সুমিত বিশ্বাস, পুরুলিয়া: টিম পিকের (Prashant Kishor) বৈঠকে দলের আভ্যন্তরীন আমন্ত্রনপত্র নিয়ে বিতর্ক দেখা দিল পুরুলিয়ায়। বুধবার পুরুলিয়া জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের সঙ্গে শহরের রবীন্দ্র ভবনে বৈঠকে বসবে টিম পিকে। তার আগেই সেই বৈঠকের আমন্ত্রনপত্রে দলের জেলা নেতৃত্বের পদাধিকারি নিয়েই ক্ষোভ-বিক্ষোভের চোরাস্রোত বইতে শুরু করেছে জেলা তৃণমূলের অন্দরমহলে। কারণ, জেলা সভাপতি পদে নাম নেই শান্তিরাম মাহাতোর। সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্টের জায়গায় নাম নেই সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তবে তালিকায় শান্তিরাম মাহাতোর নাম রাখা হয়েছে মন্ত্রী হিসেবে এবং সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায়কে দেখানো হয়েছে সভাধিপতি হিসেবে। একইভাবে পদ বদলেছে আরও অনেকের। সেই কারণেই এই আমন্ত্রণপত্র নিয়েই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে বিতর্কের।
জানা গিয়েছে, পুরুলিয়া বিধানসভায় ‘পুরুলিয়া পিওসি’ পদাধিকারি হিসাবে নাম রয়েছে পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সদস্য তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতোর ঘনিষ্ঠ হেমন্ত রজকের। এই তালিকায় ঠাঁই হয়েছে নির্দল থেকে সদ্য তৃণমূলে আসা মানবাজার এক নম্বর ব্লকের দেবেন্দ্রনাথ মাহাতোর। তাঁকে সম্পাদক করা হয়েছে বলে ওই তালিকায় দেখানো হয়েছে। তবে ওই নির্দল নেতার সঙ্গে আরও যারা বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে এসেছিলেন পদাধিকারি হিসাবে তাঁদের কোনও নাম নেই। একইভাবে বদলেছে আরও বহু নেতার পদ! ইতিমধ্যেই তালিকাকে ঘিরে দলের অভ্যন্তর ও সোশ্যাল সাইটে ঝড় উঠেছে। পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক গৌতম রায় ফেসবুকে পোষ্টে লিখেছেন, “যারা দলটাকে পৈতৃক সম্পত্তি ভাবছে তাঁরাই দলকে বিজেপির কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে। লোকসভায় হারার পরেও তাদের লজ্জা হল না।” সব মিলিয়ে হঠাৎ করেই পুরুলিয়া জেলা তৃণমূলে শুরু হয়ে কোন্দল।
এ প্রসঙ্গে জেলা সভাপতি তথা মন্ত্রী শান্তিরাম মাহাতো বলেন, “কিছু ভুল ভ্রান্তি রয়েছে। সব ঠিক হয়ে যাবে।” জেলা সভাপতি এমন আশ্বাস দিলেও টিম পিকের বৈঠকের আগে কিন্তু জেলা তৃণমূলে দেখা যাচ্ছে এক অন্য ছবি! বলা যায় আচমকাই তাল কেটেছে জেলা তৃণমূলের। প্রসঙ্গত, নতুন করে জেলা যুব কমিটি ঘোষনা হওয়ার আগেই বাঘমুন্ডি ব্লক যুব সভাপতি শশীপ্রসাদ মাহাতোর নাম নেই তালিকায়। তাকে যুবর জেলা সম্পাদক হিসাবে তালিকায় দেখানো হয়েছে। একইভাবে জেলা যুব সম্পাদক পদে ওই তালিকায় নাম রয়েছে সভাধিপতির ছেলে সম্রাট বন্দ্যোপাধ্যায়ের। অথচ যুব সহ-সভাপতি সৌমেন বেলথরিয়ার নাম নেই। তাঁকে জেলা পরিষদ সদস্য হিসাবে দেখানো হয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠেছে, প্রশাসনিক পদ হিসাবে দেখানো হয়েছে বলেই কী বেশ কয়েকজনকে দলের পদ হিসেবে দেখানো হয়নি? তাহলে রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ বিভাগের মন্ত্রী সন্ধ্যারানি টুডুকে ওই তালিকায় রাষ্ট্রমন্ত্রী হিসাবে দেখানোর পাশাপাশি ব্লক তৃণমূল সভাপতি হিসেবে দেখানো হল কেন?
ক্ষুব্ধ তৃণমূলকর্মীদের কথায়, পিকে-র টিমকে নাম পাঠানোর কাজে এই জেলায় যারা যারা ছিলেন তারাই নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করতে এই কাজ করেছেন। ঘটনায় ইতিমধ্যেই দলের একাংশের বিরুদ্ধে সোশাল সাইটে বিভিন্ন পোষ্ট ছড়িয়ে পড়েছে। যার জেরে প্রবল অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূলের নির্বাচনী পরামর্শদাতা টিম পিকের সদস্যরাও। এ বিষয়ে জেলার ‘দিদিকে বলো’-র কো-অর্ডিনেটর তথা পুরুলিয়া জেলা পরিষদের সদস্য গুরুপদ টুডু বলেন, “এই বিষয়ে দলের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ভুল-ভ্রান্তি ঠিক করে আবার নতুন তালিকা আসছে। কোন পদাধিকারির নাম বাদ যাবে না।”
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.