেকেই মানতে পারেননি। তাছাড়া বনমন্ত্রী বিনয়কৃষ্ণ বর্মনের ঘনিষ্ঠ হওয়াতেই উমাকান্তকে জেলার সভাধিপতি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠতে থাকে। কেননা বিনয়কৃষ্ণ বর্মনকে অনেকেরই নাপসন্দ ব্যক্তিত্ব। সেই তাঁরই কাছের মানুষ জেলার সভাধিপতির আসনে বসেছেন, এটা মানতে পারেননি তৃণমূলের একাংশ। শুরু হয়ে যায় বিক্ষোভ। দলবিরোধী স্লোগানও উঠতে থাকে। এই সময় বোর্ডগঠনে যোগ দিতে জেলা পরিষদ ভবনে ঢুকতে গিয়ে বাধা পান জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়নমন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তাঁকে ঘিরেও বিক্ষোভ শুরু হয়ে যায়।
অন্যদিকে সভাধিপতি থেকে সহ-সভাধিপতির আসনে নামিয়ে দেওয়ায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ পুষ্পিতা রায় ডাকুয়া। সাংবাদিকদের সামনে কার্যত দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন বিদায়ী সভাধিপতি। বলেন, ‘আমি কোচবিহারের জেলা সভাধিপতি থাকাতে উন্নয়নও কম হয়নি। ভালকাজের জন্য প্রচুর পুরস্কারও এসেছে। কোচবিহারের জেলাপরিষদের ইতিহাসে যা দৃষ্টান্ত। সেই আমাকেই এবার তিরস্কার করা হল। এরপরেও দলের সঙ্গে যোগাযোগ থাকবে কিনা তানিয়ে ভাবব।’
এদিকে জেলাপরিষদ ভবনে ঢুকতে গিয়ে বিক্ষোভের মুখে পড়ে নিতান্তই বিরক্ত রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তিনি বিক্ষুব্ধ দলীয় কর্মীদের নাম না করেই বলেছেন, ‘জেলা সভাধিপতি নির্বাচন সর্বসম্মতিক্রমে হয়েছে। এই নির্বাচনে যারা দলবিরোধী স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ দেখালেন, তাঁরা দলের কেউ নন। কেউ হতে পারেন না। তবে বিদায়ী জেলা সভাধিপতি কী বলেছেন, তা এখনও শুনিনি। তাই এবিষয়ে মন্তব্য করব না।’ এদিকে বিক্ষুব্ধ তৃণমূলের কর্মীরা জেলা পরিষদ ভবনের সামনেই নবনিযুক্ত সভাধিপতি উমাকান্ত বর্মনের প্রতিকৃতিতে জুতোর মালা পরিয়ে বিক্ষোভ শুরু করে। একইসঙ্গে নতুন সভাধিপতির কুশপুতুল দাহ করে চলে বিক্ষোভ ও স্লোগান। গোটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোচবিহার জেলা তৃণমূলের অন্দরে ক্ষোভ ছড়িয়েছে।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.