পলাশ পাত্র, তেহট্ট: তৃণমূল থেকে সদ্য বিজেপিতে পা রেখেছেন নদিয়ার ঘূর্ণি এলাকার এক প্রভাবশালী নেতা। তাঁরই পুজো উদ্বোধন করেছেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। আর তা নিয়েই পুজোর আবহে রাজনৈতিক মহলে জল্পনা তুঙ্গে।
কয়েকমাস আগে ঘূর্ণি তথা কৃষ্ণনগরের দাপুটে নেতা অসিত সাহা বিজেপিতে যোগদান করেছেন। তার আগে এই নেতা কৃষ্ণনগর পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান অসীম সাহার বিরুদ্ধে স্বজনপোষণ, পেট্রল পাম্প, চাকরি-সহ একাধিক দুর্নীতি নিয়ে সোচ্চার হন। এমনকি পুরসভার সামনে তাঁর অনুগতদের নিয়ে ধরনা, বিক্ষোভ করে প্রকাশ্যেও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। অভিযোগে সহমত পোষণ করে তৃণমূলের সাতজন কাউন্সিলর অসীমবাবুর বিরোধিতাও করেন। আবার প্রবীণ অসিতবাবুর সুরে সুর মিলিয়ে নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডাকা সভাও বয়কট করেছিলেন এই কাউন্সিলররা। বিদ্রোহী কাউন্সিলাররা সেসময় মহুয়া মৈত্রর শরণাপন্ন হন।
কিছুদিনের মধ্যে কৃষ্ণনগর করিমপুর রোড সেইের ওপর পেট্রল পাম্পটি বন্ধ হয়। পুরসভার চার নম্বরের ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলর অসিত সাহা পরে বিজেপিতে যোগদান করেন। তারপর জেলা সভাপতি-সহ একঝাঁক বিজেপি নেতাদের জড়ো করে এই নেতা পুরসভার সামনে প্রাক্তন পুরপ্রধানের নামে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে আন্দোলন করেন। বৃহস্পতিবার রাতে সেই অসিতবাবুর সভাপতিত্বের কৃষ্ণনগরের ঘূর্ণি তরুণ সংঘ ক্লাবের পুজো উদ্বোধন করেন এই কেন্দ্রের সাংসদ মহুয়া মৈত্র। তাঁর সঙ্গে ছিলেন কৃষ্ণনগর পুরসভায় প্রাক্তন পুরপ্রধান অসীম সাহা ও উপপুরপ্রধান মণি সরকার।
গোটা বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে। গত লোকসভা ভোটে মহুয়া মৈত্র সাংসদ হলেও উত্তর বিধানসভা কেন্দ্রে হারেন। এই বিধানসভার মধ্যে কৃষ্ণনগর পুরসভার ২৪টি ওয়ার্ড। গত পুরবোর্ডের প্রাক্তন চেয়ারম্যান-ইন-কাউন্সিলের এক সদস্য ছাড়া, বাকি পাঁচ সদস্য, প্রাক্তন পুরপ্রধান অসীম সাহা এবং উপপুরপ্রধানের ওয়ার্ড-সহ ২৩টি ওয়ার্ডেই ব্যাপক ভাবে হেরেছে শাসকদল তৃণমূল। এই হার নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনাও হয়। রাজনৈতিক মহলের খবর অনুযায়ী, প্রাক্তন পুরপ্রধান অসীম সাহার ‘ঘোর শত্রু’ বলে পরিচিত অসিত সাহা। ঘূর্ণি এলাকায় যাঁর একচ্ছত্র আধিপত্য। বর্তমানে ভিন্ন রাজনীতিতে অবস্থান করা বিজেপি নেতা অসিত সাহার সভাপতিত্বের ক্লাবের পুজো উদ্বোধন করে মহুয়া মৈত্র কী বার্তা দিতে চাইলেন, পঞ্চমীর রাতে শহরজুড়ে সেটাই চর্চিত বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।
রাজনৈতিক মহলের মতে, বুদ্ধিমতী মহুয়া মৈত্র এক ঢিলে দুই পাখি মারলেন। অসিত সাহার মতো অভিজ্ঞ নেতাকে তৃণমূলে ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রক্রিয়া শুরু করলেন। একইসঙ্গে অসীম সাহাকে চাপে রাখলেন। এ নিয়ে মহুয়া মৈত্রর কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তাঁর ফোনে যোগাযোগ করা হলে, তিনি ফোন ধরেননি। এ প্রসঙ্গে বিজেপি নেতা অসিত সাহা বলেন, ‘আমি ওই ক্লাবের সভাপতি। তবে এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। এটা ক্লাবের ব্যাপার। আমন্ত্রণ করা হয়েছিল, ওনারা এসেছিলেন।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.