বিক্রম রায়, কোচবিহার: ‘এখনই বিয়ে নয়। সবুজ মাঠে আরও কিছুদিন থাকতে চাই। আমাকে ট্র্যাকে ছুটতে দিন। প্লিজ, জেলা ছাড়িয়ে রাজ্যের জন্য কিছু খেতাব জয়ের সুযোগটা হাতছাড়া হতে দেবেন না।’ কোনও নাবালিকা নয়। এমনই আর্জি নিয়ে শীতলখুচি কলেজের ছাত্রী তাপসী বর্মন জেলা প্রশাসনের দ্বারস্থ। শুক্রবারের ঘটনা। বছর কুড়ির তরুণীর আর্তি শুনে চুপ থাকতে পারেননি প্রশাসনের কর্তারা। স্বপ্নপূরণে সব রকম সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছেন তাঁরা।
কোচবিহারের অতিরিক্ত জেলাশাসক তেনজি সি ভার্মা বলেন, “তাপসী এসে বলেছে সে এখনই বিয়ে করতে চায় না। রাজ্য স্তরের বিভিন্ন খেলায় অংশ নিয়েছে অতীতে। খেলাধুলো চালিয়ে যেতে চায়। খেলাধুলো নিয়েই নিজের কেরিয়ার গড়তে চায়। কোচবিহারে থেকে পড়াশোনার সুযোগ করে দেওয়ারও আবেদন জানিয়েছে। গুঞ্জবাড়ি হস্টেলে তাঁর থাকার ব্যবস্থা হয়েছে। তাপসীর বাড়ির লোকজনের সঙ্গেও কথা বলা হবে।” এদিন তাপসী জানিয়েছেন, “ছেলেবেলা থেকে খেলাধুলা তাঁর প্রথম পছন্দ। ফুটবল, ভলিবল, কবাডি এবং অ্যাথলেটিক্স সবগুলিতে অংশ নিয়েছেন। দৌড়ে ১০০ মিটারে রাজ্যস্তরে পুরস্কার পেয়েছেন। খেলাতেই নিজের কেরিয়ার গড়তে চান৷ কিন্তু বাবা-মা সেটা মানতে চাইছেন না। তাঁরা এক রকম জোর করে বিয়ে দিতে চেষ্টা করছেন। তাই বাধ্য হয়ে ঘর ছেড়েছি।”
জেলা প্রশাসনের তরফে তাপসীর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করার দায়িত্ব জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক স্নেহাশিস চৌধুরিকে দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক বলেন, “তাপসী হস্টেলে থেকে লেখাপড়ার পাশাপাশি জেলা ক্রীড়া সংস্থার মাধ্যমে নিজের খেলা চালিয়ে যেতে পারবে। সে যদি বাড়িতে থাকতে চায় কোনও সমস্যা হবে না।”
শীতলখুচি কলেজের কলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী তাপসী ছোটবেলা থেকে কবাডি, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন, ফুটবল, দৌড়ে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিত। জেলা দলের হয়ে কবাডি ও দৌড়ে রাজ্য স্তরে প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে একাধিকবার। গত বছর রাজ্য স্তরের ১০০ মিটার দৌঁড়ে সে ছিনিয়ে এনেছে দ্বিতীয় সেরার খেতাব। শীতলখুচি থানার গোঁসাইহাট এলাকায় তাঁর বাড়ি। বাবা বিশ্বেশ্বর বর্মণ পেশায় কৃষক। বাড়িতে মা, এক ভাই এবং এক বোন রয়েছে। মা-বাবা চেয়েছেন খেলার নেশা ছাড়িয়ে বিয়ে দিতে। তাপসী তা মেনে নিতে পারেনি। বাবা-মাকে বুঝিয়ে কোনও লাভ হচ্ছে না দেখে বাড়ি ছেড়ে কোচবিহারে চলে আসেন। বাড়ির লোকজন যেন থানায় নিখোঁজ অভিযোগ দায়ের না করে সেজন্য আগেই শীতলখুচি থানায় জানিয়ে আসেন স্বেচ্ছায় বাড়ি ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। এরপরই সরাসরি চলে যান অতিরিক্ত জেলাশাসকের দপ্তরে। সেখানে সমস্যার কথা খুলে বলতে মিলে যায় সমাধানের উপায়। তাপসী বলেন, “চ্যালেঞ্জ নিয়েছি। খেলার মাঠেই ঘুরে দাঁড়াব। দেখবেন ট্র্যাকে পা রেখেই স্বপ্নপূরণ করব।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.