সুমন করাতি, হুগলি: লোকসভা ভোট মিটতেই ফের সোশাল মিডিয়ায় দলের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠলেন বলাগড়ের বিধায়ক মনোরঞ্জন ব্যাপারী। তৃণমূল নেতাদের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দিলেন তিনি। বললেন, “অনেকেই বলেন আমার রাজনীতিতে আসা ভুল হয়েছে। শুধরে নিতে কতক্ষণ? মন চাইলেই চলে যাব।” মনোরঞ্জন ব্যাপারীর পোস্ট ঘিরে প্রবল শোরগোল এলাকায়।
বরাবরই নিজের অভাব-অভিযোগ সোশাল মিডিয়ায় তুলে ধরেন মনোরঞ্জন ব্যাপারী (Manoranjan Byapari)। তা নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। লোকসভা ভোট মিটতেই ফের সরব তিনি। এবার তিনি লিখলেন, “অনেকের অভিমত, রাজনীতিতে আসা আমার ভুল। আজ আমারও তাই মনে হয়। এই তিন বছরে যেটা আমার নিজের লেখালিখির জগৎ, সেখান থেকে বিচ্যুত হয়ে অনেকটা পিছিয়ে পড়েছি। বইমেলা আসছে! অনেকের অনেক বই বের হবে, আমার হবে না। এ আমার কাছে এক দুঃসহ যন্ত্রণা। আমার গোটা জীবনটাই তো মহা মহা ভুলের সমাহার। এক দুবার নয়, শত শতবার ভুল করেছি। ভুল করা আবার সংশোধন করা, এই করতে করতে কেটে গিয়েছে ব্যর্থ অসফল একটা জীবন। রাজনীতিতে এসে ভুল হয়ে থাকলে এটাকেও শুধরে নেব। মন চাইলেই বেরিয়ে পড়বো ঝোলাঝুলি কাঁধে নিয়ে।”
তৃণমূল বিধায়ক মনে করিয়ে দিয়েছেন, ২০১৯ সালের লোকসভা ফলের নিরিখে বলাগড় বিধানসভায় তৃণমূল বিজেপির তুলনায় অনেকটা পিছিয়ে ছিল। ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে তিনি জয়ী হয়েছিলেন। মনোরঞ্জন ব্যাপারী লিখেছেন, “আমার নির্বাচনী বক্তব্যে মানুষকে বলেছিলাম, আমি জিতলে বলাগড়ের মাটি, বালি মাফিয়াদের জঙ্গলের রাজত্ব চলতে দেব না। গাঁজা পাচার, জুয়ার ঠেক, গরুপাচার, রেশনের মালপাচার, সবুজদ্বীপের অরণ্য ধ্বংস বন্ধ করে দেব। কোনও দল দেখব, নেতা দেখব না, অপরাধীরা আমার হাত থেকে রেহাই পাবে না। আমার এই কথায় বলাগড়ের সাধারণ মানুষ আমাকে বিশ্বাস করে ছিলেন, ভোট দিয়েছিলেন। জয়ী হয়ে আমার প্রতিজ্ঞা মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম সামাজিক আবর্জনা সাফাইয়ের কাজে। এতে বলাগড়ের মাটি মাফিয়া, বালি মাফিয়া-সহ সমস্ত ধরনের দুষ্কৃতী তঠস্থ হয়ে গিয়েছিল। মজার কথা, আমি যেখানে যে অপরাধীকে রাত দুপুরে হানা দিয়ে হাতেনাতে ধরে ফেলতাম, দেখতাম তাদের পিছনে আছে তৃণমূলেরই কোনও না কোনও নেতা!”
সরাসরি দলনেত্রীর উপরে অভিমান করে মনোরঞ্জন ব্যাপারী লিখেছেন, “বলাগড়ের এক সভায় হাজার হাজার মানুষের সামনে অত্যন্ত কঠোর ভাষায় আমাকে বলেছিলেন, আপনাকে আর নির্বাচনের প্রচার করতে হবে না। সেদিন যেন অপমানে মাটির মধ্যে সিঁধিয়ে গিয়েছিলাম আমি। দেখেছিলাম তখন ওই চল্লিশজনের চোখে মুখে কী পরিতৃপ্তির হাসি, কী দন্ত বিকশিত উল্লাস! ওঁরা যেমন আমার সঙ্গে চলতে চায় না, আমিও ওদের সঙ্গে চলতে চাই না।” সবশেষে অভিমানী তৃণমূল বিধায়ক লিখেছেন, “ভোটপর্ব মিটে গিয়েছে, দেখা যাক মাননীয়া মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আমার বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেন। দলে থাকি বা না থাকি, ওনারা রাখেন বা না রাখেন, মানুষের মনের মণিকোঠায় আমি অমলিন একটা ছবি রেখে যেতে পারছি, এটাই আমার সবচেয়ে বড় সার্থকতা।” বলাগড়ের বিধায়কের এই পোস্ট নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি নয় শাসক দল।
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.