Advertisement
Advertisement

‘ফ্রড টেরিজা’! তর্কে মেতে কী লাভ হল বাঙালির?

এ সেই বাঙালি শ্রেণি, যাঁরা ‘পথের পাঁচালী’কেও দারিদ্র্য তুলে ধরে বিদেশে কলকে পাওয়ার বদনাম দিয়েছিল৷

Controversy breaks in Internet over Sainthood of teresa
Published by: Sangbad Pratidin Digital
  • Posted:September 4, 2016 5:55 pm
  • Updated:September 4, 2016 5:55 pm  

সরোজ দরবার: শেষ কবে আন্তর্জাতিক আসরে ঘটা করে শোনা গিয়েছে পশ্চিমবঙ্গের নাম? শেষ কোন ঘটনায় সারা বিশ্বজুড়ে সংবাদমাধ্যমে উঠে এসেছে রাজ্য? বাঙালি অন্তত সাম্প্রতিককালে এরকম কোনও ঘটনার কথা মনে করতে পারছে না৷ মনে আসার কথাও নয়৷ কিন্তু কথা হল মাদার টেরিজাকে ‘ফ্রড’ বলে প্রমাণ করতে বাঙালির চেষ্টার কসুর নেই৷ হ্যাঁ, সারা দুনিয়া যখন মাদারের সেন্টহুড সেলিব্রেশন করছে, খোদ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যখন এই উপলক্ষ্যেই ভ্যাটিকানে, তখন দেশবাসীর একাংশের সঙ্গে গলা মিলিয়ে বাঙালিরও মাদার-বিরুদ্ধ কথার যেন শেষ নেই৷

বাংলার পরিধি ছাড়িয়ে যাঁরা ভিনরাজ্যের জমিতে সামান্য হলেও ঘুরে এসেছেন, তাঁরা বলে থাকেন, নাক উুঁচুতে বাঙালির জুড়ি মেলা ভার৷ শিল্প-সাহিত্য-সংস্কৃতি নিয়ে অতিরিক্ত ভাববিলাস যেন তার মজ্জাগত৷ শৌখিনভাবে তা অহঙ্কার বলে সাব্যস্ত হলেও, পাঁচ রাজ্যে জল খেয়ে আসা মানুষ তাকে কুয়ো ও ব্যাঙের বাইরে অন্য কোনও উপমায় এঁটে উঠতে পারেন না৷ আসলে যুক্তিও তেমন পান না৷ এহেন বাঙালি হঠাৎ প্রবল যুক্তিবাদী হয়ে মাদারের সন্তায়ন নিয়ে নানা প্রশ্ন তুলছেন৷ যে অলৌকিক নিয়ে মাদার আজ সন্তরূপেণ, তা স্রেফ ‘বুজরুকি’ ছাড়া আর কোনওভাবে প্রতিভাত হচ্ছে না imagesবহু বাঙালির কাছে৷ যুক্তিবাদীরা এর আগে বহুবার সে কথা বলেওছেন৷ কিন্তু এই প্রসঙ্গে নেটদুনিয়া রীতিমতো দ্বিধাভক্ত৷ একদল যখন যুক্তির ধুয়ো তুলে ধরে মাদারের সন্তায়নের ভিতর ‘বিশুদ্ধ ধাপ্পাবাজি’র প্রশ্ন তুলছেন, অন্যদল তখন সেই প্রশ্ন তোলাতেই পাল্টা প্রশ্ন তুলছেন৷ মানুষের অবতার হয়ে ওঠায় একদিকে বিস্ময়ের শেষ নেই৷ কেউ কেউ আবার বলছেন, এ দেশে তো সন্তের অভাব নেই৷ তাহলে মাদারকে নিয়ে হইচই করারই বা কি আছে! অর্থাৎ আদতে তো তিনি বিদেশি, ভারতীয়ই নন৷ তাহলে দেশে সন্ত থাকতে তাঁকে নিয়ে এত কথার যৌক্তিকতা খুঁজে পাওয়া মুশকিল! অর্থাৎ যে যুক্তিতে সোনিয়া গান্ধী কিছুতেই ভারতীয় হতে পারেন না এবং বিজয় মালিয়া ভারতীয়ই থাকেন, সেই যুক্তিতে মাদারের সন্তায়ন নিয়েও নিশ্চুপ থাকাই বাঞ্ছনীয়! প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়ে কেউ বলছেন, কই মাদার যদি এতই মানবধর্ম ভালবাসেন তাহলে হিন্দু বা মুসলিম ধর্মের কোনও আচার তাঁকে পালন করতে দেখা যায়নি কেন? তিনি যে নেহাতই এক ধর্মপ্রচারক, সেবার ছুতোয় খ্রিষ্টান ধর্মকে ছড়ানোই ছিল তাঁর আজীবনের লক্ষ্য তাই জোরালভাবে লক্ষ্যিত এ কথায়৷ বরং একটু নরম সুরে কেউ বলছেন, আসলে ধর্মপ্রচারক তবে অনেকটাই মানবিক৷

