সৌরভ মাজি, বর্ধমান: বর্ধমানের রেল উড়ালপুল নিয়ে অব্যাহত ‘নাটক’। মঙ্গলবার থেকে প্রতিদিনই পট পরিবর্তন হচ্ছে। কেন্দ্র-রাজ্যের যৌথ এই প্রকল্প রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় উদ্বোধন করার পরও তাতে যান চলাচল শুরু হওয়া নিয়ে জট কাটছেই না। বুধবার ব্যারিকেড খুলে সেতুতে গাড়ি যাতায়াত করলেও, রাতের দিতে তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। এসবের মধ্যে আবার রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের উদ্বোধনের নির্ধারিত সময় ৩ দিন এগিয়ে আনা হয়েছে। ৩০ তারিখের বদলে আগামিকালই রেলমন্ত্রী এসে সেতুর উদ্বোধন করবেন। এই মুহূর্তে যেন টানটান ম্যাচ চলছে রেল বনাম রাজ্য।
মঙ্গলবার বর্ধমানে রেল সেতুটির উদ্বোধন করেন রাজ্যের পঞ্চায়েত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। কিন্তু রেলের তরফে সেতুতে ওঠার মুখে ব্যারিকেড করে রাখায় সেদিন যান চলাচল হয়নি। রেলের তরফে পোস্টার, ফেস্টুন টাঙিয়ে ঘোষণা করা হয়, ৩০ সেপ্টেম্বর রেলসেতুর উদ্বোধন করবেন রেলমন্ত্রী পীযুষ গোয়েল। আর বুধবার বিকেলে নাটকীয় মোড়। একদল বাসিন্দা, যারা তৃণমূল কর্মী-সমর্থক বলেই পরিচিত, তারাই রেলসেতুতে ওঠার ব্যারিকেড খুলে দেন। শুরু হয়ে যায় যানবাহন চলাচল। টোটো, বাইক, চার চাকার গাড়ি থেকে স্কুল বাসও দিব্যি চলাচল করেছে নবনির্মিত রেলসেতুতে।
বুধবারই আবার রেলের তরফে ঘোষণা করা হয়, ৩০ নয়, ২৭ সেপ্টেম্বর অর্থাৎ আগামী শুক্রবার দুপুরে রেলসেতুর উদ্বোধন হবে। তার উদ্বোধন করবেন রেল প্রতিমন্ত্রী সুরেশ চান্নাবাসাপ্পা অঙ্গদি। পূর্ব বর্ধমানের জেলাশাসকের কাছে সেই বিষয়ে চিঠিও পাঠিয়েছেন পূর্ব রেলের হাওড়ার অতিরিক্ত ডিভিশনাল রেলওয়ে ম্যানেজার এনএল মিনা। প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তথা বর্ধমান-দুর্গাপুরের বিজেপি সাংসদ এসএস আলুওয়ালিয়া সোশ্যাল মিডিয়া পেজে এই চিঠি পোস্ট করেছেন। পাশাপাশি, তিনি সেখানে মন্তব্য করেছেন, “রেলমন্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ। বহু প্রতীক্ষীত বর্ধমান রেল ওভারব্রিজ আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন করবেন রেল প্রতিমন্ত্রী। সেখানে স্থানীয় নির্বাচিত জন প্রতিনিধি ও সরকারি আধিকারিকরা উপস্থিত থাকবেন।”
এদিন আলুওয়ালিয়া বলেন, “উপযুক্ত ছাড়পত্র ছাড়াই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তড়িঘড়ি একতরফা ব্রিজের উদ্বোধন করিয়েছেন। উনি কী চান, ব্রিজ ভেঙে পড়ে মানুষ মরুক?” তিনি অভিযোগ করেন, কেন্দ্রীয় সরকারের প্রকল্প সবসময় তাড়াহুড়ো করে উদ্বোধন করে দিচ্ছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পানাগড় বাইপাস, জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চ-সহ অনেকগুলি ক্ষেত্রেই এমন হয়েছে।
তৃণমূলের আবার দাবি, রাজ্য সরকার রেল সেতুর উদ্বোধন করেছে। বর্ধমানবাসী চাইছিলেন সেতুতে যান চলাচলও শুরু হয়ে যাক। বুধবার থেকে তাও শুরু করে দিয়েছিলেন বর্ধমানবাসী। পূর্ব বর্ধমান জেলা তৃণমূল সভাপতি স্বপন দেবনাথ বলেন, “মঙ্গলবারই তো পঞ্চায়েত মন্ত্রী বর্ধমানবাসীর জন্য রেল সেতু খুলে দিয়েছেন। মানুষ তা ব্যবহার করছেন।” রেলের আগেই রাজ্য সরকারের সেতুর উদ্বোধন করা নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয় বলেন, “কেউ অসভ্যতা করলে আর কী বলার আছে? এটা নতুন কোনও ঘটনা নয়। ভাল কাজের পাবলিসিটির জন্য কিছু মানুষ অসভ্যতা করে। তার জন্য মূল কাজটাকে উপেক্ষা করা ঠিক নয়।” সবমিলিয়ে, বর্ধমানের এই সেতু কবে থেকে সম্পূর্ণভাবে যান চলাচলের উপযুক্ত হয়ে উঠবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.