নন্দন দত্ত, সিউড়ি: চারিদিকে কুসংকার বা ঝাড়ফুঁকের বিরুদ্ধে সচেতনা তৈরির চেষ্টা করছে প্রশাসন। বিভিন্ন জায়গায় সেমিনার থেকে পথনাটিকা করে সাধারণ মানুষকে আধুনিক চিকিৎসামুখী করার চেষ্টা করছে। ঠিক সেই সময়ে মানসিক ভারসাম্যহীন এক নাবালিকাকে অপচিকিৎসক বা গুনিনের কাছে রেফার করলেন সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক। আউটডোরের সরকারি প্রেসক্রিপশনের ওপর বাংলায় ‘রেফার টু অপচিকিৎসা’ লেখাও রয়েছে। অভূতপূর্ব এই ঘটনাটি ঘটেছে বীরভূম জেলার সিউড়ি সদর হাসপাতালে। রোগীর বাবা ওই চিকিৎসক জিষ্ণু ভট্টাচার্যের বিরুদ্ধে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ির কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। তারপরই একটি কমিটি তৈরি করে তদন্ত শুরু করেছেন তিনি। যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ওই চিকিৎসক জিষ্ণুবাবু।
এপ্রসঙ্গে তিনি জানান, ওই লেখা তাঁর নয়। তবে তাঁর কাছে চিকিৎসাধীন ওই কিশোরী সরকারি চিকিৎসা করানোর পাশাপাশি ঝাড়ফুঁক করছিল। সেই নিয়ে কিছু কথা হয়েছিল। জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক হিমাদ্রি আড়ি জানান, সরকারি প্রেসক্রিপশনের উপরে এমন কথা যিনিই লিখে থাকুন তিনি চরম অন্যায় করেছেন। বিষয়টি শোনার পর সিউড়ি হাসপাতালের সুপারকে জানিয়ে তিনি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। কমিটি তদন্ত করে রিপোর্ট দিলে পদক্ষেপ নেবেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সিউড়ি এক নম্বর ব্লকের কুখুটিয়া গ্রামের এক দম্পতি মানসিক ভারসাম্যহীন বছর সতেরোর মেয়েকে সুস্থ করার চেষ্টা করছিলেন। তাই সিউড়ি হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর পাশাপাশি স্থানীয় এক গুনিনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে রাখছিলেন। গত বুধবার মেয়েকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন তার মা। কিন্তু, সেখানে থাকা চিকিৎসকের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হওয়ার জেরে তার কাছে আর মেয়েকে দেখাতে রাজি নন তিনি।
এপ্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমি সরকারি চিকিৎসকের পাশাপাশি ওই ওঝার উপরও ভরসা রেখেছিলাম। সেকথা ওই চিকিৎসককে বলতেই তিনি চটে ওঠেন। সরকারি প্রেসক্রিপশনে ওষুধ লিখেও কেটে দেন। তারপর সেই প্রেসক্রিপশনের ওপর আমার বয়ান অনুযায়ী লেখেন, রোগীর বাড়ির লোক অপচিকিৎসা করিয়েছেন। চারশো টাকা দিয়ে। বাড়ির লোকের মত অনুযায়ী, সেই চিকিৎসার পর রোগী ভাল হয়েছে। ওষুধের কোনও দরকার ছিল না। তারপরই তিনি পাশে লিখে দেন রেফার টু অপচিকিৎসা।’
ওই প্রেসক্রিপশনের কথা জানাজানি হতেই সিউড়ি হাসপাতালে হইচই শুরু হয়ে যায়। ওই নাবালিকার বাবা বলেন, ‘শুক্রবার মেয়েকে দেখানোর দিন থাকলেও স্ত্রী বা মেয়ে কেউ হাসপাতালে আসতে চাইছে না। আমি তো সরকারি চিকিৎসায় ভরসা রেখেছি। মা কী বলেছে জানি না। তবে ওই চিকিৎসক বাংলায় লিখে ওই কথাগুলি লিখে উপস্থিত রোগীদের সামনে সেটি পরে শুনিয়েছেন। আমার স্ত্রী ও মেয়েকে অপমান করেছেন। এভাবে চিকিৎসা না করে প্রেসক্রিপশনে ওই কথা লেখা হলে আমরা কী ভাবব। আমরা লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিককে।’
যদিও সরকারি চিকিৎসক জিষ্ণু ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমি এই ধরনের অপচিকিৎসার ঘোর বিরোধী। নিজের বাড়িতে বাবা-মায়ের বিরুদ্ধে এনিয়ে সরব হই। তাছাড়া প্রতিটি রোগীকেই যত্ন নিয়ে দেখি। ওই লেখা আমার নয়। আর কাউকে অপমান করতেও চাইনি। কেউ যদি অসম্মানিত মনে করেন তবে আমি ক্ষমা চাইতে রাজি।’
খবরের টাটকা আপডেট পেতে ডাউনলোড করুন সংবাদ প্রতিদিন অ্যাপ
Copyright © 2024 Pratidin Prakashani Pvt. Ltd. All rights reserved.