সংগ্রাম সিংহরায়: শুধু নাবালিকা নয়, সব ধরনের ধর্ষণে মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে আমরণ অনশনে বসেছেন যিনি, তাঁর বিরুদ্ধেই কিশোরীকে উত্যক্ত করার অভিযোগ! বিষয়টি জানাজানি হতেই আর কালবিলম্ব করলেন না কোচবিহারের রানা তালুকদার। ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ব্যানার, ফেস্টুন গুটিয়ে এলাকা ছাড়লেন তিনি। আর যে কিশোরীকে রানা উত্যক্ত করেছেন বলে অভিযোগ, তিনি বলছেন, সস্তায় জনপ্রিয়তার পেতেই সবধরনের ধর্ষণে মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে অনশনের নাটক করছেন রানা তালুকদার। ওই যুবকের অনশন কর্মসূচি সম্পর্কে কিছু জানেন না দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও।
[যে কোনও ধর্ষণের শাস্তি হোক মৃত্যুদণ্ড, নয়া আইনের দাবিতে অনশনে যুবক]
ঘটনাটি ঠিক কী? আসিফা ধর্ষণকাণ্ডে প্রতিবাদে উত্তাল গোটা দেশ। নাবালিকা ধর্ষণ রুখতে নয়া আইন এনেছে মোদি সরকার। নয়া আইনে বলা হয়েছে, ১২ বছরের কম বয়সী কিশোরীকে ধর্ষণ করলে, অপরাধীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে। কিন্তু, ধর্ষণের মতো অপরাধের শাস্তিতে এমন বৈষম্য কেন? এই প্রশ্ন তুলে আবার নয়া আইনের সমালোচনায় সরব হয়েছে সকলেই। তাঁদের দাবি, শুধুমাত্র ১২ বছরের নিচে নয়, যেকোনও বয়সের মহিলাকে ধর্ষণ করলেই মৃত্যুদণ্ডের সাজা দিতে হবে। প্রতিবাদে ঢেউ আছড়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। কিন্তু, নয়া আইনের প্রতিবাদে রাস্তায় আন্দোলন কিন্তু হয়নি। ঠিক সেই কাজটি করেই নজর কেড়েছিলেন কোচবিহারের যুবক রানা তালুকদার। রীতিমতো ব্যানার, ফেস্টুন লাগিয়ে কোচবিহারের জেলাশাসকের দপ্তরে সামনে অনশনে বসেছিলেন তিনি। জানিয়েছিলেন, সব ধরনের ধর্ষণে অপরাধীকে মৃত্যুদণ্ড দিতে হবে। আইন পাশ না হলে আমরণ অনশন চালিয়ে যাবেন।
কিন্তু, মুথে একথা বললে কী হবে! খোদ রানা তালুকদারের বিরুদ্ধেই যে এক কিশোরীকে উত্যক্ত করার অভিযোগ সামনে এসেছে! এই ঘটনার কথা জানতে পেরে ওই যুবকের সঙ্গে বাবা রাসেন্দ্র তালুকদারের সঙ্গে কথা বলেন কোচবিহারের অতিরিক্ত জেলাশাসক চিরঞ্জীব ঘোষ। রাসেন্দ্র তালুকদার অবশ্য জানিয়েছেন, ছেলে এমন কাজ করতে পারে, সেটা তাঁর জানা ছিল না। তাই এই অভিযোগ সম্পর্কে কিছুই বলতে পারবেন না। প্রশ্নের মুখে পড়েন অনশনকারী রানা তালুকদারও। তবে এ বিষয়ে মুখ খুলতে অস্বীকার করেন তিনি। উলটে ব্যানার, ফেস্টুন গুটিয়ে অনশনস্থল থেকে কার্যত পালিয়ে গিয়েছেন রানা। কোচবিহারের অতিরিক্ত জেলাশাসক চিরঞ্জীব ঘোষ বলেন, ‘প্রথমেই সন্দেহ হয়েছিল। খোঁজ খবর করে জানতে পারি, অতীতে এক কিশোরীকে উত্যক্ত করার অভিযোগে রানা তালুকদারের বিরুদ্ধে কোতয়ালি থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছিল। ফের এই ধরনের কাজ করলে আইনি পদক্ষেপ করবে প্রশাসন।’ জানা গিয়েছে, রানাকে গ্রেপ্তারও করেছিল কোতয়ালি থানার পুলিশ। পরে জামিনে মুক্তি পান তিনি।
[ডুয়ার্সে মাশরুমে খেয়ে ফের একজনের মৃত্যু, আতঙ্কিত বাসিন্দারা]
বাবা পরোক্ষে অস্বীকার করলেও, রানা তালুকদারের কুকীর্তির কথা অবশ্য গ্রামবাসীদের অজানা নয়। স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান জানিয়েছেন, কিশোরী উত্যক্ত করাই শুধু নয়, স্কুল বাড়িতে আগুন লাগানো, পাম্প চুরি করার মতো ঘটনায় অভিযুক্ত রানা। তিনি জানিয়েছেন, ‘কুবুদ্ধি তো আছেই, ছেলেটা ঠিক প্রকৃতিস্থ নয়। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন চালায় ওর বাবা। সেখানে নানা অনৈতিক কাজকর্মের খবর পাই।’ বস্তুত, সবধরণের ধর্ষণে মৃত্যুদণ্ডের দাবিতে গ্রামের ছেলে যে অনশনে বসেছিলেন, সেকথাও জানেন না বলে দাবি করেছেন স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান। আর যে কিশোরীকে উত্যক্ত করা হয়েছিল বলে অভিযোগ তার প্রতিক্রিয়া, সস্তায় জনপ্রিয়তা পেতে অনশনের নাটক করছেন রানা তালুকদার।
[পারিবারিক অশান্তির জেরে অবসাদ, ৮ মাসের শিশুকন্যাকে নিয়েই আত্মঘাতী মা]
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.