Advertisement

প্রশ্ন হল, এই সব প্রশ্ন তোলার মতো যোগ্যতা বাঙালির কতখানি আছে? যদি ধরে নেওয়া যায় মাদার কিছু করেননি, পাল্টা প্রশ্ন ওঠে ক’জন বাঙালি কটা মিশনারিজ অফ চ্যারিটি গড়ে তুলেছেন? মাদারের আশ্রয় পেয়ে যে ছেলেটি আজ পাইলট হতে পেরেছেন, তাঁর জীবনকাহিনীর মতো কটা রূপকথা লিখতে পেরেছে ক’জন বাঙালি, এমনকী দেশবাসীও! মাদার যে ধর্মপ্রচারক এ নিয়ে বরবারই সরব আরএসএস! এক শ্রেণির শিক্ষিত সম্প্রদায়ের কথা আরএসএসের কট্টর ভাবাদর্শের থেকে আজ অন্তত আলাদা কিছু শোনাচ্ছে না বলেই মনে করছেন কয়েকজন৷8495900201472016453 তাঁদের পাল্টা প্রশ্ন, মাদারের অলৌকিক কাহিনি না হয় হল বুজরুকি, কিন্তু এতদিন ধরে বাংলার কোণে কোণে জলপড়া-তেলপড়ার রাজত্ব চলছে, ওঝা-গুনিনের দাদাগিরি চলছে, কই তা কমাতে যুক্তিবাদী বাঙালি করেছেটা কী! তাঁদের আরও দাবি, মাদার যদি এতই ধর্মপ্রচারক হবেন তাহলে মাদার হাউসের সংলগ্ন এলাকা তো কবেই খ্রিস্টান পল্লি হয়ে যেত৷ তা হয়েছে কোথায়?

এক শ্রেণির মানুষ আবার বলছেন, থাক এত কূটতর্ক৷ মাদারের সৌজন্যে অন্তত বিশ্বের আসরে বাংলার নাম তো আরও একবার উঠে এল৷ এই বা কম গৌরবের কীসে? অবশ্য সেখানেও ছিদ্র দেখছেন কেউ কেউ৷ দেশের দারিদ্র্য তুলে ধরেই মাদার নাকি নাম কুড়িয়েছেন এমন মতও ঘুরছে হেথাহোথা৷ বলাবাহুল্য, এ সেই বাঙালি শ্রেণি, যাঁরা ‘পথের পাঁচালী’কেও দারিদ্র্য তুলে ধরে বিদেশে কলকে পাওয়ার বদনাম দিয়েছিল৷

সব মিলিয়ে নেটদুনিয়ায় এখন বেজায় ঘ্যানঘ্যান৷ দেশের অন্যান্য প্রদেশের বেশ কিছু মানুষের সঙ্গে গলা মিলিয়েছে বাঙালিও৷ যাঁকে অপদস্থ করার জন্য এত যুক্তির ঘটা, তাঁর কর্মকাণ্ডের সবথেকে বেশি সুফল পেয়েছে এ বাংলাই৷ বঙ্কিমবাবুর কমলাকান্তকে ভ্রমর বলেছিল, ‘তোমরা না জান শুধু মধু সংগ্রহ করিতে না জান হুল ফোটাইতে-কেবল ঘ্যানঘ্যান পার৷ একটা কাজের খোঁজ নাই-কেবল কাঁদুনে মেয়ের মতো দিবারাত্র ঘ্যানঘ্যান৷ একটু বকাবকি লেখালেখি কম করিয়া কিছু কাজে মন দাও-তোমাদের শ্রীবৃদ্ধি হইবে৷ মধু করিতে শেখ-হুল ফুটাইতে শেখ৷’ আজ অন্তত নেট দুনিয়ার এই ঘ্যানঘ্যান দেখে অনেকেরই মনে হচ্ছে ভ্রমরের পরামর্শ অপাত্রেই বর্ষিত হয়েছিল৷ শ্রীবৃদ্ধি তো দূর, মধু সংগ্রহের সামান্যতম স্পৃহাটুকুও সম্ভবত হারিয়েছে বাঙালি৷

 

Sangbad Pratidin News App

খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ

Advertisement